ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে বাংলার জেলায় জেলায়। রবিবার মধ্যরাতেই ল্যান্ডফল হবে ঘূর্ণিঝড়ের। তারজন্য আজ কলকাতা শহরে ঝড়-বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি হয়েছে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। শিয়ালদা ও হাওড়া দুই স্টেশন থেকেই বাতিল হয়েছে প্রচুর ট্রেন। বিপদ এড়াতে বন্ধ রাখা হচ্ছে গঙ্গার বুকে ফেরি সার্ভিসও। কলকাতা বিমানবন্দরও অপারেশন বন্ধ রাখছে ২১ ঘণ্টার জন্য। আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা, এই 'রিমাল' ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়বে পশ্চিমবঙ্গে। বারবার মে মাসেই বাংলার বুকে দানা বাঁধে ঘূর্ণিঝড় শঙ্কা। কখনও ফণী, কখনও আয়লা, কখনও আমফান। লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেছে বাংলাকে। আর এবার রিমালের আশঙ্কা।
চলতি বছর উষ্ণতার ধারাবাহিক অস্থিরতা দেখেছে বাংলা। এপ্রিলের তাপপ্রবাহে পরপর ভেঙেছে উষ্ণতার রেকর্ড। মে মাসে নতুন করে অস্থিরতার সম্মুখীন বাংলা। এবার ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় প্রহর গুনছে রাজ্যবাসী। উপকূলবর্তী বাসিন্দাদের চিন্তা বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। আশ্রয় হারানোর আশঙ্কায় উপকূলের বাসিন্দারা।
বাংলায় এখনও পর্যন্ত সবথেকে বড় ঘূর্ণিঝড় কী? গত কয়েক দশকে কোন কোন ঘূর্ণিঝড় সমুদ্র উপকূলে আছড়ে পড়েছে, তার প্রভাবে কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, জেনে নিন বিশদে।
বঙ্গোপসাগর যে সব ঝড় হয়েছে, তাদের মধ্যে ভয়ঙ্কর সাইক্লোনগুলির মধ্যে সবথেকে আগে যে নামটি উড়ে আসে, তা হল 'ভোলা'। ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে আছড়়ে পড়েছিল এই সাইক্লোন। বঙ্গোসাগরে তৈরি হওয়া এই সুপার সাইক্লোনে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের।
২০০২ সালে পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অঞ্চলে আছড়ে পড়েছিল সাইক্লোন বিওবি ০৩। মৃত্যু হয় ১৭৩ জনের।
২০০৯ সালের ২৫ মে সুন্দরবনে ছোবল মেরেছিল আয়লা। মারাত্মক ছিল সে ঝড়। আয়লার দাপটে বাংলায় প্রাণ গিয়েছিল কমপক্ষে ১৫০ জনের।
২০১৯ সালে মে মাসে ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়ে 'ফণী' সাইক্লোন। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছিল বাংলাতেও। মৃত্যু হয় ৪০ জনের।
২০২০ সালে পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশে আছড়ে পড়ে সুপার সাইক্লোন 'আম্ফান'। করোনা-কালে এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছিল জনজীবন-সংক্রান্ত প্রায় সমস্ত পরিষেবা। আমফানের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার।
এরপর ২০২১ সালের মে মাসে আরেকটি ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ধাক্কা দিয়েছিল বাংলাকে।
মে মাসের এই ঘূর্ণিঝড়ের পিছনে সমুদ্রের জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি এর অন্যতম বড় কারণ বলে মনে করছেন আবহবিদরা। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণনের জন্য যে শক্তি প্রয়োজন, তা এই সময়ে তৈরি হয়, জলীয় বাষ্প যুক্ত পুবালী হাওয়া ঝড় সৃষ্টির পিছনে অন্যতম অনুঘটকের কাজ করে।