পুজো শুরু আগেই বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধ করে দিল বাংলাদেশ। গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় বুধবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সর্বশেষ ২১ মেট্রিক টন ৮০০ কেজি ইলিশ ভারতে রফতানি হয়েছে। তার পর থেকে ভারতেও ইলিশ রফতানি বন্ধ রয়েছে। প্রসঙ্গত ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ফলে কলকাতা তথা রাজ্যের মানুষকে বাংলাদেশি পদ্মা- মেঘনার ইলিশ খেতে ভালই কড়ি গুনতে হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি ইলিশের কদর অনেক। পদ্মা-মেঘনার ইলিশের স্বাদ নিতে মুখিয়ে থাকেন কলকাতাবাসী। সারাবছর না মিললেও দুর্গাপুজোয় বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদ মিলবে বলেই আশায় ছিলেন রাজ্যবাসী। গত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও দুর্গাপুজো উপলক্ষে কলকাতায় রফতানি হয়েছে বাংলাদেশের ইলিশ। তবে এবার ধাপে ধাপে ৩৯৫০ টন রফতানি করার কথা থাকলে এখন পর্যন্ত ভারতে পেয়েছে মাত্র ৫৬০ টন ইলিশ।
এ তথ্য জানিয়ে কলকাতার ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আনোয়ার মাকসুদ বলেন, এবারে কথা ছিল ৩ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন ইলিশের। কিন্তু সব মিলিয়ে মাত্র ৫৬০ মেট্রিক টন। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। এখন দেখার ২ নভেম্বের পর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, ইলিশ আমরা পাচ্ছি কি না? বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসে চিঠিও দিয়েছেন বলে জানান তিনি। আনোয়ার মাকসুদের প্রশ্ন, বছরে ৬ -৭ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ হয় বাংলাদেশে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ মাত্র ৪-৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ চাইছে। এটা কি খুব বড় চাহিদা? দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে বহু পণ্য আমদানি -রপ্তানি হয়। তার সঙ্গে বছরে না হয় ৩-৪ হাজার টন ইলিশ যুক্ত হবে। এতে আমি কোথাও সমস্যা দেখছি না। এতে বরং দুই বাংলার সম্পর্কে আরও ভালো হবে।
শহর কলকাতায় বাংলাদেশ থেকে ইলিশ এসেছে প্রায় মাসখানেক হয়ে গিয়েছে। পদ্মার ইলিশ কলকাতার বাজারে যখন আসে, তখন এই মাছের দাম ছিল প্রায় ১৮০০-২০০০ টাকা। তবে বর্তমানে সেই রেট কিছুটা কমেছে। কলকাতা তথা শহরতলিতে পুজোর ঠিক আগে আগে কত দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে? বেনাপোল থেকে আমদানি বন্ধ হলেও বর্তমানে মজুদ বাংলাদেশি পদ্মা- মেঘনার ইলিশ মিলছে প্রতি কেজি ১২০০-১৫০০ টাকা দরে। এই মাছগুলোর ওজন রয়েছে ৭০০-৭৫০ গ্রাম। বাজারে এক কেজি ওজনের দেশি ইলিশের প্রতি কেজিতে দাম রয়েছে ১৪০০-১৫০০ টাকা। এছাড়া ৬০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের প্রতি কেজির দাম রয়েছে ১০০০-১২০০০ টাকা। তবে ছোট ইলিশ মিলছে কম দামে। ৩৫০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের প্রতি কেজিতে দাম রয়েছে ৬০০-৮০০ টাকা।
বাংলাদেশের ইলিশ আমদানি বন্ধ হলেও স্থানীয় মৎস্যজীবীদের আশা, এ বারও নিমতিতা থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত গঙ্গায় ইলিশের বান আসবে। গত সাত-আট বছর ধরে অক্টোবরের এই সময় বাংলাদেশ থেকে পদ্মা বেয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ঢুকে পড়ে নিমতিতার গঙ্গায়। আর তা ধরতেই গঙ্গায় জাল নিয়ে নেমে পড়েন মৎস্যজীবীরা।