বর্ষশেষের দিন বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন চমক প্রকাশ্যে এল। রবিবাসরীয় সকালে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ছেয়ে গেল 'বাংলায় বিকল্প রাজনীতি' পোস্টার। লোকসভা নির্বাচনের আগে এই পোস্টারকে ঘিরে বছর শেষে সরগরম হয়ে রইল রাজ্য রাজনীতি। পোস্টার প্রকাশ্যে আসার কিছু সময় পরই এই নিয়ে জল্পনা বাড়িয়ে দিলেন কংগ্রেসে 'কোণঠাসা' আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী। ফেসবুক পোস্টে লিখছেন, 'বাংলার ভবিতব্য, বিকল্প রাজনীতি'। কৌস্তভের এই ফেসবুক পোস্ট এবং পোস্টার ঘিরে নতুন আলোচনা শুরু হল রাজনীতির অলিন্দে। বস্তুত, অতীতে এই 'বিকল্প রাজনীতি'র কথা শোনা গিয়েছিল কৌস্তভ-কণ্ঠে। বছর শেষের দিন সেই পোস্টার এবং কৌস্তভের ফেসবুক পোস্ট নয়া মাত্রা যোগ করল। এই চর্চার মধ্যেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যও জল্পনা বাড়িয়েছে।
রবিবার এক সংবাদমাধ্যমে এই পোস্টার প্রসঙ্গে কৌস্তভ বলেছেন, 'গত কয়েক মাস ধরেই এই কথা বলছি। আমি মনে করি, বাংলায় বিরোধী রাজনীতির পরিসরে শূন্যতা রয়েছে। কোনও বিরোধী দল সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। তাই বিকল্প রাজনীতিই ভবিতব্য।' একই সঙ্গে কংগ্রেসের আইনজীবী নেতার বক্তব্য, 'বারংবার বিকল্প রাজনীতির কথা বলেছি। এই কথা যদি কোনও সমষ্টিকে উদ্বুদ্ধ করে থাকে, তা হলে ভাগ্যবান বলে মনে করছি।'
গত মার্চ মাসে হুমকি এবং অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে কৌস্তভকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ।যা ঘিরে সরগরম হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। সেই ঘটনার পর যত দিন গড়িয়েছে, ততই কৌস্তুভকে ঘিরে আলোচনা বেড়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে। এমনকী, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে মিটিং-মিছিলে হাঁটতেও দেখা গিয়েছে কৌস্তভকে। শুভেন্দু যে তাঁর কাছে 'অচ্ছুত' নন, সে কথাও মুখ ফুটে বলেছেন কৌস্তভ। অতীতে বলেছিলেন, 'বিরোধী দলনেতা হিসাবে শুভেন্দু অধিকারীর ভূমিকা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। বিজেপি থেকে শুভেন্দু সবটা করতে পারছেন না। এজন্য একটি বিকল্প রাজনীতি প্রয়োজন।' সেই 'বিকল্প রাজনীতি'র পোস্টার ঘিরেই বছর শেষের দিনে নয়া জল্পনা ছড়াল।
এই প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বলেছেন, 'বাংলায় বিকল্প হচ্ছে বিজেপি। কংগ্রেস, সিপিএমকে মানুষ খারিজ করেছে। তৃণমূলও বাতিলের পথে। ডবল ইঞ্জিন সরকার ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ বাঁচবে না।' এর পরই কৌস্তভ প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেছেন, 'কৌস্তভ কংগ্রেসে থেকে কংগ্রেসকে লাইনে আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু পারবেন না। কারণ কংগ্রেসের মাথারা চোর মমতা, চোর ভাইপোর সঙ্গে রয়েছে। তাই পারবেন না। ভাই কৌস্তভকে বলব, লোকসভা ভোট পর্যন্ত দেখতে থাকুন। অগলি বার মোদীজি আবার। মোদীজি ৪০০ সিট নিয়ে আসবেন। তখন ডবল ইঞ্জিন সরকার করতে গেলে আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে।' গত কয়েক মাস ধরেই কৌস্তভের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চলছে। তাঁর বিজেপিতে যোগদান নিয়েও এক প্রকার জল্পনা রয়েছে। এর মধ্যেই 'বিকল্প রাজনীতি'র পোস্টার এবং শুভেন্দুর বক্তব্য আলাদা মাত্রা যোগ করল।
পোস্টার প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, 'আমাদের দলের মুখপাত্র এসব নিয়ে বলবেন।'
কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেছেন, 'মানুষ বিকল্প খোঁজে। কাউকে বিকল্প তৈরি করে দিতে হয় না। অন্ধকারের মধ্যে কেউ পোস্টার মেরে বিকল্প রাজনীতি খুঁজবেন, তা হলে সেটা তাঁদের ব্যাপার। কোনও হতাশা থেকে একটা বিকল্প রাজনীতির কথা বলা হচ্ছে। কোথাও যেন আত্মবিশ্বাসের অভাব।' তৃণমূলের সোশ্যাল মিডিয়ার ইন-চার্জ দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেছেন, 'কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ অংশ থেকে কেউ করতে পারেন, সেটাই প্রমাণিত হল। যাত্রাপালার মতো ফিনফিনে পোস্টার মেরে বিকল্প রাজনীতি হবে! পোস্টারে নীচের নাম উল্লেখ করেননি। কংগ্রেসের মতো বহু প্রাচীন দলকে কাজে লাগিয়ে পরে শুভেন্দুর সঙ্গে হাত মেলানো এটা বিকল্প রাজনীতি! পোস্টারের দাবিদার নয়, কাপুরুষরা বিকল্প রাজনীতি আমদানি করতে পারবেন না।' সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, 'ভূতুড়ে কাণ্ড হচ্ছে।'