কাল মকর সংক্রান্তি, তার আগেই কনকনে ঠান্ডা পড়েছে গোটা বাংলায়। শহর কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির ঘরে। সাগর দ্বীপে পারও আরও নীচে। সেই ঠান্ডা উপেক্ষা করেই এবার পুণ্যার্থীদের ঢল নেমেছে গঙ্গাসগর মেলায়। আজ রাত ১২:১৩ মিনিট থেকে শুরু হবে মকর সংক্রান্তির শাহি স্নান। চলবে সোমবার দুপুর ১২:১৩ মিনিট পর্যন্ত। তা আগেই কানায় কানয় পূর্ণ হয়ে উঠেছে গঙ্গাসাগর মেলা।
সাগরের ৬টি স্নানঘাটে চলছে স্নান
এবার গঙ্গাসাগরের ৬টি স্নানঘাটে স্নানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি ঘাট এখন কানায় কানায় পূর্ণ। ভোর থেকেই সাগরতটে চলছে গঙ্গাবন্দনা। কেউ কেউ প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি করছেন৷ কেউ কেউ গরুর লেজ ধরে বৈতরণী পার হচ্ছেন। প্রদীপের আলো, ধূপ, ধুনোর গন্ধে মোহময় হয়ে উঠেছে মিলনতীর্থ সাগরমেলা।
মেলায় রেকর্ড ভিড়ের সম্ভাবনা
সংক্রান্তির ঠান্ডা তোয়াক্কা না করেই গঙ্গাসাগর লোকে লোকারণ্য। সারা রাস্তা ‘সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার’ লেখা ফেস্টুন ও ব্যানারে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। সাধুসন্ত ও দেহাতি তীর্থযাত্রীরা অনেক আগে থেকেই ভিড় জমিয়েছেন। শুধু জটাধারী সাধুসন্তরা নন, প্রচুর সাধারণ মানুষওহাজির। যাত্রীবোঝাই বাসে চেপে দলে দলে পুণ্যার্থীরা আসছেন। একেবারে হইহই রইরই ব্যাপার। প্রশাসনের হিসেব, ভিড় এ বার রেকর্ড করতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাগর ও আশপাশের এলাকার উন্নয়নে প্রায় ৬১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। সাগর ব্লকে একটি বড় পানীয় জলের প্রকল্প করা হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, গঙ্গাসাগরে এখন সব সেটআপ তৈরি হয়েছে। মেলার আলোর জন্যই ৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এ কথা ঠিক যে গঙ্গাসাগরে আগে তেমন কিছুই ছিল না। গঙ্গাসাগরেরও একটি প্রাচীন কাল আছে। সেখানে এতসব ছিল না। কিন্তু এখন পরিকাঠামো খুবই ভাল।
অস্থায়ী শেড গুলি থেকে ভীড় উপচে তা চলে এসেছে খোলা আকাশের নিচে।উত্তরে হাওয়া আর প্রবল ঠান্ডা কে উপেক্ষা করে লক্ষ লক্ষ পূন্যার্থীর মুখে একটাই আওয়াজ কপিলমুনি কি জয়।গঙ্গা মাই কি জয়। যেহেতু আজ ও কাল মকর সংক্রান্তির স্নান প্রশাসন আশঙ্কা করছে আজ রাত ও আগামিকাল ভোর এর মধ্যে কয়েক লক্ষ্যধিক তীর্থ যাত্রীর সমগম হবে। সেইমতো মেলা প্রশাসন সমস্ত বিভাগ গুলোকে সতর্ক থাকা নির্দেশ দিয়েছে। গত বুধবার গঙ্গাসাগর মেলা শুরু হওয়ার পর থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪৫ লক্ষ পুণ্যার্থী গঙ্গাসাগরে স্নান সেরে ফিরে গিয়েছেন বলে জানালেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
তৎপর রাজ্য প্রশাসন
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শনিবারই গঙ্গাসাগরে যান মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, সুজিত বসু, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়রা। সেখানে গিয়ে গোটা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন তাঁরা। এদিকে শনিবার রাতেও পূণ্যার্থীরা আসতে থাকেন সাগরে। এই আবহে পূণ্যার্থীদের ভিড় সামলাতে কলকাতা থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত একাধিক বাফার জোন তৈরি করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে রয়েছে ৩৪টি ওয়াচ টাওয়ার। ১১০০ সিসি ক্যামেরা ও ড্রোনের মাধ্যমে নজদারি চলছে সবসময়। রিপোর্ট অনুযায়ী, রেকর্ড সংখ্যক পূণ্যার্থীর সুবিধার্থে এবছর দশ হাজারের বেশি শৌচাগার তৈরি হয়েছে সাগরে। বাবুঘাট থেকে কাকদ্বীপের লট নম্বর আট ও কচুবেড়িয়া থেকে সাগরমেলা পর্যন্ত আড়াই হাজার অতিরিক্ত বাস চালানো হচ্ছে। জলপথে ৩৮টি ভেসেল, ৬টি বার্জ ও ১১০টি লঞ্চ চলছে। মেলা প্রাঙ্গণে ভিড় সামাল দিতে তৈরি করা হয়েছে ৫৪৮ ড্রপ গেট। গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গনে মোট ১৪ হাজার পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও ২৪০০ সিভিল ডিফেন্সের কর্মীকে মোতায়ন করা হয়েছে সেখানে। ইতিমধ্যেই মেলাচত্বরে অসামাজিক কাজকর্মের অভিযোগে ১১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে মেলায় এসে পথ হারিয়ে ফেলা ৪১০ জনের মধ্যে ৩৯৪ জন পুণ্যার্থীকে বাড়ি ফেরানো হয়েছে। এছাড়াও মেলা শুরুর পর থেকে সাগরে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৫ পূণ্যার্থী। তাঁদের আকাশপথে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় চিকিৎসার জন্য। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, শনিবার দুপুর পর্যন্তই ৪৫ লক্ষের বেশি মানুষ গঙ্গাসাগরে এসে পৌঁছেছেন।