১০০ দিনের কাজের পরও টাকা পাচ্ছেন না শ্রমিকরা, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ করেছে রাজ্য। যা নিয়ে সরগরম রাজনীতির ময়দান। যাঁরা প্রাপ্য টাকা পাননি বলে দাবি করেছেন, তাঁদের জব কার্ড আদৌ বৈধ কি না, তা নিশ্চিত করতে কমিটি গঠন করল কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার ওই কমিটি গঠন করে এ ব্যাপারে সরেজমিনে তদন্ত করতে নির্দেশ দিল প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের বেঞ্চ।
১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে হাই কোর্টে দু'টি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তার মধ্যে একটি মামলা দায়ের করেছিল শ্রমিকদের একটি সংগঠন। অপর মামলাটি করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শ্রমিকদের সংগঠনের বক্তব্য ছিল, রাজ্য এবং কেন্দ্রের টানাপড়েনের কারণে ১০০ দিনের কাজ করার পরও টাকা মেলেনি। শুভেন্দু বলেছিলেন যে, ১০০ দিনের কাজের নামে রাজ্যে দুর্নীতি হয়েছে। এদিন ওই ২টি মামলার শুনানিতে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ৪ সদস্যের একটি কমিটি গড়েছে।
এই কমিটিতে থাকছেন রাজ্য, কেন্দ্র, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (ক্যাগ), অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের ১ জন করে সদস্য। জব কার্য যাচাই করতে কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আগামী বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
গত মাসে রাজ্যের বকেয়ার দাবি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যাপাধ্যায়। বকেয়া ইস্যুতে কেন্দ্র এবং রাজ্যের আধিকারিকরা মিলে যৌথ বৈঠক করবেন। নয়াদিল্লিতে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে এ কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। মোদীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেছিলেন, '৯ জন সাংসদকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। রাজ্যের বকেয়া মেটানোর আর্জি জানিয়েছি প্রধানমন্ত্রীকে। প্রধানমমন্ত্রী বলেছেন, কেন্দ্র এবং রাজ্যের আধিকারিকরা যৌথ বৈঠক করবেন।'বৈঠক শেষে মমতা আরও বলেছিলেন, 'আমাদের ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই টাকা দেওয়া উচিত। দ্রুত এই টাকা দেওয়া হোক। আবাস যোজনায় টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মিশনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদি কিছু ভুল হয় যে টাকা বন্ধ করে দেবে, কিন্তু ১৫৫ দল ইতিমধ্যেই বাংলায় গিয়েছেন। যা যা ব্যাখ্যা চেয়েছেন আমাদের অফিসারেরা সব দিয়েছেন। তবুও এখনও কিছু পেলাম না।'
১০০ দিনের কাজ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্যের বকেয়ার দাবিতে সরব তৃণমূল। গত অক্টোবরের শুরুতে বকেয়ার দাবিতে দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে অভিষেক-সহ তৃণমূলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন। কিন্তু কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সাক্ষাৎ না করেই বাড়ি চলে যান বলে অভিযোগ করেছিল তৃণমূল। যা ঘিরে দিল্লিতে কৃষি ভবনে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে। অবস্থানে বসে পড়েছিলেন অভিষেক-সহ তৃণমূলের সাংসদ, মন্ত্রীরা। শেষে তাঁদের টেনেহিঁচড়ে বার করে দিল্লি পুলিশ। আটকও করা হয় অভিষেকদের। যা ঘিরে সরগরম হয় রাজনীতির ময়দান। সম্প্রতি লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনেও বকেয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর পরামর্শ ছিল, বকেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করুন মুখ্যমন্ত্রী।