প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর কলকাতা হাইকোর্টের আরও এক বিচারপতিকে নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধল। সোমবার অবসর নেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ। অবসর নেওয়ার সময় আরএসএস সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা প্রকাশ্যে আনলেন তিনি।
কলকাতা হাইকোর্টের সদ্য প্রাক্তন হওয়া বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ বলেন, একটা সময় তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সদস্য ছিলেন। বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ জানান, একেবারে ছোটবেলা থেকেই তিনি আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। সোমবার তিনি বলেন, “আজ, আমাকে অবশ্যই আমার সত্যিকারের রূপ প্রকাশ করতে হবে। একটি সংস্থার কাছে আমার অনেক ঋণ আছে। আমি আমার শৈশব থেকে যৌবন অর্জন পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম। এই সংস্থার কাছ থেকে আমি সাহসী, ন্যায়পরায়ণ হতে শিখেছি, সকলের প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে শিখেছি এবং সর্বোপরি, যেখানেই কাজ করি না কেন, দেশপ্রেমের অনুভূতি এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে শিখেছি। স্বীকার করতেই হবে, আমি আরএসএসের একজন সদস্য।”
তবে, বিচারপতির পদে বসার পর, আরএসএস থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন সদ্য প্রাক্তন হওয়া চিত্তরঞ্জন দাশ। তাঁর বক্তব্য, দলমত নির্বিশেষে তিনি সমস্ত মামলা এবং মামলাকারীদের নিরপেক্ষভাবে মোকাবিলা করেছেন। তিনি বলেন, “আমি আমার কাজের জন্য, প্রায় ৩৭ বছর ধরে নিজেকে আরএসএস-এর থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি। আমি আমার কর্মজীবনের কোনও অগ্রগতির জন্য আমার সংস্থার সদস্যপদ ব্যবহার করিনি। এটি আমাদের নীতি-বিরুদ্ধ। আমি সবার সঙ্গে সমান আচরণ করেছি। কমিউনিস্ট হোক, বিজেপি হোক বা তৃণমূলের লোক হোক, আমি কারও বিরুদ্ধে কোনও পক্ষপাতিত্ব করিনি। দুটি নীতির ভিত্তিতে আমি ন্যায়বিচার দেওয়ার চেষ্টা করেছি। একটি হল সহানুভূতি এবং দ্বিতীয়টি হল ন্যায়বিচারের জন্য আইনকে বাঁকানো যেতে পারে, আইনের সঙ্গে মানানসই করার জন্য ন্যায়বিচারকে বাঁকানো যায় না।”
সম্প্রতি হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিজেপি ঘনিষ্ঠতা প্রকাশ্যে আসে। বর্তমানে তিনি তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার দিন অভিজিৎ বলেছিলেন, বিচারপতির পদে থাকাকালীনই বিজেপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে, বিচারপতিদের রাজনৈতিক সংস্রব নিয়ে জোর চর্চা হয়েছে। বিচারপতিদের রাজনৈতিক যোগ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। এবার সেই বিতর্ককে আরও এক কদম এগিয়ে নিয়ে গেলেন কলকাতা হাইকোর্টেরই আরেক বিচারপতি, চিত্তরঞ্জন দাশ।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮৫ সালে কটকের মধুসূদন ল’ কলেজ থেকে আইন নিয়ে স্নাতক হয়েছিলেন বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ। পরে নন-কলেজিয়েট পড়ুয়া হিসেবে উৎকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম ডিগ্রি লাভ করেছিলেন। ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছিলেন। সেই থেকে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু। পরে ২০০৯ সালের অক্টোবর ওড়িশা হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে কাজে যোগ দেন। ২০২২ সালের জুন মাসে সেখান থেকে বদলি হয়ে কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। হাইকোর্টের বিচারপতি তাঁর কর্মজীবনের শেষ দিন ছিল সোমবার।