দীর্ঘদিন অন্তরালে থাকার পর সম্প্রতি দেখা পাওয়া গিয়েছে বিমল গুরুং-এর। পদ্ম শিবির নয়, এবার দল বদলে যে তিনি তৃণমূলের দিকেই ঝুঁকেছেন সেই কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন গুরুং। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল নেত্রীকেই তিনি সমর্থন করতে চান সেই ইজ্ঞিতও দিয়েছেন। গুরুং-কে নিয়ে যখন সরগরম রাজ্য রাজনীতি ঠিক সেই সময়ই এক মাসের জন্য পাহাড়ে আগমন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের। শনিবার সন্ধ্যায় সস্ত্রীক শিলিগুড়ি পৌঁছেছেন গুরুং। আর উত্তরবঙ্গে পৌঁছেই রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের সক্রিয়তা শুরু হয়ে গিয়েছে। শিলিগুড়িতে পা দিয়েই এরাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ফের একবার সরব হয়েছেন রাজ্যপাল। আর এই আবহেই মোর্চা প্রধান গুরুংকেও নাম না করেই বার্তা দিয়েছেন ধনখড়।
আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিমল গুরুং তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন করতে চান। এমন ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গেই মোর্চা প্রধানের নাম না নিয়েই ধনখড় মন্তব্য করেন ভুল দরজায় যাচ্ছেন গুরুং। রাজ্যপালের কথায়, "আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়, আয়কর হিসাবের জন্য আয়কর অফিসেই যেতে হয় এবং অভিযোগ জানানোর জন্য থানায়। ভুল দরজায় গেলে কাজ হবে না ।" এভাবেই গুরুং-এর সাম্প্রতিক পদক্ষেপ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন রাজ্যপাল। পাশাপাশি দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার ও জেলাশাসককে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির কর্মী হিসেবে কাজ না করার উপদেশও দিতে দেখা গেছে রাজ্যপালকে।
একমাসের দার্জিলিং সফরে শনিবার শিলিগুড়ি পৌঁছেই রাজ্যপাল মন্তব্য করেন ‘‘পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আমি চিন্তিত। সংবিধানের বাঁধন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে রাজ্য।’’ রবিবার তিনি শিলিগুড়ি থেকে পাহাড়ে রওনা দেন। জানা যাচ্ছে, দার্জিলিং-এর রাজভবনে তিনি পুরো নভেম্বর মাস কাটাবেন বলেই আপাতত ঠিক আছে। তবে দার্জিলিং-এর রাজভবনে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্য সরকারের আইন ব্যবস্থা নিয়ে সরব হন তিনি।
শিলিগুড়ি সার্কিট হাউসে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়েও সরব হতে দেখা যায় রাজ্যপালকে। ধনখড় বলেন, , ‘কোভিড প্রমাণ করেছে রাজ্যে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। কেন্দ্রের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের প্রকাশ্য বিরোধিতা করেছে রাজ্য। সঙ্কটের সময় আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত ছিল। রাজ্য সরাকরের দূরদর্শিতার অভাবে ভুগেছেন বাংলার মানুষ।’
পাহাড় সফরে আসার আগে গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দিল্লি গিয়ে সাক্ষাৎ করেছিলেন রাজ্যপাল। সেই বৈঠকের পরেও এরাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছিল খনখড়কে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছেও তিনি সেই বিষয়ই তুলে ধরেছেন তা নিয়েও রাখঢাক করেননি। এই আবহে রাজ্যপালের পাহাড় সফর তাই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। জানা যাচ্ছে আগামী এক মাস বিভিন্ন চা বাগান এবং বনবস্তি এলাকা পরিদর্শনে যাবেন রাজ্যপাল। কথা বলবেন বিভিন্ন আধ্যাত্মিক গুরু এবং বিদ্বজ্জনদের সঙ্গেও। পাহাড়ে রওনা দেওয়ার আগেই ট্যুইটে রাজ্যপাল দাবি করেন, উত্তরবঙ্গ নিয়ে অনেক পড়াশুনা করেই ট্রেনে উঠেছেন তিনি। উত্তরবঙ্গবাসীর সমস্যা নিয়ে তিনি যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। এই সফর চলাকালীন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গেও মেলামেশা করবেন বলে জানিয়ে গিয়েছেন রাজ্যপাল। এমনকি নিজের সাংবিধানিক পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেই উত্তরবঙ্গের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করবেন বলেও আশ্বাস দেন ধনখড়।