'বিধায়ক পদ ছেড়ে দিতে চাই। কিন্তু পেনশনটা এখনও চালু হচ্ছে না। দু'বছর ধরে বিকাশ ভবন যাচ্ছি। কিন্তু হচ্ছে না। তাই পদ ছাড়তে পারছি না। পদ ছাড়লে খাব কী।' রবিবার বিকেলে 'আজতক বাংলা'কে বললেন বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারি। জানালেন, তিনি শুধু তৃণমূল বিধায়ক নন, একজন সাহিত্যিকও। তাঁর অভিযোগ, তিনি বাবু নন, প্রান্তিক সমাজ থেকে উঠে এসেছেন, তাই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
সম্প্রতি, প্রার্থী তালিকা নিয়ে বলাগড়ে ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর একটি মত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। বলাগড়ের ব্লক সভাপতি অরিন্দম গুঁইনের বিরুদ্ধে তাঁর একাধিক অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, তিনি যে চাকরি করতেন তার পেনশন ও গ্রাচুইটি কিছুই পাননি। পেনশন শুরু হলে বিধায়ক পদ থেকেও ইস্তফা দেবেন বলে জানিয়েছেন মনোরঞ্জন। বলেন, '২২৪টি মোট আসন গ্রাম পঞ্চায়েতে। আমাকে দলের তরফে ১০৯টি টিকিট দেওয়া হয়েছিল। সেই মতো কারা পাবেন তাঁদের একটি তালিকাও তৈরি করি। মনোনয়নও জমা দেন তাঁরা। এইসবের পরও ব্লক সভাপতি অতিরিক্ত টিকিট কোথা থেকে পেল যে গোঁজ প্রার্থী ঢুকিয়ে দিল।'
তিনি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত পৌঁছতে পারছেন না বলেও জানালেন। তাঁর কথায়, দিদি বা অভিষেক পর্যন্ত পৌঁছতে পারছিনা। যেকারণে একটা চিঠি দিয়েছি। আমার সমস্যার কথা দিদি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার লোক নেই। আমি এলিট বাবু সম্প্রদায়ের লোক নেই। আমি রিক্সাওয়ালা। আমি ভোটে দাঁড়ানোর সময় থেকেই ওরা আমায় অপমান করেছে। মানুষ আমায় আপন ভেবেছে। যেকারণে হারা আসন জিতিয়েছে মানুষ। এখানকার তৃণমূল বিজেপির কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল।'
সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। সেই আবহেই সুর বদল মনোরঞ্জনের। তাঁর কথায় উঠে আসছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা। বললেন, 'বিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরনোর সুযোগ পাইনি কোনও দিন। কিন্তু দেশের হেন নামী বিশ্ববিদ্যালয় নেই, যেখানে বক্তব্য রাখিনি। পেয়েছি বহু সাহিত্য সম্মান। আমি লেখক মানুষ, লেখা ছাড়া কিছু বুঝিনা। আমার একটা বই আছে, অভিশপ্ত অতীত, অজানা ভবিষ্যত। বইটার সঙ্গে আমার এখনকার অবস্থা মিলে যাচ্ছে। এই দলে আমার কোনও সম্মান নেই। আমার ২৭টা বই আছে। বহু দেশে সম্মান পেয়েছি। বহু ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। কিন্তু দলীয় স্তরে আমায় অসম্মান করা হয়। তাই ঠিক করেছি এবার শুধুই লেখালিখি নিয়েই থাকব।'
'তৃণমূলে একটাই পোস্ট, বাকি সব ল্যাম্পপোষ্ট।' কয়েকদিন আগেই এই বিস্ফোরক কথা বলেছিলেন মনোরঞ্জন। বিষয়টিতে তাঁর দাবি, এই সমস্যা একমাত্র মেটাতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই তিনি ওই কথা বলেছেন।
মনোরঞ্জন মুটে-মজুরি করেছেন, ছাগল চরিয়েছেন, দীর্ঘ সময় যাদবপুর অঞ্চলে রিক্সা চালিয়েছেন, চায়ের দোকানে টেবিল বয়ের কাজ করেছেন, মেথরের কাজ করেছেন, ছত্তিসগঢ়ের জঙ্গলে দিনের পর দিন কাঠ কেটে সাইকেলে চাপিয়ে গ্রামে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেছেন, চাকরি করেছেন নাইট গার্ডের। পরে, প্রায় বুড়ো বয়সে দু’বেলা দেড়শো-দেড়শো তিনশো জনের রান্না করতেন। তাঁর একটি বিখ্যাত বই, 'ইতিবৃত্তে চণ্ডাল জীবন'। যে বইটি বহু ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। তিনি পুরোদমে লেখালিখির জগতেই থাকতে চান। জানালেন, সেই সরকারি চাকরি দলনেত্রীর এক কথায় ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেই পেনশনই এখনও পাচ্ছেন না।