Advertisement

Sandeshkhali Ground Report: পার্টি অফিসে যৌন হেনস্থার অভিযোগ, কোন মহিলাদের সঙ্গে? জানে না সন্দেশখালি

ভরদুপুর। পিনড্রপ সাইলেন্স সন্দেশখালিতে। অথচ গতকালও এখানে উত্তাল পরিস্থিতি ছিল। এখন একদম শুনসান। পাত্রপাড়া, পুকুরপাড়া প্রায় পুরুষশূন্য। মহিলারাও অনেকে নেই বেশিরভাগ বাড়িতে। পুকুরপাড়ায় পুকুরের ছড়াছড়ি। আর বাকি এলাকাগুলিতে যেখানেই চোখ যাবে মাছের ভেড়ি নজরে পড়বে। প্রচুর গাছপালায় ভরা শুনসান এই সন্দেশখালিই এই মুহূর্তে ‘সুপ্ত আগ্নেয়গিরি’, যা যেকোনও সময় রুদ্ররূপ নিতে পারে।

সন্দেশখালিতে পোস্টার। নিজস্ব ছবি।
সুকমল শীল
  • সন্দেশখালি,
  • 18 Feb 2024,
  • अपडेटेड 12:19 PM IST
  • প্রচুর গাছপালায় ভরা শুনসান এই সন্দেশখালিই এই মুহূর্তে ‘সুপ্ত আগ্নেয়গিরি’।
  • যা যেকোনও সময় রুদ্ররূপ নিতে পারে।

ভরদুপুর। 'পিনড্রপ সাইলেন্স' সন্দেশখালিতে। অথচ গতকালও এখানে উত্তাল পরিস্থিতি ছিল। এখন একদম শুনসান। পাত্রপাড়া, পুকুরপাড়া প্রায় পুরুষশূন্য। মহিলারাও অনেকে নেই বেশিরভাগ বাড়িতে। পুকুরপাড়ায় পুকুরের ছড়াছড়ি। আর বাকি এলাকাগুলিতে যেখানেই চোখ যাবে মাছের ভেড়ি নজরে পড়বে। প্রচুর গাছপালায় ভরা শুনসান এই সন্দেশখালিই এই মুহূর্তে ‘সুপ্ত আগ্নেয়গিরি’, যা যেকোনও সময় রুদ্ররূপ নিতে পারে।

পাড়াগুলিতে ঢুকতেই বোঝা গেল ইতিউতি উঁকি মারছে সন্দেহের চোখ। মোড়ে মোড়ে মোতায়েন পুলিশ-সিভিক ভলান্টিয়ার। তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে আশ্বস্ত করছেন, ভয়ের কিছু নেই। কিছু বাড়িতে গিয়ে পরিস্থিতির খোঁজ নিল 'বাংলা ডট আজতক ডট ইন'।

কী অভিযোগ মহিলাদের?
সন্দেশখালি বলছে, কেড়ে নেওয়া হত জমি। সেই জমি কেটে তৈরি হত ভেড়ি। দিতে না চাইলে জোর করা হত। রাত হলে বাড়ির মহিলাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হত পার্টি অফিসে। রাতভর রেখে ভোরে ছেড়ে দেওয়া হত। কথা না শুনলে বন্ধ করে দেওয়া হত সরকারি পরিষেবা। অকথ্য অত্যাচার চলত। পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ অভিযোগ নিত না। বিডিও অফিসে গিয়েও কোনও লাভ হত না। এভাবেই দমবন্ধ করে বেঁচে ছিল সন্দেশখালি? 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা বললেন, 'বহুদিন ধরেই এই পরিস্থিতি চলছিল। আমাদের স্বামী, সন্তানদের মারধর করা হত। পুলিশে গেলে বলা হত, শিবু হাজরার কাছে যাও। উত্তম সর্দারের কাছে যাও। বিভিন্ন মিটিংয়ে আসত শাহজাহান ও তাঁর দলবল। রাত নেই দিন নেই মিটিং-মিছিলে ডাকা হত। মহিলাদেরও ডাকা হত।'

