অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া দিতে অপারগ, তাই ব্যাগে ৫ মাসের সন্তানের দেহ ভরে নিয়ে ফিরলেন বাবা। শিলিগুড়ির এই মর্মান্তিক ঘটনাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। রাজ্য সরকারের 'স্বাস্থ্যসাথী' প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিজেপি। পাল্টা বিজেপির বিরুদ্ধে 'নোংরা রাজনীতি' করার অভিযোগ তুলেছে শাসকদল।
এই ঘটনায় রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়েও প্রশ্ন তুলে দেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেন্দু অধিকারী লেখেন, 'ইনি অসীম দেবশর্মা, উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জের মুস্তাফানগর গ্রামে বাড়ি। কিছুদিন আগে তার ৫ মাসের অসুস্থ শিশুকে শিলিগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করেন। ছয় দিন ধরে চিকিৎসা চলার পর অবশেষে শিশুটি মারা যায়। শিশুটির মরদেহ বাড়ি নিয়ে যেতে তিনি ১০২ নম্বরে ডায়াল করে সাহায্য চান, কিন্তু বাড়ি অবধি শিশুটির মৃতদেহ পরিবহনের জন্য তাঁর কাছে ৮০০০ টাকা চাওয়া হয়। ছয় দিনে চিকিৎসার প্রায় ১৬০০০ টাকা খরচ করার পর তাঁর কাছে আর অর্থ না থাকায় তিনি শিশুটির মরদেহ বহন করার জন্য কোনও পরিবহণের ব্যবস্থা করতে পারেন নি। অবশেষে শিশুটির মৃতদেহ একটি ব্যাগে ভরে তিনি পাবলিক বাসে করে কালিয়াগঞ্জের মুস্তাফানগর গ্রামে নিজের বাড়িতে পৌঁছান। 'স্বাস্থ্য সাথী' থাকার পরেও প্রান্তিক, অসহায় গরীব মানুষদের হাজার হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে, কেন? এটাই এগিয়ে বাংলার বাস্তব চিত্র'। পাল্টা এই ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধে 'নোংরা রাজানীতি' করার অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন।
প্রসঙ্গত, মৃত শিশুর বাবা অসীম দেবশর্মা জানাচ্ছেন, শনিবার রাতে শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর ৫ বছরের শিশু। ৬ দিন ধরে তাঁর শিশুর চিকিৎসা চলছিল ওই হাসপাতালে। চিকিৎসায় ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর রবিবার যখন অসীমবাবু অ্যাম্বুল্যান্স চালককে সন্তানের দেহ উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন, তখন ৮ হাজার টাকা চাওয়া হয়। অসমীববাবু জানান, ১০২ প্রকল্পের অ্যাম্বুল্যান্স চালক তাঁকে জানান যে, এই পরিষেবা রোগীদের জন্য বিনামূল্যে। কিন্তু মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার নিয়ম নেই।
ব্যাগে ভরে আনা হয় দেহ
এরপরেই ছেলের দেহে একটি ব্যাগে ভরে বাসে চেপে শিলিগুড়ি থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে কালিয়াগঞ্জে পৌঁছান অসীম দেবশর্মা। যাত্রাকালে বাসের অন্যান্য যাত্রীরা যাতে এই বিষয়টি জানতে না পারেন, সেদিকেও খেয়াল রাখেন তিনি। রীতিমতো ভয়ে ভীত হয়ে সন্তানের দেহ নিয়ে কালিয়গঞ্জে পৌঁছান অসীমবাবু।
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে জলপাইগুড়িতেও এই ধরনের ঘটনা ঘটে। যেখানে অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া দিতে না পাড়ায়, মায়ের দেহ কাঁধে নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা দেন ছেলে। পরে অবশ্য কিছুদূর হাঁটার পর একটি সমাজসেবী সংস্থা ওই ব্যক্তিকে বিনামূল্যে গাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়।
আরও পড়ুন - ICSE-তে দেশে প্রথম জেলার ছেলে সম্বিত, ISC-তেও যুগ্ম প্রথম শুভম-মান্য