ঋণের নাম করেই টাকা তুলেছিলেন। পরিকল্পিতভাবে বয়স্ক মানুষদের টাকা আত্মসাতে জড়িত নুসরত জাহান। বুধবার এমনই অভিযোগ তুললেন বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পন্ডা। এদিন নুসরত সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে আর্থিক তছরূপে জড়িত থাকার বিষয়ে অস্বীকার করেন। আর তার ঠিক পরপরই পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলনের একগুচ্ছ অভিযোগের তীর ছুঁড়ে দেন শঙ্কুদেব।
বিজেপি নেতার কথা, 'তিনি সেই সময়ে এই কোম্পানির ডিরেক্টর ছিলেন। সেই টাকায় প্রপার্টি কিনেছেন। ১ কোটি ১৬ লক্ষ ঋণ বলছেন। অফিসিয়াল ডিডে নুসরত জাহান নিজে জানিয়েছেন কবে কোন কোম্পানি থেকে কত টাকা নিয়েছেন।'
এরপর পরপর চেক নম্বরসহ ডিড-এর তালিকা পড়ে শোনান শঙ্কুদেব। তাতে চেক নম্বর ও টাকার অঙ্ক উল্লেখ করেন। সেই তালিকা অনুযায়ী, শঙ্কুদেব বলেন, 'উনি নিজে সই করে অফিসিয়ালি ডিড করে জমা দিয়েছেন। মোট পরিমাণ ১ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা তুলেছেন।'
এদিকে বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে নুসরত বলেন, তিনি ডিরেক্টর থাকাকালীন কোম্পানি থেকে ১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। তবে সেই টাকা সুদ-সহ শোধও করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করে রীতিমতো তেড়েফুঁড়ে ওঠেন শঙ্কুদেব। তিনি প্রশ্ন করেন, 'আপনি আমাদের পাগল ভাবেন? সাংবাদিকদের জ্ঞান দিচ্ছেন? আপনি তুলেছেনই ২৪ কোটি টাকার আশেপাশে। আপনি যে টাকা তুলেছেন, তাতেই শোধ করেছেন। আপনি অফিসিয়াল আয়কর রিটার্নে আসল টাকার অঙ্ক দেখাননি।'
তিনি আরও প্রশ্ন করেন, 'একটা কোম্পানি ১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকার লোন ডিরেক্টরকে কেন দেবে? আপনার লক্ষ্য ছিল সিনিয়র সিটিজেনদের টাকা তোলা। ইডি-র দেখা উচিত। কারণ আর্থিক তছরূপ হয়েছে।'
ED এই বিষয়ে খতিয়ে না দেখলে আদালতে যাবেন বলেও জানান শঙ্কুদেব।
এদিন নুসরত জানিয়েছিলেন, মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে শঙ্কুদেব বলেন, ওঁর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল এই বয়স্ক মানুষগুলির মৃত্যু হলে আর টাকা ফেরত দিতে হবে না। এই বুদ্ধি থেকেই করা হয়েছে। বাংলায় এমন অপরাধ আগে ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই।'
প্রসঙ্গত, সমবায়ের মাধ্যমে ফ্ল্যাট কেনার জন্য 'সেভেন সেন্টস প্রাইভেট লিমিটেড' নামে একটি সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন তৃণমূল সাংসদ-অভিনেত্রী নুসরত জাহান। ২০১৪ সালে এই সংস্থার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের থেকে ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা করে তোলা হয়। বিনিয়োগকারীদের বলা হয়েছিল, আগামী চার বছরের মধ্যে ফ্ল্যাট তৈরি করে দেওয়া হবে। তবে ২০১৮ সাল পার হলেও ফ্ল্যাট মেলেনি।
প্রতারিত বিনিয়োগকারীরা আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালতের নির্দেশমাফিক পুলিশি তদন্ত শুরু হয়।
বিনিয়োগকারীদের দাবি, মোট ৪২৯ জনের কাছ থেকে টাকা তোলা হয়েছিল। সেই টাকায় সংস্থার ডিরেক্টররা বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছিলেন বলে অভিযোগ। তার মধ্যে নুসরতও ছিলেন।
বুধবার নুসরত সাংবাদিক সম্মেলনে নুসরত জানান, তিনি সেই সময়ে সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন। তবে ৫ বছর আগেই তিনি সংস্থা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। সংস্থা থেকে ১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন বলে জানান নুসরত। সেই টাকা সুদসহ শোধও করেছিলেন বলে দাবি করেছেন সাংসদ-অভিনেত্রী।
শঙ্কুদেব কটাক্ষ করে বলেন, 'কোনও কোনও অপরাধীকে তিনি একসময়ে সাহায্য করেছিলেন বলে অভিযোগ ছিল।'
২০১২ সালের পার্কস্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্ত কাদের খানকে সাহায্য করার অভিযোগ উঠেছিল নুসরত জাহানের বিরুদ্ধে। পলাতক কাদেরের সঙ্গে নুসরতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। পলাতক কাদেরের সঙ্গে মুম্বইতে গিয়েও তিনি দেখা করেন বলে অভিযোগ। বিশ্লেষকদের ধারণা, সম্ভবত সেই 'ইতিহাসে'র কথাই বলেছেন তিনি।