ওই মহিলা কাপড়ে মুখ ঢেকে ছিলেন। তিনি আরও বললেন, 'দিনের পর দিন মিটিং। না গেলে ছেলেপুলেকে তুলে নিয়ে যাবে। নিয়ে গিয়ে মার চালাবে। আমাদেরকেও চাপ দেওয়া হত। মিটিংয়ের কোনও টাইম নেই। রাতবিরেত যখন তখন মিটিংয়ে ডাক পড়ত মহিলাদের। রাত ১২টা পর্যন্ত মিটিং চলত। তবে যাদের হেনস্থা করা হয়েছে, তাঁদের আমি চিনি না। মাঝেমধ্যে সকালেও ছাড়া হত মিটিংয়ে নিয়ে যাওয়া মহিলাদের। আমরা শান্তি চাই।'

Advertisement

ঋষি অরবিন্দ মিশন মাঠের বিষয়ে ওই মহিলা বললেন, 'ওখানে একটা খেলার মাঠ ছিল। প্রচুর গাছপালা ছিল। সেই মাঠের গাছ কেটে শেখ শাহজাহানের নামে হয়েছে। সেই মাঠে কেউ ঢুকতে পারে না।'

পার্টি অফিসে যৌন হেনস্থা?
সন্দেশখালির আরও এক মহিলা বললেন, 'বয়স্ক মহিলাদের ডাকত না। অল্পবয়সী মেয়ে-বউদের ডাকত। পার্টি অফিসে রেখে দিত। কী মিটিং হত জানিনা। আমরা জানতে চাইতাম এত রাতে যাচ্ছিস কেন? ওরা বলত, না গেলে মারবে। কাউকে কাউকে রেখে বাকিদের বাড়ি পাঠিয়ে দিত। মেয়েরা খুব রেগে রয়েছে। তবে আমাকে কোনওদিন ডাকেনি। তাই আমি এই মহিলাদের চিনি না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা খুবই শ্রদ্ধা করতাম। কিন্তু এইসব দেখেশুনে ভক্তিটা চলে যাচ্ছে। এতদিন আন্দোলন চলছে, একবার তো আসতে পারতেন। নুরসতও আসেনি, দিদিও আসেনি।'

জমি দখল, অবৈধ ভেড়ি?
সন্দেশখালির গৃহবধূ দীপান্বিতা দাস বললেন, 'আমাদের জব কার্ডের টাকা তুলে নেয়। আমরা পাই না। জলকরে যাদের জমি রয়েছে, সেই জমি পাঁচবছরের নামে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে। মানুষ না খেয়ে থাকছে। টাকা চাইতে গেলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই শিবু হাজরা এবং শেখ শাহজাহানের গ্রেফতার চাই। তবে যেসব মহিলাদের ওপর যৌন নির্যাতন হয়েছে, তাঁদের আমি কাউকে চিনি না। বিডিও অফিস থেকে অনলাইনে কাগজ তুলে এনেছি। আমি সরকারি ঘর পেয়েছিলাম। লিস্টে আমার নামও রয়েছে। কিন্তু আমি ঘর পাইনি। বিডিও কিছু বলতে পারছেন না। পার্টির লোকজন, শেখ শাহজাহান ও শিবু হাজরা আমার ঘর আত্মসাৎ করেছে।'

শিবু হাজরার বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, 'আমার স্বামী শিবু হাজরার পোলট্রি ফার্মে কাজ করত। মুরগি মারা গেলে আমার স্বামীকে মারধর করত শিবু। দু'বার আমার স্বামীকে মারধর করা হয়েছে।' 

মেয়েদের সম্ভ্রম, জমিজমা দখল, এলাকায় ক্ষমতা কায়েম আরও অনেক অনেক অত্যাচার এত বছর সন্দেশখালি সরবেড়িয়ার মানুষ মুখ বুজে সহ্য করেছেন বলে অভিযোগ করেন। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে লাঠি, ঝাঁটা, বাঁশ নিয়ে পথে নামেন মহিলারা। পরিস্থিতি এতটাই ঘোরাল হয়ে ওঠে, পুলিশ তা সামাল দিতে হিমশিম খায়।

গোটা ঘটনায় রবিবারও বিজেপিকে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্দেশখালিতে কেউ কেউ তিলকে তাল করছেন। কোনও মহিলা এখনও এফআইআর করেননি। আমি পুলিশকে বলেছি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করতে। ইডিকে পাঠিয়েছে প্রথমে, পরে বিজেপি গিয়েছে। আগুন লাগাচ্ছে। যার যার অভিযোগ রয়েছে, অফিসার শুনবে। কারও কাছ থেকে কিছু নিলে ফেরত দেওয়া হবে। কোনও মহিলা এফআইআর করেনি। আমি পুলিশের টিম পাঠাব। যা অভিযোগ তাঁদের বলবেন।'

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement