এই করোনা আবহে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হবে কি না তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে রাজ্য সরকার। আর এতেই চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছে শিক্ষক সংগঠনের একাংশ। তাদের সন্দেহ, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিলের পথে এগোতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
পরীক্ষা বাতিলের বিপক্ষে তারা। সাফ জানিয়েছে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি। সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল এই বিষয়ে বলেন, 'কিছু দিন আগে রাজ্য সরকারের তরফে বলা হল, পরীক্ষা হবে। তারপর আচমকা ঘোষণা করা হল, পরীক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিশেষজ্ঞ কমিটি। এসব দেখেই আমাদের মনে হচ্ছে, রাজ্য সরকার পরীক্ষা না নেওয়ার দিকে এগোতে চাইছে।'
স্বপনবাবুর আরও অভিযোগ, রাজ্য সরকার যে কমিটি গঠন করেছে সেখানে কোনও শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধি রাখা হয়নি। নেই কোনও শিক্ষাবিদও। যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই সরকারের লোক। স্বপনবাবুর কথায়, 'যাঁরা ছাত্রদের সঙ্গে কাজ করে বা তাঁদের বোঝে, সেই শিক্ষাকর্মী প্রতিনিধিদের সরকার কমিটিতে রাখেনি। এটা একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের সঙ্গে আরও একাধিক সংগঠনের কথা হয়েছে। তারাও সরকারের এই সিদ্ধান্তে অখুশি।'
তবে রাজ্যে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হবে না, তা এখনই মানতে নারাজ বিজেপিপন্থী ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইমারি ট্রেইনড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি পিন্টু পাড়ুই। তিনি জানান, এই করোনা পরিস্থিতির কারণে কেন্দ্র সরকার সিবিএসই-সিআইএসসিই-র ২০২১ সালের দ্বাদশের বোর্ড পরীক্ষাও বাতিল করেছে। সেই সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়েই রাজ্য সরকার কমিটি গড়েছে।
আরও পড়ুন : 'YAAS' দুর্গত এলাকায় মানুষের পাশে শিলিগুড়ির ফাউন্ডেশন
তবে সেই কমিটিতে শিক্ষক সংগঠনের সদস্যদের কেন রাখা হয়নি, তা নিয়ে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির মতো প্রশ্ন তুলেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইমারি ট্রেইনড টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন। তাঁদের দাবি, রাজ্য সরকার যে কমিটি গড়েছে সেখানে শিক্ষক সংগঠনের সদস্যদের ডাকা দরকার। পিন্টু পাড়ুইয়ের কথায়, তাঁর কথায়, 'আমার মনে হয়, রাজ্য সরকার কেন্দ্রের নির্দেশিকা মেনেই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, তা যেন শিক্ষক সংগঠনের প্রতিনিধিদের ডেকে নেওয়া হয়।'
যদিও এনিয়ে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়কে ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি।
রাজ্যে কেন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হওয়া উচিত, তা নিয়ে জোর সওয়াল করে শিক্ষক সংগঠনের একাংশের যুক্তি- পরীক্ষা না নিলে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। সঠিক মূল্যায়ণ হবে না। এতে শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষতি। যেমন বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির স্বপন মণ্ডল বলেন, 'কেন্দ্র এখন পরীক্ষার্থীদের জন্য কুম্ভিরাশ্রু বর্ষণ করছে। আর রাজ্য তাতে তাল মিলিয়েছে। আমরা মনে করি পরীক্ষা হওয়া দরকার। কারণ, করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। আর ভোট তো করোনার মধ্যেই হয়েছে। রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা থাকলেই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব।'
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে আজতক বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পবিত্র সরকার ও অমল মুখোপাধ্যায়ের মতো শিক্ষাবিদও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সওয়াল করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, 'দফায় দফায় ভোট হলে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয় কেন?' আজও কার্যত সেই সুরই শোনা গেল শিক্ষক সংগঠনগুলির একাংশের তরফে।'