সুপ্রিম কোর্টের ডেডলাইন মেনে আজই এসএসসি মামলার রায়দান হল। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির বেঞ্চ সোমবার রায় দেন। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর অতিরিক্ত পদ তৈরি করে কোনও ব্যক্তির চাকরি বৈধ নয়। সমস্ত নিয়োগ বাতিল করল কলকাতা হাইকোর্ট। পদ্ধতি সঠিক ছিল না জানিয়ে ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল হল। আজ রায়দান হয় ৯টি ইস্যুতে। ভোটের আবহে বড়সড় ধাক্কা খেল রাজ্য।
বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির বেঞ্চ আরও জানায়, ২০১৬ সালের প্যানেলের সকলের চাকরি বাতিল হল। যারা মেয়াদ উত্তীর্ণ পদে চাকরি পেয়েছেন আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে বেতন ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। ৬ সপ্তাহের মধ্যে সেই বেতন ফেরৎ মিলেছে কিনা তা দেখার নির্দেশ। এসএসসি নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবে। যাকে প্রয়োজন তাকেই হেফাজতে নিতে পারবে সিবিআই। এই সংক্রান্ত সমস্ত তদন্ত করতে পারবে সিবিআই। ওএমআর শিট আপলোড করার নির্দেশও দেওয়া হয়।
বঙ্গ রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত বিষয়, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি। স্কুল সার্ভিস কমিশনে শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগ নিয়ে বিরাট দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বিরোধীরা বারবার নিশানা করে রাজ্যের শাসকদলকে। অন্যদিকে অযোগ্যদের চাকরি বাতিল ও যোগ্যদের নিয়োগের দাবিতে ১ হাজার ১৩৫ দিন ধরে লাগাতার আন্দোলন চলছে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে। শাসকদলের মন্ত্রী, নেতা তাঁদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজলেও, আদতে সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। সেই SSC নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আজ অর্থাত্ সোমবার রায় দিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশ বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির বেঞ্চে গত ডিসেম্বর মাস থেকে এসএসসি-র মামলাগুলির শুনানি শুরু হয়েছিল। প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে শুনানি চলেছে। গত ২০ মার্চ শুনানি শেষ হয়। তার পর রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছিল উচ্চ আদালত।
সুপ্রিম কোর্ট এসএসসি-র এই চাকরি বাতিলের মামলা হাইকোর্টে ফেরত পাঠিয়েছিল। হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শাব্বর রশিদির বেঞ্চকে ছ’মাসের মধ্যে মামলার শুনানি শেষ করে রায় ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। SSC মামলায় প্রায় ৫ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্ৰুপ-সি, গ্ৰুপ-ডি, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ২৪ হাজারের বেশি শূন্যপদের নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ, মোটা টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রি হয়েছে এসএসসি-তে।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আগেই গ্রেফতার হয়েছেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। এই মামলায় 'মিডলম্যান' প্রসন্নকুমার রায় ও প্রদীপ সিন্হাকেও গ্রেফতার করা হয়। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ও গ্রেফতার হন।
উল্লেখ্য, নবম-দশমের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ২০২২ সালের ১০ অগস্ট এসএসসির উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন প্রধান শান্তিপ্রসাদ সিনহাকে গ্রেফতার করে সিবিআই। তার আগে ৩ এপ্রিল নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হন তিনি।