গতকাল কলাইকুন্ডাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সব অভিযোগ করছেন, তা অসত্য। এই দাবি করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী অসত্য কথা বলছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করা হয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের তরফে। এটা নিন্দনীয়।'
শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, তাঁকে বিরোধী দলনেতা হিসেবে মর্যাদা দিতে চাইছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে তাঁর মমতাকে সরাসরি আক্রমণ, 'নন্দীগ্রামে আমার কাছে হেরেছেন, আপনার যন্ত্রণা আছে। একজন নন এমএল-এ মুখ্যমন্ত্রী আপনি। আমি মানুষের ভোটে জয়ী। তাই আমাকে অপমান করার অধিকার আপনার নেই।'
আজ নবান্ন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংবাদিক বৈঠক করার পরপরই বিজেপির তরফে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেন শুভেন্দু অধিকারী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সব অভিযোগ করেছেন সেগুলি মিথ্যা বলে দাবি করে তিনি বলেন, 'বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ঘূর্ণিঝড়ের আগেই ভার্চুয়াল বৈঠর করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীও কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। একাধিক নির্দেশও দিয়েছিলেন। আমরা সেই নির্দেশ পালনের চেষ্টা করেছি।'
আজ নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, বাংলার মানুষকে অপমান করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাঁকে ও মুখ্যসচিবকেও গতকালকের বৈঠকে অপমান করা হয়েছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে। মমতার অভিযোগ, তাঁকে ইচ্ছাকৃতভাবে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রাখা হয়েছিল। ৩ বার অনুরেধ করার পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান। এই নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'ঘূর্ণিঝড়ের মাত্র ৪৮ ঘণ্টার পর রাজ্যে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আকাশপথে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী কলাইকুন্ডাতে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে ঠিক করেছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল রাজ্যের প্রকৃত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা ও সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া। তিনি এর আগে ২০১৯ সালে ফণির সময় ও আম্ফানের সময়ও রাজ্যে এসেছিলেন। গতকালের সমীক্ষা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মুখ্যয়সচিব-সহ অন্য আধিকারিকরা যেভাবে প্রধানমন্ত্রীকে অ,পমান করেছেন, তার নিন্দার কোনও ভাষা নেই।'
আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, অন্য রাজ্যে রিভিউ মিটিংয়ে বিরোধী দলগুলিকে ডাকা হয় না। তাহলে পশ্চিমবঙ্গে ডাকা হল কেন? তা নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী জানান, তিনি কোস্টাল এলাকা থেকে নির্বাচিত। সেই জন্য তাঁর এলাকার মানুষের কথা জানাতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে মিটিংয়ে গিয়েছিলেন। গুজরাতে রিভিউ মিটিংয়ে বিরোধী দলকে না ডাকার যে অভিযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন, তা অসত্য বলেও দাবি করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। বলেন, 'ওড়িশাতেও বিরোধী দলনেতাকে ডাকা হয়েছিল। তবে তিনি আসতে পারেননি, শরীর খারাপ বলে। গতকাল অধীর চৌধুরীকেও ডাকা হয়েছিল। দিল্লিতে থাকায় তিনিও যোগ দেননি। অথচ মুখ্যমন্ত্রী একের পর এক অভিযোগ করছেন। যার কোনও সারবত্তা নেই।
কলাইকুন্ডাতে প্রধানমন্ত্রীর রিভিউ মিটিংয়ের কথা আগের দিন জানতে পেরেছিলেন বলে যে অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী করেছেন, সেই বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'গতকালের মিটিংয়ের ২৪ ঘণ্টা আগে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা সরকারকে জানানো হয়েছিল রিভিউ মিটিংয়ের কথা। তখন এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কর্মসূচির রিসিডিউলড করেন। কিন্তু, তিনি রিসিডিউলড অনুষ্ঠানটি ফের রিসিডিউলড করেন। এটা দায়িত্ব নিয়ে বলছি। রাত্রিবেলা যখন পিএমও থেকে জানানো হয়েছিল, কারা কারা সেই বৈঠকে থাকবেন। সেজন্য আমরা গিয়েছিলাম। অথচ বিরোধী দলনেতাকে মিটিংয়ে ডাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ১৩ মে থেকে আমি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তা মানতে চাইছেন না।'
শুভেন্দুর আরও দাবি, আকাশে ১৫-২০ মিনিট তাঁর হেলিকপ্টার চক্কর খাওয়ার যে অভিযোগ করেছেন তা মিথ্যে। শুভেন্দু এনিয়ে জানান, ১.৫৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার ল্যান্ডিংয়ের কথা ছিল। আর মুখ্যমন্ত্রীর ২টো বেজে ৪ মিনিটে।
আজকের সাংবাদিক বৈঠক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তিনি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর পায়ে ধরতেও রাজি আছেন। এই নিয়ে শুভেন্দু বলেন, 'আপনাকে প্রধানমন্ত্রীর পায়ে ধরতে হবে না। আপনি শুধু সংবিধান মেনে চলুন। আমি বিরোধী দলনেতা হিসেবে আপনাকে যেভাবে সম্মান দেব, একইভাবে আপনিও দেশের প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান দেবেন। এটাই কাম্য।'