নারদ মামলায় তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও মদন মিত্রর সঙ্গে সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। সিরোসিস অফ লিভারে আক্রান্ত শোভন চট্টোপাধ্যায়। সন্দেহ করছেন চিকিৎসকরা। তাঁর হৃদযন্ত্রের সমস্যাও রয়েছে। গ্রেফতারির সময় থেকেই শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেই রয়েছেন তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের হয়ে আইনি লড়াইয়ের জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন আইনজীবীদের কাছে। শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য যোগাযোগ রাখছেন চিকিৎসকদের সঙ্গেও। এত ব্যস্ততার মধ্যেও শোভন চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও নারদা মামলা নিয়ে আজতক বাংলাকে সাক্ষাৎকার দিলেন বৈশাখীদেবী।
শোভন চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের এমনিতেই সুগার আছে। সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতারির আগে থেকেই তিনি কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। মানসিকভাবেও খুব একটা ভালো ছিলেন না। এই গ্রেফতারির পর তিনি আরও ভেঙে পড়েছেন। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের হৃদযন্ত্রের সমস্যাও রয়েছে। মানসিকভাবে চাপে রয়েছেন। চিকিৎসকরা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। এখন আমার লক্ষ্য যত সম্ভব তাঁকে দ্রুত বাড়িতে ফিরিয়ে আনা। তিনি যাতে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে পারেন, সেই চেষ্টা আমি আগেও করেছি। এখনও করছি। ভবিষ্যতেও করব।
সিবিআই-এর গ্রেফতারি ও চার্জশিট
শোভন চট্টোপাধ্যায়কে সিবিআই-এর গ্রেফতারি নিয়ে বৈশাখীদেবী জানান, সেদিন আচমকা বাড়িতে সিবিআই হানা দেয়। কোনও কিছু না জানিয়েই গ্রেফতার করা হয়। এটা চূড়ান্ত অমানবিক। সিবিআই-এর তরফে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে কোর্টে। সেই চার্জশিট পড়ে দেখেছেন শোভনবাবু। তা দেখে তিনি ভীষণ হতাশ। একটা মিথ্যে চার্জশিট সাজানো হয়েছে। আমরা আশাবাদী, কোর্টে তা প্রমাণিত হয়ে যাবে।
বিজেপির প্রতিহিংসা
বৈশাখীদেবী বলেন, 'আমি ও শোভনবাবু দুজনেই সিদ্ধান্ত নিয়েই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু, পরে আমাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। শোভনবাবুর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হয়নি। এতে আমরা হতাশ হই। বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করি। শোভনবাবু যখন তৃণমূলে ছিলেন, তখনও তিনি কোনওদিন অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করেননি। বিজেপি-তেও করতে পারেননি। সবার আগে সম্মান। সেটা পাইনি বলেই দল ছেড়েছি। তারপর বিজেপি রাজ্যে ভালো ফল করেনি। আর খারাপ ফল হওয়ার পরই তারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে। তার প্রমাণ এই গ্রেফতারি।
রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ
বৈশাখীদেবী জানান, ভোটের পর থেকে আমাদের দুজনের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে তেমন কথাবার্তা হয়নি। তিনি বলেন, 'শোভনবাবুর মতো মানুষের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা আজও আছে। তিনি দীর্ঘদিন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী ছিলেন। তবে আমরা দুজনেই বিজেপি ছাড়ার পর রাজনীতি নিয়ে বিশেষ আলোচনা করিনি। প্রয়োজনও মনে হয়নি। তার মধ্যেই এই গ্রেফতারি। আমরা এখনই রাজনীতি নিয়ে ভাবছি না। দেখা যাক কী হয়।'
তৃণমূলে ফেরার জল্পনা
একুশের নির্বাচনের ফলাফল সামনে আসার পর বিজেপি-তে যাওয়া তৃণমূলের অনেকেরই শাসকদলে ফেরার জল্পনা শুরু হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন বার্তা পাঠান বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এরপরই দুই বন্ধুর তৃণমূলে ফেরা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়। সেই প্রসঙ্গে বৈশাখীদেবী বলেন, 'কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। তৃণমূলের অনেক নেতাই আমাকে ফেসবুকে রিকোয়েস্ট করেছেন, আমি যেন শোভনবাবুকে তৃণমূলে ফেরার আবেদন করি। আমি শোভনবাবুকে নিশ্চয় সেসব জানাব। তবে তৃণমূলের কোনও শীর্ষ নেতা বা মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে আমার এনিয়ে কোনও কথা হয়নি। সেদিন নিজাম প্যালেসে তৃণমূলের বাকি নেতাদের সঙ্গেও শোভনবাবুর কথা হয়েছে। রাজনৈতিক কোনও আলোচনা হয়নি।'
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ
সিবিআই-এর হাতে শোভন চট্টোপাধ্যায় ও তৃণমূলের ৩ নেতার গ্রেফতারির পর নিজাম প্যালেসে ধর্নায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা নিয়ে তাঁকে ধন্যবাদ জানান বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, 'শোভনবাবু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয় পাত্র ছিলেন একসময়। ভালোবেসে কানন বলে ডাকতেন। সেদিন নিজাম প্যালেসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছিলেন। তিনি তো শুধু তৃণমূলের ৩ নেতার জন্য এসেছিলেন, শোভনবাবুর জন্য আসেননি এটা আমি বিশ্বাস করি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন বড় নেত্রী। তিনি সবার নেত্রী। মুখ্যমন্ত্রী। তিনি নিজাম প্যালেসে আসায় আমরা দুজনেই কৃতজ্ঞ।'