মহাসংকটে চিন! সেদেশের হাসপাতালগুলিতে বন্ধ হচ্ছে একের পর এক প্রসূতি বিভাগ। কারণ চিনের ক্রমহ্রাসমান জন্মহার। গত কয়েক বছর ধরে চিনের জনসংখ্যা ক্রমাগত কমছে। এখন তো সেদেশে খুব কম সংখ্যক মহিলা গর্ভবতী হচ্ছেন। যা প্রভাব ফেলছে সরকারি হাসপাতালগুলিতে।গর্ভবতীদের হাসপাকতালে না আসার কারণে হাসপাতালের উপর প্রভাব পড়ছে। ফলে খালি পড়ে থাকছে প্রসূতি বিভাগ। এই অবস্থায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগগুলি।
চিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা ডেইলি ইকোনমিক নিউজ জানিয়েছে, সেই দেশে শিশুর জন্মহার খুবই কম। সেই কারণে হাসপাতালগুলোতে 'খরা'। রয়টার্সের মতে, পূর্ব ঝেজিয়াং এবং দক্ষিণ জিয়াংসি সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের হাসপাতালগুলি ইতিমধ্যেই প্রসূতি বিভাগ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা করেছে। আবার জিয়াংজির গাঞ্জো শহরের পিপলস হাসপাতাল তার অফিসিয়াল ওয়েচ্যাট অ্যাকাউন্টে জানিয়েছে, ১১ মার্চ থেকে হাসপাতালে প্রসূতিরা আর কোনও পরিষেবা পাবেন না।
শুধু জিয়াংসিই নয়, ঝেজিয়াংয়ের ঐতিহ্যবাহী মেডিসিনের জিয়াংশান হাসপাতাল তার ঘোষণা করেছে, তাদের ডেলিভারি বিভাগ ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, WeChat চিনের একটি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। ভারতে যেমন এক্স হ্যান্ডেস বা ট্যুইটার অনেকটা তেমনই। চিনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন WeChat-এ জানিয়েছে, ২০২০ সালে হাসপাতালের সংখ্যা ৮০৭ থেকে কমে ৭৯৩ হয়েছে।
চিনা সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সেদেশে প্রতিবছর জনসংখ্যার একটি বড় অংশ প্রবীণদের ক্যাটাগরিতে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করছে। চিনের এই পরিবর্তিত জনসংখ্যার বিন্যাস সরকারের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে চিনে প্রবীণদের জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। তাদের স্বাস্থ্য পরিষেবারও বেশি প্রয়োজন।
অন্যদিকে চিনে যেহেতু জন্মহার উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে সেহেতু শ্রমবাজারের জন্য শ্রমশক্তি খুঁজে বের করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২৩ সালে চিনের জনসংখ্যা টানা দ্বিতীয়বার হ্রাস পেয়েছে। চিনের সরকারি আধিকারিকদের আশঙ্কা, এভাবে জন্মহার কমতে থাকলে সেই দেশের অর্থনীতি ক্রমশ বিপদের দিকে যাবে।
এখন প্রশ্ন কেন চিনা দম্পতিরা সন্তান চায় না? ক্যারিয়ারের দৌড়, ক্রমবর্ধমান ব্যয়, দায়িত্ব থেকে মুক্তি এবং একাকীত্ব এমন কিছু কারণে চিনের অনেক মহিলা আজকাল সন্তান ছাড়াই বাঁচতে পছন্দ করেন। চিনের এক সমীক্ষা জানিয়েছে, শিশু লালন-পালনে সব থেকে বেশি ব্যয় হয়। সেই কারণে অনেকেই এখন বিয়ে করলেও সন্তান নিতে চাইছেন না।
নানা সমীক্ষা থেকে এও জানা যাচ্ছে, চিনে লিঙ্গ বৈষম্য বেশি। তাই কর্মরত মহিলারা পেশা ছেড়ে মা হতে চান না। কারণ, চাকরি ছেড়ে সন্তান পালন করলে ক্যারিয়ারে প্রভাব পড়ে। এর বাইরে বেকারত্ব, কাজের সুযোগ কমে যাওয়া, কম বেতনের মতো কিছু কারণ রয়েছে যার কারণে মানুষ হয় কম সন্তান চায় বা একেবারেই সন্তান চায় না। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল কিছু চিনা মহিলার সাক্ষাৎকারও নিয়েছে, আর তার ভিত্তিতে তারা জানিয়েছে, সন্তান নেওয়ার মতো সম্পদ বা শক্তি নেই তাদের।
প্রসঙ্গত, এক সময় চিনে এক সন্তান নীতি ছিল। ২০১৬ সালে সেই নিয়ম শিথিল করা হয়। ২০২১ সালে চিনের সরকার ৩ সন্তান নেওয়ারও অনুমতি দেয়। তবে বাস্তবে দম্পতিরা সন্তান নিতে চাইছে না। যাতে মহিলারা সন্তান নেন সেজন্য চিন সরকারের তরফে মাতৃত্বকালীন ছুটি, আর্থিক ও ট্যাক্স সংক্রান্ত সুবিধা, বাড়ি কেনার জন্য ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। তারপরও সাফল্যের মুখ দেখছে না চিন সরকার।