বড়দিন, নতুন বছরের শুরু সবেতেই উর্দ্ধমুখী তাপমাত্রার পারদ দেখেছিল শহরবাসী। তবে এবার ফের আবহাওয়ার মেগা ভোল বদল। মঙ্গলবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার পারদ নামল আরও দেড় ডিগ্রি। এদিন শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঠান্ডা ফিরে আসায় শীতপ্রেমী মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। শহরে আরও পারদ নামবে কি? কেমন থাকবে জেলায় জেলায় আবহাওয়া? চলুন জেনে নেওয়া যাক আলপুর আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ আপডেট।
আগামী দিনে কেমন থাকবে আবহাওয়া?
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে যে, বঙ্গোপসাগর এবং বাংলাদেশ সংলগ্ন এলাকায় বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে একটি ঘূর্ণাবর্ত অবস্থান করছে। পাশাপাশি রাজ্যের পূর্ব দিক থেকে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস বঙ্গে প্রবেশ করার কারণে বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করেছে আলিপুর হাওয়া দফতর। চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত সাতটি জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলার বেশ কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে। উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে, হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দার্জিলিং জেলায়। বৃষ্টির পাশাপাশি তুষারপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে দার্জিলিঙে। বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত দার্জিলিঙে হালকা বৃষ্টিপাতের সঙ্গে তুষারপাত হতে পারে। এদিন কলকাতায় তাপমাত্রা কমলেও আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর ফের বাড়বে পারদ। তবে বাংলায় নতুন করে জাঁকিয়ে শীতের স্পেল শুরু হবে ১০ জানুয়ারি থেকে।
দার্জিলিঙে তুষারপাত, বাকি জেলায় কী খবর?
বুধবার ও বৃহস্পতিবার দার্জিলিং-এর কোনও কোনও জায়গায় বৃষ্টিপাত কিংবা তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী অন্তত ৫ থেকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত দার্জিলিং-এ এই আবহাওয়া থাকবে। এছাড়া বাকি জেলাগুলির আবহাওয়া শুকনো থাকবে। আপাতত আগামী ২৪ ঘন্টায় উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে রাতের তাপমাত্রার পরিবর্তনের কোনও পূর্বাভাস নেই। তবে তার পরে ধীরে ধীরে পরবর্তী দু'দিনে তাপমাত্রা ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। এই সময়ে আবার উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে কোথাও ঘন আবার কোথাও হাল্কা থেকে মাঝারি কুয়াশার সম্ভাবনা রয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি কতদিন?
এদিন দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা কমার পাশাপাশি বেড়েছে কুয়াশার পরিমাণও। ভোর হতেই চার দিক কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে। যদিও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার আস্তরণ সরে গিয়ে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। বুধবার সকালে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এদিন দক্ষিণবঙ্গের সবকটি জেলার আবহাওয়া শুকনো থাকবে। আগামী চব্বিশ ঘন্টায় গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে তাপমাত্রার পরিবর্তনের কোনও পূর্বাভাস নেই। তবে তার পরের দু'দিনে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলির তাপমাত্রা দুই থেকে তিন ডিগ্রি বাড়তে পারে। দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির কোথাও কোথাও হাল্কা থেকে মাঝারি কুয়াশা থাকতে পারে। তবে বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গের দুই জেলা পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া এবং শুক্রবার পাঁচ জেলা পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান ও বীরভূমের কোনও কোনও জায়গায় হাল্কা বৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং শুক্রবার পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূমের কোনও কোনও জায়গায় খুব হাল্কা বৃষ্টি হতে পারে। এই সময় বাকি জেলাগুলির আবহাওয়া শুকনো থাকবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস।
কলকাতার আবহাওয়া
আগামী ২৪ ঘন্টায় কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় আকাশ সাধারণভাবে পরিষ্কার থাকলেও ভোরের দিকে কুয়াশা থাকার সম্ভাবনা। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকতে পারে ২৩ ও ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে। এদিন শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিক বলছে হাওয়া অফিস। মঙ্গলবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিক তাপমাত্রার তুলনায় তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা সর্বোচ্চ ৯১ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৫৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘন্টায় কোথাও বৃষ্টিপাত হয়নি। হাওয়া অফিস বলছে, ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা শহরে এই পরিস্থিতি থাকবে। বৃহস্পতিবার থেকে ফের বাড়বে রাতের তাপমাত্রা। সকালে হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা ও ধোঁয়াশা থাকবে। পরে মূলত পরিষ্কার আকাশ। বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে আগামী সপ্তাহে আরও একবার শীতের স্পেল পেতে পারে কলকাতাবাসী।
কোন জেলায় কত তাপমাত্রা আজ?
আজ দার্জিলিং পার্বত্য এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, দার্জিলিং শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪.৬ ডিগ্রি। অন্যদিকে পুরুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাঁকুড়ায় ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আসানসোল (১১.৯) বহরমপুর (১১.৬), বর্ধমান (১০.০) কোচবিহার (১০.১, কালিম্পং (৯.৩) দিঘা (১২.৩), কৃষ্ণনগর (৯.৮) মালদা (১১.৬) মেদিনীপুর (১২.৫), বাগডোগরা (১০.২), সল্টলেক (১৪.৫), শ্রীনিকেতন (৯.৫)। রাজ্যের অধিকাংশ জেলাতেই এদিন সর্বনিম্ন আবহাওয়া স্বাভাবিকের থেকে কম।