গত বছর আগষ্ট মাসের পর করোনার প্রথম স্রোত কমে গেলে জীবনযাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছিল। শুরু হয় উৎসব, এমনকী রাজ্যের নির্বাচনও সম্পন্ন হয়। কিন্তু এই সবের মাঝে কেউ নজরই দেয়নি ৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের অপুষ্টি রোধ প্রকল্পের দিকে। সরকারি ভাবে নির্দিষ্ট দফতর আছে, তবু সবার দায়সারা মনোভাবে বঞ্চিত মা এবং শিশুরা। সঙ্গে নষ্ট কয়েক লক্ষ টাকার চাল ডাল আলু নুন এবং ভোজ্য তেল।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ খুলেছিল এলাকার অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দরজা। তারপর থেকে তালা ঝুলছে। বীরভূম জেলায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সংখ্যা ৫ হাজারের কিছু বেশি। এই সমস্ত কেন্দ্রগুলি থেকে লিপিবদ্ধ উপভোক্তার সংখ্যা ৪ লক্ষ ২০ হাজার। সপ্তাহে তিনদিন খিচুড়ি এবং তিনদিন আমিষ খাওয়ার ভরপেট দেওয়া হয় ৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের। উপভোক্তাদের প্রায় সকলেই অত্যন্ত দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। জাতীয় পুষ্টি প্রকল্পের অন্তর্গত সুসংহত শিশু বিকাশ কেন্দ্র (আইসিডিএস) এই প্রকল্প দেখভাল করে। প্রতি ব্লকে আছেন সিডিপিও, যিনি সরকারি ভাবে প্রকল্প দেখেন। তেমনই এক সিডিপিও সায়ন্তন মান্না স্বীকার করেন, "কোভিড সংক্রান্ত কারনে প্রকল্পটি বন্ধ আছে, কেউ ঝুঁকি নিতে পারছেন না।"
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নামে পরিচিত এই সব কেন্দ্রে যাঁরা রান্না করেন তাঁরা মূলত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর গরীব মহিলা। তাঁরা বলছেন বহু কেন্দ্রে মজুত আছে চাল ডাল সর্ষের তেল। বন্ধ ঘরে সেগুলো নষ্ট হচ্ছে, পোকায় খেয়ে ফেলছে, আর সর্ষের তেলের টিনগুলো মেয়াদ উত্তীর্ন হয়ে গিয়েছে। কর্মীদের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৫০ হাজার লিটার সর্ষের তেল ইতিমধ্যেই নষ্ট। প্রায় ১৮০ টাকা লিটার সর্ষের তেল হলে, ৫০ হাজার লিটারের দাম কত হবে তা ভেবেই চক্ষু চড়কগাছ সকলের। পঞ্চায়েত স্তরে জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, এই সময়কালে কিছুদিন শুকনো রেশন উপভোক্তাদের দেওয়া হলেও তেলের কথা ভাবাই হয়নি। একই ভাবে কয়েক কুইন্টাল নুন ও নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরী বলেন, তিনি নিজেও বিষয়টি জানতেন না। আজতক বাংলার কাছে বিষয়টি শুনে বলেন, " আমাকে এ বিষয়ে কেউ কিছু আগে জানাননি, আমি খোঁজ নিচ্ছি, একটা ব্যবস্থা করতেই হবে"। গ্রামের গরিব মানুষদের ক্ষোভ, লকডাউনে আরও বেড়েছে। কাজ নেই আয় নেই, খাওয়ার সংকট চলছে। রেশন পাওয়ার বিষয়টিও সবসময় নিশ্চিত থাকছে না। একসময় স্কুল খুলে ভোট হল, কিন্তু স্কুলের পাশে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটা খুললে গরিবরা খাওয়ার পেতেন, আর এত এত টাকার জিনিষ এভাবে নষ্টও হত না।