গঙ্গাসাগর মেলার কাজ দেখতে সোমবার সাগরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই রাত্রিবাস করেন তিনি। মঙ্গলবার জয়নগরে সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন জয়নগরে সরকারি অনুষ্ঠানের আগে হেলিপ্যাড থেকে হেঁটে বহরু হাই স্কুলের মাঠে উপস্থিত হন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বলা যায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জনপদ থেকেই কার্যত লোকসভার প্রচার শুরু করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
তাঁকে দেখতে রাস্তার ধারে উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজনৈতিক মহলের দাবি, এবারও জনসংযোগকেই প্রচারের হতিয়ার করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পথ চলতে চলতেই কথা বললেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। দেড় কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে বহুড়া হাই স্কুলের মাঠে প্রশাসনিক সভাস্থলে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেও খোশ মেজাজে দেখা যায় তাঁকে। আদিবাসী ছন্দে পা-ও মেলান তিনি। এর পর উঠে যান মঞ্চে। এদিন জয়নগর থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার উন্নয়নে একাধিক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে বেশ কিছু প্রকল্পের শিল্যানাসও করেন। লোকসভা ভোটের আগে দ্রুত এর কাজ শুরু করতে চায় রাজ্য সরকার।
এদিন মঞ্চ থেকে বিজেপি ও বামেদের আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, মানুষ আমার নেতা, আমি কর্মী, আমি মানুষের পাহারাদার। কেউ কেউ বলছে আমি গুণ্ডাদের নেতা। সারা জীবন করে এলাম মানুষের কাজ। আমি নেতা নই। কর্মী। মানুষের পাহারাদার। কোনও মানুষ বিপদে পড়লে আমরা ছুটে যাই। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ধর্ষকদের প্রশয় দেয় না, বিলকিসের জন্য লড়েছে মহুয়া। আমি কোনওদিন ভাগাভাগি করতে দেব না। পাশাপাশি বামেদের ৩৪ বছরের অপশাসনের কথাও উঠে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। ৪ বছরে সিপিএম মানুষের মুণ্ডু নিয়ে খেলেছে। ওদের সঙ্গে আপোশ করব না।
প্রসঙ্গত, জয়নগরের মোয়া GI পণ্যের শিরোপা পেয়েছে, তাই কারিগরদের এদিন অভিনন্দনও জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "জয়নগরের মোয়া GI পণ্য হয়েছে। বিশ্ববিখ্যাত হয়েছে জয়নগরের মোয়া। তাই মোয়া তৈরির কারিগর, যাঁরা মোয়া বিক্রি করেন, তাঁদের বলি জয় হোক, জয় হোক, জয় হোক। জয় হে, জয় হে, জয়হে। জয়নগরে একটা মোয়ার হাব তৈরি করছি ২.৫ কোটি টাকা। এর ফলে যত মোয়া, সব এক জায়গা থেকে পেয়ে যাবেন আপনারা।" পাশাপাশি সুন্দরবনের মধুও জিআই ট্যাগ প্রসঙ্গও তোলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখানকার প্রোডাক্টের নাম দিয়েছিলাম সুন্দরিনী। জেলার মুকুটে দুটি স্বর্ণ পালক পেল। এই জেলাকে ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প দিয়ে যাচ্ছি।
তবে এদিনের সভা থেকে কেন্দ্রকে আক্রমণ করতে ভোলেননি মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা কেন্দ্রের কাছে ২৯ হাজার কোটি টাকা পাই। ভোটের সময় ভেদাভেদ করতে আসে। তাই বাড়ি তৈরি যাদের বাকি আছে তাদেরও বাড়ি দেব টাকা পেলে। আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলছেন মন্ত্রকের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে মেটাবে। ওরা টাকা দেয় না তাও লজ্জা নেই। বলে সব গেরুয়া করতে হবে। আমি কোনও দলীয় লোগো লাগাতে বাধ্য নই। গর্ভমেন্ট অব ইন্ডিয়ার লোগো লাগাতে বাধ্য। এ বছরে কেন্দ্র থেকে ৭৬ টি টিম এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বলেন, ওরা টাকা না দিলেও কাজ হবে। ৮.৫ লাখ লোক কাজ পাবেন এই আগামী দিনের পথশ্রী প্রকল্পে। আমরা একা ৪০ শতাংশ ১০০ দিনের কাজ দিয়েছি।