পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটে একাই লড়বে তৃণমূল কংগ্রেস। বুধবার এমনটাই জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। রাহুল গান্ধীর 'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' নিয়ে নাম না করে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মমতা। INDIA জোট ভেস্তে যাওয়া নিয়েও তুঙ্গে জল্পনা। মুখ্যমন্ত্রী এর আগে, সোমবার দাবি করেন, 'INDIA জোটের বৈঠকে তিনি সম্মান পান না। বিরোধী জোটকে নিয়ন্ত্রণ করে সিপিএম।'
এর প্রতিক্রিয়ায় বুধবার সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, 'অত তাড়া কীসের। নির্বাচনের এখনও অনেক দেরি। এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে সমস্ত রাজনৈতিক দল। আমরা প্রথম থেকেই বলেছিলাম, INDIA ব্লক আসন সমঝোতার জন্য় নয়। আর এখানে তফাৎ। উনি প্রথম থেকেই বলছিলেন আসন সমঝোতা কর।'
এরপর তিনি ফের কেন্দ্র-রাজ্য সমঝোতার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, 'এখন বোঝা যাচ্ছে, বোধ হয় কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে, যে ইডি-সিবিআইতে অভিষেককে ছাড়় দেওয়া হবে। সেই জন্য এখন ইডি-সিবিআই শাহজাহানের কাছে যাচ্ছে। অভিষেকের কাছে যাচ্ছে না। আর বিজেপি নেতাদেরও দেখবেন, মুখে কুলুপ এঁটেছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে যাঁরা বলছিলেন, তাঁরাও কেউ কোনও কথা বলছে না। ভোটের আগে কিছু টাকাও ছাড়বে, কারণ টাকা ছাড়া তৃণমূল চলে না। দিল্লি থেকে টাকা আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'RSS-এর নির্দেশে তিনি কংগ্রেস, সিপিএম-এর বিরুদ্ধে কথা বলছেন। RSS, BJP-র বিরুদ্ধে আর কথা বলছেন না।'
কিন্তু সিপিএম কি বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে থাকবে? এর উত্তরে সেলিম বলেন, 'কংগ্রেসকে ঠিক করতে হবে, বামকে যদি তারা সঙ্গে পেতে চায়, তাহলে বিজেপির সঙ্গে যেমন তারা যাবে না, তেমনই এ রাজ্যের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের সঙ্গে নেওয়া যাবে না। তবেই তারা কমিউনিস্টদের পাশে পাবে।'
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলায় একা লড়ার বার্তার প্রসঙ্গে এদিন উদ্ধব ঠাকরের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। এর উত্তরে তিনি বলেন, 'এই বিষয়ে বিশদে জেনে আমি প্রতিক্রিয়া জানাব। কিন্তু উনি ওখানে সিংহীর মতো লড়াই করছেন। পশ্চিমবঙ্গের লড়াই গুরুত্বপূর্ণ।'
শিবসেনা(UBT) সূত্রে যদিও দাবি করা হচ্ছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে INDIA জোটের যে সম্পর্ক ভাঙবে, সেটা প্রত্যাশিতই ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কংগ্রেসের যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমই ছিল।
কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলায় তৃণমূলের এই 'সংঘাতে'র কথা উল্লেখ করেছে দিল্লির আম আদমি পার্টিও। দিল্লির AAP মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, 'টিএমসি পশ্চিমবঙ্গের একটি বড় দল। কংগ্রেস এবং বামেরা সবসময় তাদের বিরুদ্ধে লড়ে চলেছে।' এর পাশাপাশি অধীর রঞ্জন চৌধুরির না উল্লেখ করেও তিনি বলেন, 'অধীর রঞ্জন যেভাবে ক্রমাগত তৃণমূল কংগ্রেস এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য করে চলেছেন, সেটা তাঁর এড়িয়ে চলা উচিত।'
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এই প্রসঙ্গে বলেন, 'আমি মমতাজির পুরো বক্তব্য পড়িনি... আমরা বিজেপিকে হারাতে চাই। বিজেপিকে হারাতে আমরা কোনও খামতি রাখব না। আমাদের যাত্রা বাংলায় প্রবেশ করবে। পথে মাঝে মাঝে স্পিড ব্রেকার আসে, লাল বাতি আসে।' এরপরেই তিনি বলেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়া INDIA জোট কল্পনাও করা যায় না। আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস, আলোচনার মাধ্যমে ইন্ডিয়া জোটকে একত্রিত করে বাংলার নির্বাচনে লড়া হবে।' তিনি বলেন, 'আমাদের মূল লক্ষ্য হল ভারত ও বাংলায় বিজেপিকে পরাজিত করা, আমাদের চিন্তাধারা একই। সেই নিয়েই আমরা বাংলায় প্রবেশ করব।'
উল্লেখ্য শীঘ্রই রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা বাংলায় প্রবেশ করার কথা। আর তাতে তৃণমূল কংগ্রেসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে কংগ্রেস। গত ১৩ জানুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই বিষয়ে ইমেল করেন মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধী। চিঠির মাধ্যমেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাঁরা। যদিও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, 'INDIA জোটের শরিক হিসেবে সৌজন্য বোধে আমাকে একবারও জানিয়েছে, দিদি আপনার রাজ্যে আসছি?'