Advertisement

Dubrajpur Kali Puja: হাড় দিয়ে মূর্তি, ভোগে পোড়া মাছ ও মদ, দুবরাজপুরের শ্মশান কালীর পুজোর রীতি গায়ে কাঁটা দেওয়া

নিঝুম রাত। শব্দ বলতে শুধু ঝিঁঝি... আর দূর থেকে ভেসে আসে কোনও কুকুরের কান্না। এমনই অন্ধকার রাতের আঁধারে দূর থেকে ভেসে আসে ঘি-তেলের প্রদীপের গন্ধ, আর মন্ত্রোচ্চারণের চাপা আওয়াজ।দুবরাজপুরের শ্মশান কালীপুজো আজও দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দী প্রাচীন কোনও এক সময়ের দ্বারপ্রান্তে।

অন্ধকার ঘরে জ্বলে শুধু দু'টি প্রদীপ। একা কাঁটার আসনে বসে পুজো করতে হয় মায়ের। (পুরোহিতের ছবিটি কাল্পনিক)
স্বপন কুমার মুখার্জি
  • দুবরাজপুর,
  • 29 Oct 2024,
  • अपडेटेड 11:33 AM IST

Kali Puja 2024: নিঝুম রাত। শব্দ বলতে শুধু ঝিঁঝি... আর দূর থেকে ভেসে আসে কোনও কুকুরের কান্না। এমনই অন্ধকার রাতের আঁধারে দূর থেকে ভেসে আসে ঘি-তেলের প্রদীপের গন্ধ, আর মন্ত্রোচ্চারণের চাপা আওয়াজ।দুবরাজপুরের শ্মশান কালীপুজো আজও দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দী প্রাচীন কোনও এক সময়ের দ্বারপ্রান্তে। সেখানে নেই টুনি লাইট, মাইকে শ্যামাসঙ্গীত, বাজির বাড়াবাড়ি। নিশিরাতে দরজা বন্ধ করে, অন্ধকার ঘরে বসে মায়ের আরাধনা করা হয়। শ্মশানের এই পুজো আর কেউ দেখতে পান না। শুধুমাত্র ঘরে জ্বলতে থাকে দু'টি প্রদীপ – একটি ঘি ও অন্যটি তেলের।

পোড়া মাছ ও মদ

শ্মশানে মা কালীকে বিশেষ ভোগ হিসেবে চ্যাং মাছ পোড়া দেওয়া হয়। সঙ্গে কারণ(মদ)। বহু শতাব্দী ধরে চলে আসা এই প্রাচীন রীতি ও ঐতিহ্যের সাক্ষী এই শ্মশান এলাকা। 

এক সময় এই এলাকা ছিল জনবসতিহীন। গভীর জঙ্গল আর শ্মশানে ঘেরা। সন্ধ্যা নামলেই শোনা যেত শিয়ালের ডাক। রাত তো দূর, দিনেও মানুষ আসতে ভয় পেত।

সময়ের সঙ্গে ছবিটা একটু বদলেছে। জনবসতি বেড়েছে। আর শ্মশান সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পাহাড়েশ্বরের অন্যদিকে। কিন্তু মা কালীর পুজোর রীতি রয়ে গিয়েছে আগের মতোই।

গঙ্গা কুণ্ডের অলৌকিকতা

দুর্গাপুজো বিসর্জনের পর দ্বাদশীর দিন এখানে একটি  ১ ফুট গভীর খাল খোঁড়া হয়। একে 'গঙ্গা কুণ্ড' বলা হয়। আশ্চর্যের বিষয় হল, এই এলাকাটা পুরোটাই পাথুরে। পাম্প গেঁথেও এখানে জল তুলতে হিমসিম খেতে হয়। অথচ, এই সময় গঙ্গাকুণ্ড অল্প খুঁড়তেই সেই নির্দিষ্ট জায়গা থেকে জল উঠতে শুরু করে।

গঙ্গাকুণ্ড

এই জল ব্যবহার করেই শ্মশানে মা কালীর মূর্তি তৈরি করা হয়। আরও অদ্ভুত বিষয়টি হল, মূর্তি তৈরি শেষ হলে গঙ্গা কুণ্ডের জল নিজে থেকেই শুকিয়ে যায়। পরে সেটিকে মাটি দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আট অঙ্গে মানুষের হাড়

শ্মশানে মায়ের মূর্তি গড়ার সময়  আট অঙ্গে শ্মশান থেকে আনা মৃত মানুষের হাড় দেওয়া হয়। 

Advertisement
মূর্তি তৈরির প্রক্রিয়া

প্রতিমা শুকানোর জন্য শ্মশানে অঙ্গার ব্যবহার করা হয়। মায়ের দু'পাশে থাকে ডাকিনি ও যোগিনী। সূর্যাস্তের আগে মায়ের চক্ষুদান করতে হয়। ত্রয়োদশীর দিন মায়ের গায়ে মাটি দিয়ে মূর্তি তৈরির কাজ শুরু হয়।

বিশেষ ভোগ এবং পুজো রীতি

এই পুজোর দায়িত্বে আছেন দাস পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা এবং মৃৎশিল্পী সাহেব দাস বৈষ্ণব জানান, তাঁদের তত্ত্বাবধানেই সারাবছর এই মন্দিরে পুজো করেন।

কাঁটার আসনে বসে এই পুজো করা হয়। এই নিশিরাতের পুজো বাইরের কেউ দেখতে পান না। তবে পুজো শেষে ভক্তরা হোম, যজ্ঞ ও আরতি দেখতে পান। শ্মশানে মা কালীকে চ্যাং মাছ পোড়া ও কারণ দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়, যা মহাপ্রসাদ হিসেবে ভক্তরা গ্রহণ করেন।

দাস পরিবারের কাছে এই আনন্দ দুর্গাপুজোর থেকেও বেশি।

দুর্গাপুজোর পরের একাদশীর দিন শ্মশানে মা কালীর বিসর্জন হয়। সেদিন দাস পরিবারের সদস্যরা মায়ের বিসর্জনের দায়িত্ব পালন করেন। এই বিশেষ দিনটিতে আত্মীয়-স্বজনরাও আসেন। উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হন দাস পরিবার। শ্মশানে মা কালীর বিসর্জন দাস পরিবারের জন্য বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব। LED আলো, সাউন্ড বক্স, শেল বাজির ভিড়ে শতাব্দী প্রাচীন এই পুজোর ঐতিহ্য আজও অমলিন।

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement