মাসের ১লা তারিখেই আফগানিস্তান কেঁপে উঠল প্রবল ভূমিকম্পে। দেশের নগরহর প্রান্তরে ৬ রিখটার স্কেল মাত্রার এই জোরাল কম্পনে শয়ে শয়ে মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছ। তালিবান সরকারের মুখপাত্র জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা ৬২২। অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন। ভেঙে পড়েছে একের পর এক বহুতল। ফেটে চৌচিড় রাস্তাঘাট। চারিদিকে হাহাকার, আর্তনাদ।
জার্মান রিসার্ট সেন্ট ফর জিওসায়েন্সেসের তথ্য অনুসারে, এদিন আফগানিস্তানে জোরাল কম্পনের উৎসস্থল ছিল নগরহর শহরের ২৭ কিলোমিটার পূর্বে। গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।
আমেরিকান ভূবৈজ্ঞানিক সর্বেক্ষণ জানিয়েছে, এই কম্পনের মাত্রা রিখটার স্কেলে মধ্যম হিসেবে ধরা হলেও প্রভাব পড়েছে মারাত্মক আকারে। রবিবার রাত ১১টা ৪৭ মিনিট নাগাদ কম্পনটি অনুভূত হয়। পাকিস্তান লাগোয়া নগরহর প্রান্তের এই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে কাবুলের একাধিক বহুতলও।
নগরহর স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিক আজমল দর্বাইশ বলেন, 'মূলত জালালাবাদের আশপাশেই মৃত্যু এবং আহতের সংখ্যা সর্বাধিক। প্রথম ৬ মাত্রার কম্পনের ২০ মিনিট পর ৪.৫ মাত্রার একটি আফটারশক হয়। এরপর ফের একটি ৫.২ মাত্রার কম্পন হয়।' আফগানিস্তান হিন্দুকুশ পর্বত এলাকায় অবস্থিত। এই দেশটি বরাবরই ভূমিকম্প প্রবণ। টেকটনিক প্লেট সরে গেলেই মূলত কম্পন অনুভূত হয় আফগানিস্তানে।
তালিবান সরকার ইতিমধ্যেই জোরকদমে উদ্ধারকাজ শুরু করেছে। একাধিক ভেঙে পড়া বহুতলের ধ্বংসস্তূপের অন্দর থেকে উদ্ধার হচ্ছে একের পর এক লাশ। যদিও দুর্গম এলাকায় পৌঁছতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকারী দলকে। এদিনের কম্পন আফিগানিস্তানে ২০২৩ সালে ঘটা ৬.৩ মাত্রার কম্পনের স্মৃতি উস্কে দিয়েছে। যেখানে ৪ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। যদিও রাষ্ট্রসঙ্ঘের তরফে উল্লেখ করা হয়েছিল মৃতের সংখ্য ১৫০০।
মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্প হলেও রবিবার রাতে আফগানিস্তানে মাত্র ১০ কিলোমিটারের মধ্যে সমস্ত তছনছ হয়ে যায়। মাটির গভীরে উৎপন্ন কম্পন অনেক সময়েই বেশি প্রভাব বিস্তার করে। এবারে আফগানিস্তানেও তেমনটাই ঘটেছে বলে জানাচ্ছেন ভূবিজ্ঞানীরা।
রবিবার রাত পৌনে ১২টা নাগাদ যখন আফগানিস্তানের অধিকাংশ মানুষই ঘুমোচ্ছিলেন, প্রথম কম্পন অনুভূত হয়। তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই বহুতল ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। এই কম্পনের আকস্মিকতা কাটতে কাটতেই ২০ মিনিটের মধ্যে ফের একটি আফটারশকে কেঁপে ওঠে আফগানিস্তান। এরপর আরও একটি কম্পন অনুভূত হয়।
নগরহর প্রান্ত স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিক আজমল দর্বাইশ বলেন, 'অসংখ্য লোকের মৃত্যু হয়েছে। অধিকাংশ মৃত্যুই হয়েছে বাড়ি ভেঙে ধ্বংসস্তূপ চাপা পড়ে।' প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, জলালাবাদ এবং আশপাশের গ্রামে মাটির বাড়ির সংখ্যাই অধিক। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালগুলিকে ভর্তি করা হয়েছে। কুঁনার প্রান্তেও হাল্কা কম্পন অনুভূত হয়েছে। তবে সেখানে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আফগানিস্তানের দুর্গম ভৌগলিক অবস্থানের জন্য ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে পৌঁছতে সমস্যায় পড়ছেন উদ্ধারকারীরা।
আফগানিস্তান হিন্দুকুশ পর্বত এলাকা অবস্থিত। ফলে টেকটনিক প্লেটের সক্রিয় জোন এটি। ইন্ডিয়ান প্লেটের ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষ প্রতি বছর ৩৯ মিলিমিটার করে হয়। গত ১০ বছরে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে ১০টি ভূমিকম্প হয়েছে। যার মাত্রা রিখটার স্কেলে ৬-এর বেশি। ২০১৫ সালের ৭.৫ মাত্রার তীব্র কম্পন সবচেয়ে বেশি প্রাণঘাতি ছিল। ২০২৩ সালের ৬.৩ মাত্রার কম্পনে ১৫০০ (অফিশিয়াল) মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
আফগানিস্তানের ভূমিকম্পের জেরে পাকিস্তানের বেশ কিছু এলাকা, ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর এবং দিল্লির আশপাশের এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়েছে। আফগানিস্তানের নগরহর প্রদেশ পাকিস্তানের সীমান্ত লাগোয়া। রাজধানী কাবুল থেকে তা ২০২ কিলোমিটার দূরে। রাতের ভূমিকম্পে পাকিস্তানের কিছু এলাকা এবং উত্তর ভারতে কম্পন টের পাওয়া গিয়েছে। দিল্লি ও আশপাশের এলাকায় ভূমিকম্পের কারণে অনেকেই রাতে বাড়ি থেকে রাস্তায় নেমে গিয়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় একাধিক ভিডিও।