শুক্রবার সকালে বাংলার বুকে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। দুর্নীতির তদন্তে গিয়ে মারমুখী জনতার আক্রমণের মুখে পড়েছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর আধিকারিকরা। লোকসভা নির্বাচনের আগে যে ঘটনা ঘিরে সরগরম জাতীয় রাজনীতিও। এই ঘটনায় আলোচনায় উঠে এসেছেন সন্দেশখালির 'দাপুটে' তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখের নাম। শুক্রবার সকালে তাঁর বাড়িতেই হানা দিয়েছিল ইডির দল। তাঁর অনুগামীরাই ইডির অভিযান রুখে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কে এই শাহজাহান শেখ?
এক সময় ইটভাটায় কাজ করতেন সন্দেশখালির 'ভাই' শাহজাহান। পরে কাজ করেন মাছের বাজারেও। সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি ব্লকে বাংলাদেশ সীমান্তে একদা মাছের চাষ করতেন শাহজাহান। বর্তমানে রাজ্যে মৎস্য ক্ষেত্রে 'মুকুটহীন রাজা' শাহজাহান।
২০০৪ সালে প্রথম বার রাজনীতিতে পদার্পণ ঘটে শাহজাহানের। সে বছর ইটভাটায় ইউনিয়ন নেতা হন তিনি। পরে সিপিএমের স্থানীয় শাখায় যোগ দেন শাহজাহান। বাম জমানা শেষে তৃণমূলের দিকে ঝোঁকেন এই নেতা। শাহজাহানের সাংগঠনিক দক্ষতা এবং জ্বালাময়ী বক্তৃতা নজর কেড়েছিল তৃণমূল নেতৃত্বের। তার পরে তৎকালীন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন শাহজাহান। তৃণমূল আমলে সন্দেশখালিতে আরও প্রভাব বাড়ে শাহজাহানের।
২০১৮ সালে সরবেড়িয়া আগরঘাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হন তিনি। বর্তমানে সন্দেশখালি তৃণমূল শাখার সভাপতি শাহজাহান। গত বছর জেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হন তিনি। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় মাছের ব্যবসার মূল কাণ্ডারী শাহজাহান। তাঁর ছোট ভাইও এক জন সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। এলাকায় শাহজাহান 'বাহুবলী' নেতা হিসাবেই পরিচিত।
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের পর সন্দেশখালিতে তৃণমূল এবং বিজেপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। এই ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল শাহজাহানের। সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল।
সন্দেশখালিকাণ্ডে চড়ছে রাজনীতির পারদ
সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে তপ্ত রাজনীতির ময়দান। এই ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শাহজাহানের পরিণতি বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মতো হবে বলে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। তিনি আরও দাবি করেছেন যে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি এক জনসভায় শাহজাহান বলেছেন যে, সিবিআই এবং ইডি তাঁর চুল স্পর্শ করতে পারবে না।
শুক্রবার এই ঘটনা প্রসঙ্গে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, 'রাজ্যে সাংবিধানিক কাঠামো যে ভেঙে পড়েছে, তা রজ্যপাল এখনও কেন ঘোষণা করছেন না?' ঘটনাচক্রে এই মন্তব্যের পর পরই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস সন্দেশখালিকাণ্ডে নিন্দায় সরব হন। তিনি বলেন, 'রাজ্য সরকার কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হলে সংবিধান তার মতো পদক্ষেপ করবে।'