গত মে মাস থেকে লাদাখ সীমান্তে শুরু হওয়া উত্তেজনা এখনও কমেনি। একাধিকবার সেনা পর্যায়ের বৈঠকের পরেই চাপা উত্তেজনা বর্তমান। সীমান্তে এখনও মোতায়েন রয়েছে দুই পক্ষের সেনা। এর মধ্যেই নতুন করে যুদ্ধ জিগির তুললেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। কুখ্যাত পিপলস লিবারেশন আর্মিকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিলেন চিনা প্রেসিডেন্ট। জিনপিং সেনা জওয়ানদের দেশের প্রতি অনুগত থাকার নির্দেশও দিয়েছেন বলে খবর।
সম্প্রতি গুয়াংডং-এর একটি সেনা ঘাঁটিতে যান প্রেসিডেন্ট জিনপিং। সেখানেই জওয়ানদের উদ্দেশে জিনপিং বলেন, ‘সতর্ক থাকতে হবে, দেশের প্রতি অনুগত থাকতে হবে, পুরোপুরি বিশ্বস্ত থাকতে হবে।’ চিনা প্রেসিডেন্টের এই যুদ্ধের হুঁশিয়ারি ভারত না অন্য কোনও দেশের জন্য তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। কারণ লাদাখে সীমান্ত উত্তেজনার মাঝেই ক্ষিণ চিন সাগরে চিনা আধিপত্য নিয়ে বেশ কয়েকটি দেশ সরব। তাইওয়ান ও চিনের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে যুদ্ধের সম্ভাবনা।
শি জিনপিংয়ের আমলে বারবার তাইওয়ানের উপর বারবার দাদাগিরি ফলাচ্ছে বেজিং। কয়েকদিন আগেই ছোট্ট এই দ্বীপরাষ্ট্রে মার্কিন প্রতিনিধিদের সফর নিয়ে তুমুল আপত্তি জানায় চিন। সম্প্রতি তাইওয়ানের বায়ুসীমাতেও ঢুকে পড়েছিল লালফৌজের যুদ্ধবিমান। এদিকে তাইওয়ানও হুমকি দিয়েছে চিন হামলা চললে পাল্টা জবাব দেবে দেশের সেনাবাহিনী।
এদিকে লাদাখ নিয়ে ভারতের সঙ্গে চাপা উত্তেজনা বর্তমান চিনের। সদ্য সপ্তম দফার সামরিক বৈঠক হয়ে গিয়েছে দুই দেশের মধ্যে। ভারত সাফ জানিয়ে দিয়েছে, লালফৌজকে এপ্রিলের আগের অবস্থানে ফিরে যেতে হবে। কোনওভাবেই প্যাংগং হ্রদের দক্ষিণ পাড়ে পাহাড় চূড়াগুলির দখল ছাড়া হবে না। ফলে তাইওয়ানের মত জিনরিং ভারতকেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই।
প্যাংগং লেক-সহ পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা জুড়ে চিনা বাহিনীর চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ভারতীয় জওয়ানরা। সমাধান যে এখনই বেরোবে তা তা মোটামুটি নিশ্চিত। তাই লাদাখে শীত-যুদ্ধেরও প্রস্তুতি চালাচ্ছে ভারত। শীতেও সেনা মোতায়েন রাখার জন্য, প্রতিদিনই সীমান্তে রসদ পাঠানো হচ্ছে।
প্রায় ১ লক্ষের উপর ভারতীয় এবং চিনা সেনা মোতায়েন রয়েছে পূর্ব লাদেখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার দু'পাশে। শান্তিপূর্ণভাবে সেনা স্তরে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করলেও দু'দেশই তলায় তলায় সীমান্তে শক্তি বাড়াচ্ছে।
সীমান্ত সমস্যার খবর প্রথম প্রকাশ্যে আসে গত মে মাসে। এরপর ছয় মাস কেটে গেলেও সমস্যা মেটার বদলে বরং জটিল হয়েছে। এই আবহেই পিএলএ-কে হাই অ্যালার্ট থাকার নির্দেশ দিলেন শি জিনপিং।
গত ১৫ জুন মধ্যরাতে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত চরম পর্যায় পৌঁছয়। গালওয়ান উপত্যকায় চিন এবং ভারতীয় সেনার মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা সামনে আসে। ভারতের ২০ জন জওয়ান শহিদ হন। লালফৌজের দিকেও বিশাল ক্ষতি হয়। যদিও সরকারি ভাবে তা স্বীকার করেনি জিনপিং প্রশাসন।