ল্যান্ডফলের পরে ঘূর্ণিঝড় রিমাল ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। তবে শক্তি হারালেও তাতে দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গ। বরং বাংলার জেলায় জেলায় আজও প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে বইবে ঝোড়ো হাওয়া। দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গেও ভারী বৃষ্টি হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কবে উন্নতি হতে চলেছে বাংলার আবহাওয়ার।
হাওয়া অফিস বলছে আজ বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সম্পূর্ণ শক্তি হারিয়ে ফেলবে রিমাল। ঘূর্ণিঝড় বদলে যাবে গভীর নিম্নচাপে। ভারতীয় মৌসম ভবনের তরফে জানানো হয়েছে, সকালের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। তারপর আরও শক্তি হারিয়ে সকাল ১১ টা ৩০ মিনিটে সেটি অতি গভীর নিম্নচাপের আকার ধারণ করবে। বিকেলের মধ্যে গভীর নিম্নচাপ এবং রাতে সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হবে রিমাল। তবে ঘূর্ণিঝড় এবং পরবর্তী নিম্নচাপের প্রভাব থাকবে দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের সব প্রান্তেই। পাহাড় ছাড়া রাজ্যের সর্বত্র চলবে ঝড়বৃষ্টি। কোথাও ভারী, কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাত হবে।
কোথায় আজ কেমন বৃষ্টি?
ঘূর্ণিঝড় রিমাল শক্তিক্ষয় করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হচ্ছে। তার পরে তা বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত বরাবর ক্রমশ উত্তর দিকে এগোবে বলে মনে করছে আবহাওয়া দফতর। এর ফলে দক্ষিণবঙ্গের নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদে সোমবার সকাল থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে সতর্ক করেছে হাওয়া অফিস। এ ছাড়া বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা এবং হাওড়াতেও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির হাত থেকে নিস্তার পাবে না দক্ষিণ বঙ্গের বাকি জেলাগুলিও। এদিন দক্ষিণবঙ্গের বাদবাকি জেলাগুলিতেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এর পাশাপাশি রিমাল-প্রভাবে বৃষ্টি হবে উত্তরবঙ্গেও। সোমবার থেকে শুরু হয়ে বুধবার পর্যন্ত মালদা এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে ভারী বৃষ্টির কমলা সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর এবং জলপাইগুড়িতে জারি করা হয়েছে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির হলুদ সতর্কতা।
৮০ কিমি বেগে ঝড়
রিমালের শক্তি ক্রমশ কমলেও দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গ। আজ দক্ষিণবঙ্গের দুটি জেলায় (মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া) লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ওই দুটি জেলার অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে। কয়েকটি অংশে প্রবল ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ওই দুটি জেলায় ঘণ্টায় ৬০-৭০ কিলোমিটার ঝড়ের দাপট চলবে। সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ কিমি হবে। রবিবারের তাণ্ডবের পরে উত্তর ২৪ পরগনা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ঝড়-বৃষ্টির প্রাবল্য কিছুটা কমবে। ওই দুটি জেলার পাশাপাশি বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, কলকাতা এবং হাওড়ায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে। ওই সাতটি জেলায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জেলাগুলিতে ঘণ্টায় ৫০-৬০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। দমকা হাওয়ার ঘণ্টায় ৭০ কিমিতে ঠেকতে পারে। দক্ষিণবঙ্গের বাকি ছ'টি জেলায় আজ হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুরুলিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম বর্ধমান এবং বাঁকুড়ার কয়েকটি অংশে ভারী বৃষ্টি হবে। ওই জেলাগুলিতেও ঝোড়ো হাওয়া বইবে। হাওয়ার বেগ ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিমি থাকবে। দমকা হাওয়ার বেগ কখনও কখনও ঘণ্টায় ৬০ কিমি হয়ে যাবে।
উত্তরবঙ্গেও দুর্যোগ শুরু
আজ থেকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তরবঙ্গেও বৃষ্টি শুরু হবে। আজ কমলা সতর্কতা জারি করা য়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদায়। ওই দুটি জেলার কয়েকটি অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে। তিনটি জেলায় (উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি) হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সেখানে ভারী বৃষ্টি হবে। উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদায় ঘণ্টায় ৩৫-৪৫ কিমিতে ঝড় হবে। দমকা হাওয়ার বেগ ঘণ্টায় ৫৫ কিমিও হয়ে যেতে পারে।
কলকাতায় ঝড়-বৃষ্টি
রবিবার রাত থেকেই প্রবল ঝড়বৃষ্টি শুরু হয় কলকাতা, হাওড়া ও হুগলিতে। কিছু কিছু জায়গায় গাছ ভেঙে পড়ে অবরুদ্ধ রাস্তাঘাট। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, সোমবার দুপুর পর্যন্ত কলকাতা ও পাশের জেলাগুলিতে দুর্যোগ চলবে। এদিন কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের ২.২ ডিগ্রি কম। রবিবার শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের ৩.৯ ডিগ্রি কম। হাওয়া অফিস বলছে, সোমবার বিকেল থেকে কলকাতা-সহ উপকূল সংলগ্ন এবং পশ্চিমের জেলাগুলিতে আবহাওয়ার উন্নতি হবে। আগামিকাল, মঙ্গলবার থেকে দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়ার উন্নতি হবে।