নৈরাজ্যের বাংলাদেশে মৃত্যুর তাণ্ডব। ভয়াবহ হিংসাত্মক ঘটনার সাম্প্রতিক নজির দেখল সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টার-এর বিল্ডিংয়ে থাকা সাংবাদিকরা। কমপক্ষে ২৮ জন সাংবাদিককে বিল্ডিংয়ের ১০ তলায় আটকে রেখেই গ্রাউন্ড ফ্লোরে আগুন লাগিয়ে মৃত্যুর উল্লাস নৃত্য করল বাংলাদেশের হিংসাত্মক জনতা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রথমে ঢাকায় কারওয়ান বাজারের কাছে প্রথম আলো পত্রিকার অফিসে হামলার ঘটনা ঘটে। ভাঙচুরের পর আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বিল্ডিংয়ে। এরপর হামলা চালানো হয় ডেইলি স্টারের অফিসেও।
ডেইলি স্টারের এক সাংবাদিক জানান, হামলার কিছুক্ষণ আগেই বাইরে থেকে একটি ফোন কল আসে, সেখানে বলা হয় একদল উন্মত্ত জনতা দ্য ডেইলি স্টারের বিল্ডিংয়েক দিকে এগিয়ে আসছে। আতঙ্কিত হয়ে সাংবাদিকরা কিছুক্ষণের মধ্যে নীচে নামার চেষ্টা করলেও, ততক্ষণে যথেষ্ট দেরি হয়ে গিয়েছে। বিল্ডিংয়ের নীচে পৌঁছে একদল জনতা ভাঙচুর শুরু করে, কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। আর উপায়ন্তর না পেয়ে ১০তলায় উঠে আসেন সাংবাদিকেরা। নীচে তখন ক্রোধন্মত্ত জনতার উল্লাস।
হিংসাত্মক এই ঘটনার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বাংলাদেশি ওয়েবসাইট বিডিনিউজ ২৪। রিপোর্ট মোতাবেক, বিক্ষোভকারীরা অফিসের নীচের অংশে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় বিল্ডিং থেকে কালো ধোঁয়া বেরিয়ে আসতে শুরু করে। ফলে সাংবাদিকরা পালাতে পারেননি।
সাংবাদিকদের দাবি, তাঁরা প্রায় ২৮ জন ১০ তলায় আটকে ছিলেন। একজন ক্যান্টিন কর্মী সিঁড়ি দিয়ে নেমে পালাতে চেষ্টা করলে তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। এরপর আর কোনও সাংবাদিক সিঁড়ি দিয়ে নামার সাহাস দেখাননি। এমনকী বেশ কিছু বিক্ষোভকারী সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠারও চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিকরা। (ছবি- ভাঙা হচ্ছে মুজিবর রহমানের ভবনের শেষাংশও)
পরে দমকল কর্মীরা আগুন নেভাতে এলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। মূলত দমকলের অতিরিক্ত সিঁড়ি ব্যবহার করেই বিল্ডিং থেকে নেমে আসেন সাংবাদিকরা। ডেইলি স্টারের এক সাংবাদিক জানান, "আমরা কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছি। জানিনা এদেশ কোথায় যাচ্ছে?"
আক্রমণের ঘটনার পর'দ্য ডেইলি স্টার'-এর নিউজরুম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কোম্পানিটি সংবাদপত্র ছাপানো ও অনলাইন এডিশন পাবলিশও বন্ধ রেখেছে। অন্যদিকে হামলা চালানো হয়েছে ছায়ানটেও। 'আল্লাহ হু আকবর' ধ্বনি তুলে বাংলাদেশের সংস্কৃতি চর্চার পীঠস্থানে রীতিমতো তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে একদল জনতা। (ছবি - ছায়ানট ভবনে তাণ্ডব)
মূলত ওসমান হাদির মৃত্যুর পরেই নতুন করে এই উত্তেজনা দেখছে বাংলাদেশ। ১২ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের নেতা উসমান হাদিকে অজ্ঞাত পরিচয় তিন ব্যক্তি গুলি করে খুন করে। আর এরপর থেকেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। আক্রমণ করা হচ্ছে হিন্দুদের উপরেও।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলাদেশের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে ময়মনসিংহের ভালুকা এলাকায় হিন্দু ধর্মের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে একদল ব্যক্তি। এমনকী খুনের পর ওই যুবকের মরদেহ গাছের সঙ্গে বেঁধে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ভালুকা থানার ডিউটি অফিসার রিপন মিয়া।