দূরত্ব বেড়েছে। টান কমেনি। হাজতবাসে একে অপরের থেকে দূরে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। তবে তা 'অপার' বাঁধনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কখনও ভার্চুয়াল হেয়ারিংয়ে ঠোঁটের ইঙ্গিত। কখনও সবার সামনে সাহসী যুবকের মতো হার্ট সাইন। দুর্নীতির অভিযোগ, কোটি-কোটি টাকা উদ্ধার, মন্ত্রিত্ব হারানো, কারাবাসের মতো হাজারো কেলেঙ্কারির মাঝে একটিই জিনিস ধ্রুবক থেকেছে। বারবার মিলেছে তার নিদর্শন। এক বছর পরেও তাই চর্চায় 'অপা'।
চলতি বছরের মার্চের কথা। বহুদিন দেখা হয়নি। কিন্তু ভার্চুয়াল স্ক্রিনে একে অপরকে দেখেই মুচকি হাসেন পার্থ-অর্পিতা। ব্যাঙ্কশাল কোর্টে স্ক্রিনের ওপার থেকেই হার্ট সাইন দেখান পার্থ। প্রাক্তন মন্ত্রীর ইশারা দেখে অর্পিতারও মুখে ফুটে ওঠে হাসি। আবার পার্থর ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি দেখিয়েও পাল্টা ইশারা করেন অর্পিতা।
প্রেমে পড়লে মানুষ ফোন-মেসেজে অপরজনের খোঁজ নেন, 'খেয়েছ?' ঠিক যেন সেভাবেই অর্পিতা খেয়েছেন কিনা তার খোঁজ নেন পার্থ। চলে জিভ ভেংচির খেলাও। হেসে ফেলেন অর্পিতা। কোর্টের কচকচানির মাঝেই যেন 'দিল মে বাজি গিটার...' দেখান হার্ট সাইনও।
২০২২ সালের ২২ জুলাই। টাকার পাহাড় মেলে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে। শিক্ষা দুর্নীতির টাকা। তৃণমূলের একুশের সমাবেশের ঠিক পরের দিনই। জানা যায় অর্পিতা মুখোপাধ্যায় আসলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের 'ঘনিষ্ঠ'। ট্রাঙ্কে ভর্তি ভর্তি টাকা, সোনা, গয়নার দৃশ্য ভাইরাল হল সোশ্যাল মিডিয়ায়। গোটা দেশ জানল 'অপা'র প্রেমের কাহিনী। কলঙ্কের সেই দিনের পর বছর পেরিয়েছে। দেখতে দেখতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কারাবাসের এক বছর হতে চলল। গত বছর ২৩ জুলাই গ্রেফতার হন পার্থ। তারপর থেকে জেরা-জেলবন্দি দশারই জীবন কাটছে তাঁর। সময়ের সঙ্গে একের পর এক নিয়োগ দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে তাঁর নাম। গিয়েছে তৃণমূলের মহাসচিবের পদ, মন্ত্রিত্ব।
ইডির জেরায় অর্পিতা মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, এই টাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। তিনিই নাকি মাঝে মাঝে গিয়ে সেই টাকা রেখে আসতেন। তদন্তের পর ইডি দাবি করে, নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষের দেওয়া টাকাও সেখানেই রাখা হত। জানা যায়, টেট নিয়োগ দুর্নীতির টাকা ঘুরপথে যেত পার্থর কাছে। আর তা গচ্ছিত রাখা হতো পার্থর এই ফ্ল্যাটে।