৫ নভেম্বর বাঁকুড়া ঘুরে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই বাঁকুড়া দিয়েই এবার কার্যত নিজের ভোটপ্রচার শুরু করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা আবহে গত সোমবার খাতড়ায় প্রথম সরকারি সভা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সভা থেকেই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আক্রমণ করেছিলেন মমতা। সোমবার যেখানে শেষ করেছিলেন বুধবার যেন সেখান থেকেই শুরু করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন কলকাতায় ফেরার আগে সুলুকপাহাড়ি হাটের মাঠে জনসভা করলেন মমতা। করোনা কালে দীর্ঘ আটমাস পর মুখ্যমন্ত্রীর এই জনসভায় ভিড় কেমন হয় তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি দলীয় কর্মীদের মধ্যেও ছিল চাপা টেনশন। তবে করোনাকালে দীর্ঘ আটমাস পর জনসভায় জনসমাগম দেখে দলকে ফুলমার্কসই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন জনসভায় কেবল বিজেপি নয় একযোগে সিপিএম ও কংগ্রেসকেও আক্রমণ করেছেন মমতা। মনে করিয়ে দিয়েছেন আজ থেকে ১০ বছর আগে বাঁকুড়ায় সিপিএমের অত্যাচারের ইতিহাস। সারেঙ্গা, সাঁকরাইল, খাতরা, মুকুটমণিপুর, ইন্দাস, ছাতনা, ওন্দায় সিপিএমের অত্যাচারের কথা মনে করিয়ে মানুষের পুরনো স্মৃতি উস্কে দিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আদিবাসী অধ্যুষিত বাঁকুড়াকে টার্গেট করেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বয়ং চলতি মাসেই এসেছেন জেলা সফরে। গত লোকসভা ভোটেও এখানকার ২টি আসন গিয়েছে পদ্ম শিবিরের দখলে। সেই ফলের ভিত্তিতে বিধানসভা নির্বাচনে ১২টি আসনেই তৃণমূলের পরাজয় নিশ্চিত। তবে মমতা দাবি করেছেন, বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিজয় পতাকাই উড়বে আদিবাসী অধ্যুষিত এই জেলায়। চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে মমতা বলেথেন, চক্রান্ত করে তাঁকে জেলে পাঠানো হলেও বাংলা জয় করে দেখাবেন তিনি।
গত লোকসভা ভোটে বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএম একসাথে চক্রান্ত করে ময়দানে নেমেছিল বলে এদিনও দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবারও বিধানভা ভোটেও সেই
ছকেই খেলতে চাইছে বিরোধী শিবির। ভোটের আগে তাঁর দলীয় কর্মীদের টাকার লোভ দেখিয়ে দল ভাঙানোর চেষ্টা চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী এখন বিজেপির হয়ে কাজ করছে।" মমতা জনসভা থেকেই দাবি করেন, সিপিএম লোভী, বিজেপি ভোগী। সেই সঙ্গেই দলীয় কর্মীদের বার্তা দিয়ে স্পষ্ট করে দেন তৃণমূলে থাকতে গেলে ত্যাগী হতে হবে।
মমতা দাবি করেন, নারদা, সারদার মত কেলেঙ্কারি বাম আমলেই ডালপালা মেলেছিল। তা দিয়ে তৃণমূল সরকারকে ভয় দেখানো যাবে না। আগামী দিনে কেন্দ্র চক্রান্ত করে তাঁকে জেলে পুড়তে চাইলেও বাংলার মানুষ তার পাশেই থাকবে। এই প্রসঙ্গেই বিহার ভোটের কথা টেনেছেন মমতা। লালুপ্রসাদকে চক্রান্ত করে জেলে পুড়ে এবারের নির্বাচন করা হয়েছে বলেও দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। গত সোমবার অমিত শাহের আদিবাসী বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তাঁর নিশানায় শাহের পাশাপাশি নাম না করেই এসেছে দিলীপ ঘোষ ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের প্রসঙ্গও। গেরুয়াশিবির বহিরগত নেতাদের রাজ্যে ঢুকিয়ে অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করছে, সেই দাবিও ফের একবার করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি সবচেয়ে বেশি আদিবাসীদের ওপর অ্যাত্যাচার করেছে ,বাঁকুড়ার জনসভা থেকে আরও একবার বলতে শোনা যায় মমতাকে।
এসবের পাশাপাশই তার সরকারের আমলে বাঁকুড়ার উন্নয়নের খতিয়ানও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দাবি করেছেন জুন পর্যন্ত বিনামূল্যে যে রেশন দেওয়া হচ্ছে আগামী দিনে তা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হবে। বাঁকুড়াবাসীর জন্য ২৫ লক্ষ কর্মসংস্থানের কথাও বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদী বিহার ভোট জেতার পর নারীশক্তির গুণগান করেছিলেন। এদিন মমতার মুখেও শোনা গেল সেই কথা। নারীবাহিনী তাঁর জয়ের আসল শক্তি সেকথা জনসভায় মহিলা ভোটাকদের উদ্দেশ্যে বললেন তৃণমূলনেত্রী। ভোট আসতে এখনও মাস পাঁচেক বাকি রয়েছে। নির্বাচন কমিশনও এখনও নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেনি। তার আগেই অবশ্য ময়দানে নেমে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী। লালমাটির দেশ থেকেই একেবারে রণংদেহী মুডে ২০২১-এর লক্ষ্যে ভোট প্রচার শুরু করে দিলেন তৃণমূলনেত্রী।