বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান দূষণের প্রেক্ষাপটে সৌরবিদ্যুৎই হতে পারে দূষণ কমানোর অন্যতম কার্যকরী সমাধান। কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই সোলার প্যানেল বসানোর উপর জোর দিচ্ছে। এবার সেই উদ্যোগকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বাংলার বীরভূমে বসতে চলেছে রাজ্যের প্রথম ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।
প্রকল্পের অবস্থান ও প্রযুক্তিগত দিক
বীরভূমের বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নীলনির্জন জলাধারের উপর এই সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মহারাষ্ট্রের একটি সংস্থার তত্ত্বাবধানে তিন সদস্যের একটি দল ইতিমধ্যেই জলাধারের সমীক্ষা শুরু করেছে। এই দলের একজন বিশেষজ্ঞ হাইড্রো ইঞ্জিনিয়ার, মনোজ মালেকার, যিনি বাঙালি। তাঁর অংশগ্রহণ এই প্রকল্পে বাংলার অবদানকে আরও গৌরবময় করে তুলেছে।
সমীক্ষার লক্ষ্য
সমীক্ষার অংশ হিসেবে ২৫ মিটার গভীরতায় একটি বিশেষ যন্ত্র বসানো হয়েছে, যা জলাধারের ঢেউ, স্রোত, তাপমাত্রা, ঘনত্ব এবং লবণাক্ততার মতো আটটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করছে। এই তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করবেন একজন ভূতাত্ত্বিক। রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রকল্পের গুরুত্ব
বাংলায় জমি অধিগ্রহণ একটি বড় সমস্যা। তাই জমির পরিবর্তে জলাশয়ের উপর ভাসমান সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পরিকল্পনা অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। এই উদ্যোগ রাজ্যের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে যেমন সহায়ক হবে, তেমনই দূষণ কমানোর দিকেও এক বড় পদক্ষেপ।
অর্থনৈতিক দিক
এই প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক রাজ্য সরকারকে ঋণ দিয়েছে। সমীক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল এই প্রকল্প লাভজনক হবে কি না এবং ঋণ শোধ করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে কি না তা নিশ্চিত করা।
কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা
এই প্রকল্পের মাধ্যমে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। বাংলার মাটিতে এমন একটি পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় মানুষের প্রতিক্রিয়া
বীরভূমবাসী ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের খবর পেয়ে খুশি। তাঁরা আশাবাদী, প্রকল্পটি শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনে নয়, কর্মসংস্থান ও পরিবেশ রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ভবিষ্যতের দিশা
সরকার দূষণমুক্ত ভবিষ্যতের লক্ষ্যে অপ্রচলিত শক্তি ব্যবহারের উপর জোর দিচ্ছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবর্তে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনই ভবিষ্যতের অন্যতম বড় শক্তি হতে চলেছে। বাংলার এই ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প সেই দিশায় একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
সংবাদদাতা: শান্তনু হাজরা