গলায় রক্তজবার মালা। পরনে সাদা শাড়ি। ত্রিশূল ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি। আর তাঁকে পুজো করছেন পুরোহিত। বাঁকুড়া জেলার ইন্দাসের মির্জাপুরে এভাবেই কালীরূপে পুজো করা হয় বাড়ির বড় বউকে। সাঁতরা পরিবারের কালী বলে পরিচিত এই পুজো দেখতে ভিড় করেন শয়ে শয়ে মানুষ। রীতি-নীতি মেনে শাস্ত্রমতে বাড়ির বড় বউকে কালীরূপে পুজো করা হয়।
কবে থেকে এই রীতি চালু হল ? প্রায় ৬০ বছর আগে সাঁতরা পরিবারের কোনও এক পূর্বপুরুষ দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। কোনও মূল্যবান ধাতুর মূর্তি গড়ে তার পুজো করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে সামর্থ্য না থাকায় সেই সময় বাড়ির বড় বউকে পুজো করার চল শুরু হয়। যা এখনও চলছে।
যখন এই পুজো চালু হয় তখন মন্দির ছিল না। তালপাতা দিয়ে তৈরি মন্দিরে মানবী দেবীর পুজো শুরু হয়েছিল সাঁতরা পরিবারে। এখন অবশ্য পাকাপোক্ত মন্দির তৈরি হয়েছে ৷ এই সাঁতরা পরিবারের বর্তমানের বড় গৃহবধূ হীরাবালা সাঁতরা ৷ গত ৩৮ বছর ধরে তিনি মা কালীরূপে পূজিতা হয়ে আসছেন ৷
পুজোয় সারাদিন উপোস করে থাকেন বাড়ির বউ। অমাবস্যা তিথি শুরু হয়ে হওয়ার পর তাঁর পুজো শুরু হয়। চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা দেবীরূপে বেদীর উপর দাঁড়িয়ে থাকেন বাড়ির বড় বউ। তাঁকে পুরোহিত পুজো করেন। গলায় আকন্দ, রাঙা জবার মালা পড়ানো হয়। পুজোর পর দেবী বেদী থেকে নেমে দর্শনার্থীদের সঙ্গে দেখা করেন।
হীরাবালা সাঁতরার মেয়ে প্রীতিকণা সাঁতরা জানান, 'মা-কে ছোটো থেকেই দেখছি এভাবে। মা বাড়ির বউ সেই কারণে তাঁকেই পুজো করা হয়। এটাই রীতি। আমার ঠাকুমাকেও এভাবে পুজো করা হত। স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর থেকে শাস্ত্রমতে পুজো হয়ে আসছে। গ্রাম-গ্রামান্তর থেকে মানুষ আসে এই পুজো দেখতে।'
পরিবারের আর এক সদস্য জানান, 'দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে এই পুজো হয়ে আসছে ৷ পরিবারের সব সদস্যরা বিভিন্ন কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় আগের তুলনায় আড়ম্বর আরও বেশি হচ্ছে ৷ এই পুজোকে কেন্দ্র করে আশেপাশের সকল মানুষ মেতে ওঠেন। বাঁকুড়া জেলা ছাড়িয়ে এখন রাজ্যেও এই পুজো পরিচিতি পাচ্ছে। রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন জায়গাতে কালীপুজো হয়। তবে এইরকম পুজো আর কোথাও হয় বলে শুনিনি।'