গায়ের জোরে প্রথমে জমি দখল। তারপর তা ছাড়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দাবি। না দিলে দলবল নিয়ে হামলা, ভাঙচুর, মারধর। এভাবেই অন্যের জমি দখল করে গায়ের জোরে তোলাবাজির অভিযোগ উঠেছে এক তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। আর এবার তোলার টাকা না মেলায় দলবল নিয়ে মাখনার ফড়িতে (ছোট কারখানা) চড়াও হয়ে ভাঙচুর ও তার মালিককে মারধরের অভিযোগ উঠল তার বিরুদ্ধে। ঘটনাচক্রে প্রহৃত ফড়ির মালিকও তৃণমূল কর্মী। সোমবার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে।
জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ওই তৃণমূল কর্মীর নাম বাবলু কর্মকার। তার বিরুদ্ধে আগেও একাধিকবার এভাবেই জমি দখল করে তোলাবাজির চেষ্টার অভিযোগ উঠে। কিন্তু তারপরেও দলের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তৃণমূলেরই একাংশের। এবার ফের তোলাবাজি করতে গিয়ে ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় বাবলুর নাম জড়ানোয় অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও ওই ঘটনায় তাকে মিথ্যে জড়ানো হচ্ছে বলে দাবি বাবলুর। তৃণমূল ও স্থানীয় সূত্রে খবর, হরিশ্চন্দ্রপুর পেট্রোল পাম্পের পাশে মাখনার ফড়ি রয়েছে দিল মহম্মদের। ওই জমিতেই মাখনা থেকে খই তৈরির চারটি ফড়ি রয়েছে তাঁর। তবে আপাতত ফড়িগুলি বন্ধ। কারখানার সামনে রাস্তার ধারে জমির একাংশকে ঘিরেই ঘটনার সূত্রপাত। ওই রাস্তার পাশে আগেও জমি দখলকে ঘিরে এক ব্যবসায়ীকে মারধর ও ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে বাবলুর বিরুদ্ধে।
বাবলু পেশায় ঠিকাদার। কিন্তু আসলে বাবলু 'জমি মাফিয়া' হিসেবেই এলাকায় বেশি পরিচিত বলে দাবি তৃণমূলের একাংশের। এই বিষয়ে, দিল মহম্মদের অভিযোগ, সম্প্রতি গায়ের জোরে বাবলু তাঁর জমি ঘিরে দেয়। পরে জমি ছাড়তে হলে দু'লক্ষ টাকা দাবি করে। কিন্তু সেই টাকা না দেওয়ায় এদিন কারখানায় চড়াও হয়ে ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। বাধা দেওয়ায় মারধরও করা হয় তাঁকে। দিল মহম্মদ বলেন, "আগেও প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। আমার ন্যায্য জমি আমি ছাড়ব কেন? নথিতে আমার নামে যে জমি আছে তার বেশি আমি চাই না। কিন্তু বাবলু তার সঙ্গীদের মদ খাইয়ে এভাবেই অন্যের জমি দখল করে দাদাগিরি ট্যাক্স আদায় করে। আমি টাকা দিতে রাজি হইনি। তারপরেই এদিন ফড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর করে। বাধা দেওয়ায় আমাকে মারধরও করে।" এদিকে যার নামে জমি দখলের অভিযোগ সেই বাবলু কর্মকারের পালটা দাবি," আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। আমি ছিলাম না। কাজের জন্য অন্য এলাকায় ছিলাম। শুনতে পাই আমার নামে এসব বলা হচ্ছে। হয়তো আমাকে ফাঁসানোর জন্য চক্রান্ত।"
এই ঘটনায়, হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মানিক দাস বলেন," ঘটনাটি শুনলাম। সমগ্র ব্যাপারটা জানি না। খতিয়ে দেখতে হবে। যাঁর যেটা ন্যায্য, আইনি প্রক্রিয়ায় সেটাই পাবেন।" যদিও এই ব্যাপারে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। দলের জেলা সম্পাদক কিষান কেডিয়া বলেন," হরিশ্চন্দ্রপুরে এই ঘটনা নতুন নয়। জমি নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এর আগেও হয়েছে। এবার ক্ষমতায় আসার পরেও হচ্ছে। মানুষ বুঝতে পারবেন কাদের ভোট দিয়েছেন।" এদিকে দলের এই দুই কর্মীর বিবাদকে ঘিরে প্রকাশ্যে এসেছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব। যা নিয়ে মুখে কিছু না বললেও, রীতিমতো অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব। হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি সঞ্জয়কুমার দাস বলেন, "এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"