অনুমতি ছাড়াই ভিডিও তোলা হয়েছে, দাবি তুললেন চোপড়ার নিগৃহীত মহিলা। গত রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় সালিশি সভায় এক মহিলা ও এক ব্যক্তিকে বেধড়ক মারধরের ভিডিও ভাইরাল হয়। এরপর স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে অভিযুক্ত তাজিমুল ওরফে জেসিবিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপরেই ভুক্তভোগী মহিলা এখন তাঁর অনুমতি ছাড়া কেন ভিডিওটি তোলা হয়েছিল, তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
মারধরের পর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল ওই মহিলাকে। আপাতত তিনি কিছুটা সুস্থ। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই মুখ খুললেন তিনি। জেসিবি-র মারধরের ঘটনায় পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। তবে তারই সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও তোলা ব্যক্তির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
'আমার ভিডিও কে ভাইরাল করেছে আমি জানি না। যে ভাইরাল করেছে তার বিরুদ্ধে আমি থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি। কেউ আমার অনুমতি ছাড়াই ভিডিওটি ভাইরাল করেছে। যারা করেছে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আমি পুলিশের কাছে আবেদন করেছি। পুলিশের উপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে,' বলেন তিনি।
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক মহিলা ও যুবককে লাঠির গোছা দিয়ে এলোপাথাড়ি মারছে এক বিশালাকায় যুবক। সঙ্গে লাথিও চলছে। আশেপাশে ঘিরে দাঁড়িয়ে গ্রামবাসীরা। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, অভিযুক্ত তাজিমুল ওরফে 'জেসিবি' চোপড়ার তৃণমূল কংগ্রেস নেতা। সেখানকার বিধায়ক হামিদুল রহমানের ঘনিষ্ঠ। যদিও হামিদুল রহমান তা অস্বীকার করেছেন।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরপরই ৩০ জুন জেসিবিকে গ্রেফতার করা হয়। স্থানীয় আদালতে হাজির করার পর তাকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
অভিযুক্তের সঙ্গে তৃণমূল সংযোগ মেলায় এই নিয়ে আসরে নেমেছে বিরোধীরা। বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে 'তালিবান শাসন' এবং 'শরিয়া আইন' চলছে বলে গুরুতর দাবি তোলেন। এমনকি বিধায়ক হামিদুল রহমানও বলে বসেন, 'মুসলিম রাষ্ট্রের আচার-বিচার রয়েছে।' যদিও ঘটনার নিন্দা করে তিনি বলেন যে 'একটু বেশি হয়ে গিয়েছে।' পরে যদিও তিনি 'মুসলিম রাষ্ট্র' শব্দ ব্যবহার করেননি বলে দাবি করেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ, পুলিশ রাজ্য সরকারের নির্দেশে কাজ করে।চোপড়া বিধায়ক হামিদুল রহমানের বিরুদ্ধেও অভিযোগের আঙুল তোলেন তিনি।
'পশ্চিমবঙ্গে তালেবানি শাসন চলছে। কোচবিহার থেকে শুরু করে চোপড়া পর্যন্ত মব লিঞ্চিং-এর ঘটনা বাড়ছে। পুলিশের সামনেই এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকবে। জনগণ পুলিশের ওপর আস্থা হারিয়েছে... এমএলএ হামিদুল রহমানের নির্দেশে এটি করা হয়েছে,' সাংবাদিকদের বলেন তিনি।
এদিকে, মঙ্গলবার দিল্লি থেকে সরাসরি শিলিগুড়িতে নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে যান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। কিন্তু নির্যাতিতা দেখা করতে চাননি। রাজ্যপাল জানান, 'নির্যাতিতা একা থাকতে চাইছেন। আমি ওনার ইচ্ছাকে সম্মান জানাই। উনি যে কোনও সময় চাইলে এসে রাজভবনে আমার সঙ্গে দেখা করতে পারেন।'
তথ্য সৌজন্যে: রাজেশ সাহা(খবরটি ইংরাজিতে পড়তে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)