নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলিকে বহিষ্কার করল তাঁর নিজের দল নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি। রবিবার দলের একটি অংশের বৈঠকের পর ওই ঘোষণা করা হয়। এর আগে দলের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরানো হয়েছিল ওলিকে। এ বার গেল সদস্যপদও। ফলে আরও গভীর সঙ্কটে পড়লেন ওলি।
গত বছর ২০ ডিসেম্বর সংসদ ভেঙে দিয়ে আগামী এপ্রিল এবং মে মাসে ভোটের আহ্বান জানিয়েছেন ওলি। তা নিয়ে ক্ষিপ্ত ছিল দলে তাঁর বিরোধী শিবির। ফাটল এতটাই চওড়া হয় যে ওলির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পথে নামে বিরোধী শিবির। সেই আন্দোলনের অন্যতম নেতা দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকুমার দাহাল ওরফে প্রচণ্ড।
দলের একের পর এক পদক্ষেপে এখন চাপে ওলি। তবে তিনি ভুল শুধরে নিলেও তাঁর সঙ্গে সমঝোতার কোনো জায়গা নেই বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন এনসিপি-র ওলি-বিরোধী শিবিরের আরও এক নেতা মাধব কুমার।
ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সংসদ ভেঙেছিলেন। সর্বশক্তিমান হতে একের পর এক চক্রান্ত করছিলেন নেপালের ‘কেয়ার টেকার’ প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। ফলে ক্রমাগত তাঁর বিরুদ্ধে জোরালো হচ্ছিল আন্দোলন।
তবে তারপরও নেপালের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসাবেই রয়ে গিয়েছেন কেপি শর্মা ওলি। কারণ, নেপালের নির্বাচন কমিশন এখনও শাসক দলের এই সিদ্ধান্তকে মান্যতা দেয়নি। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, কেপি ওলি গোষ্ঠী এবং পুষ্প কমল দহল-এর গোষ্ঠী - কোনও পক্ষের সিদ্ধান্তই দলীয় আইন অনুসারে নেওয়া হয়নি। তাই কমিশন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির সাম্প্রতিক পরিবর্তন আপডেট করতে পারছে না। উভয়পক্ষকেই কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচন কমিশন নেপাল কমিউনস্ট পার্টির আগের অবস্থানই ধরে রাখবে। অর্থাৎ, কমিশনের চোখে এখনও সংসদে নেপাল কমউনিস্ট পার্টির নেতা ওলিই।
প্রথম থেকেই কেপি শর্মা ওলি পরিচিত ছিলেন চিনের বন্ধু হিসাবে। বেজিং-এর অঙ্গুলি হেলনেই, ওলি একের পর এক ভারত বিরোধী সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন এবং দীর্ঘদিনের ভারত-নেপাল সুসম্পর্কের ক্রমে অবনতি ঘটেছিল। তবে গত কয়েক মাসে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে। প্রথম থেকেই ওলির ভারত বিরোধী নীতির বিরোধী ছিলেন, নেপাল কমিউনিস্ট পার্টিতে তাঁর বিরোধী পুষ্প কুমার দাহাল ওরফে প্রচণ্ড। গত ডিসেম্বর মাসে এই বিরোধ চরমে উঠেছিল।
চিন থেকে দুই পক্ষের বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু, ওলি এখন তাদের হাতের বাইরে চলে গিয়েছেন। এটা বুঝেই ওলির পাশ থেকে সরে আসে চিন। আর তাতেই তাঁর দল থেকে বহিষ্কারের পথ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওলি এখন নেপালের প্রধান বিরোধী দল নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন বলে জানা যাচ্ছে। তবে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতা এখন যার হাতে, সেই প্রচণ্ড কিন্তু, চিনের হাতের পুতুল হওয়ার বান্দা নন। আর ভারতের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।
নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম চেয়ারম্যান হলেন পুষ্পকমল দাহাল ওরফে প্রচণ্ড। আর দ্বিতীয় চেয়ারম্যান হলেন মাধব নেপাল। ২০১৭-তে সাধারণ নির্বাচনে জয়ের পরে ২০১৮-র মে মাসে ওলির সিপিএম-ইউএমএল এবং প্রচণ্ডের এনসিপি মাওয়িস্ট সেন্টার একসঙ্গে হয়ে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করে।