যখন রেশন বন্টন দুর্নীতি নিয়ে গোটা রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। গ্রেফতার খোদ প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তখনই রজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, 'আমরাই ১ কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড বাতিল করেছি।'
এদিন নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছিলাম, তখন এক কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড ছিল। বামফ্রন্ট আমলে, যাঁরা বড় বড় কথা বলছেন, সেই এক কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড থাকা মানে সেই রেশনটা তাঁরা তুলতেন। সেটা কোথায় যেত তার টাকাটা? আজ পর্যন্ত তার কোনও খোঁজ হয়েছে? এই কাজটা করতে গিয়ে আমাদের ৭-৮ বছর লেগেছে মনে রাখবেন। এক কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড আমাদের সরকার বাতিল করেছে।'
আগে যে চালটা দিত, আধ ভাঙা-ভাঙা চাল
অসাধু রেশন দালালদের নিয়েও মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'অনেক দালাল মানুষের রেশন নিয়ে বাইরে বিক্রি করে দিত। তাদের বিরুদ্ধে আমরাই কেস করেছি। গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেক রেশন দোকানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে ঠিক মতো দিচ্ছে না। এক সময়ে তো ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া, আগে যে চালটা দিত, আধ ভাঙা-ভাঙা চাল সেটা বন্ধ করে দিয়েছিল। ইতিহাসটা আপনাদের জানা উচিত, আসল ঘটনাটা। আমরা বাধ্য হতাম ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার থেকে চাল কিনতে।'
এরপর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'একদিন তারা(FCI) হঠাত করে বন্ধ করে দিল। যখন বন্ধ করে দিল, রেশনিং সিস্টেম প্রায় বন্ধের মুখে পড়ে গিয়েছিল। তখনই সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, ভাঙা চাল দেওয়ার থেকে আমরা চাষিদের থেকে চাল কিনব। গত ৪-৫ বছর ধরে আমরা চালটা কৃষকদের থেকেই সংগ্রহ করছি। বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছি। চালটা আমাদের কিনতে হচ্ছে ২৩, ২৪, ২৬ টাকায়, মনে রাখবেন। কিন্তু কৃষকরা তো দাম পাচ্ছেন। তাঁদের চালটা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
অনেক রেশন দোকান বাতিলের চেষ্টা করেছি
আমরা তো অনেক রেশন দোকান বাতিল করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম নতুন লোকদের দেওয়ার জন্য। সেলফ হেল্প গ্রুপকে, পাড়ার ইয়ুথ ক্লাবকে, অনেক অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা পারিনি, কেন জানেন? কারণ আমাদের কোর্টের আদেশ মানতে হয় কখনও কখনও। কতগুলো কেস হয়েছে ফুড নিয়ে। আমরা যখনই কোনও দালালকে ধরছি তখনই কোর্টে যেতে হচ্ছে। এবং সেখানে স্বাভাবিকভাবেই... আমি বিচারকদের রায় নিয়ে কোনও কথা বলব না, কিন্তু এটা তো ফ্যাক্ট, কোর্টে লড়তে গিয়ে এবং স্থগিতাদেশ দেওয়ার ফলে ২-৩ বছর আমাদের জীবন মরণ পণ করে লড়াই করতে হয়েছে।
তা সত্ত্বেও মনে রাখবেন, কোভিডে কিন্তু একটিও লোক অনাহারে মারা যায়নি। বরং আমরা বেশি বেশি চাল দিয়েছি। তাছাড়া আমরা ১০০% ডিজিটাল রেশন কার্ড করেছি, এটা কেন্দ্রেরও প্রশংসা পেয়েছে। এটা করতে সময় লেগেছে। এটা করতে তো সময় লাগবে। ৩৪ বছরের বামফ্রন্টের কাজের তো আমরা মুখোমুখি হচ্ছে। এটা করতে তো সময় লাগে।
জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটি একটি রাজনৈতিক প্রশ্ন। দলীয়ভাবে এর যথাযথ স্থানে উত্তর দেওয়া হবে। কিন্তু এটা যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, তা আপনারাও জানেন।