নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছে আমেরিকা। দেশের ৪৭-তম রাষ্ট্রপতি হবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২০ সালে জো বাইডেনের কাছে পরাজয়ের পরে তিনি আবারও ফিরে এসেছেন। ২০১৬ সালে তিনি প্রথমবার রাষ্ট্রপতি হন। তবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ ২০১৬ থেকে একেবারেই আলাদা হতে চলেছে।
২০১৬ সালে, ট্রাম্প যখন প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে হোয়াইট হাউসে পৌঁছেছিলেন, তখনকার বৈশ্বিক পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন, এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন। এবার সম্পূর্ণ অভিজ্ঞ ট্রাম্প। এবার আগ্রাসী হয়ে সরকার পরিচালনা করতে চান। আবার এটাও বলা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটাই তাঁর শেষ মেয়াদ। তাই ট্রাম্প খুব আগ্রাসীভাবে কাজ করতে চলেছেন।
ট্রাম্প কীভাবে আরও শক্তিশালী হবেন?
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় এখন পর্যন্ত তাঁর সবচেয়ে বড় বিজয়। ২০১৫-র তুলনায় এবার তিনি তাঁর প্রতিপক্ষকে বেশি ভোটে পরাজিত করেছেন। তবে এর চেয়েও বড় প্লাস পয়েন্ট হল মার্কিন সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি মার্কিন কংগ্রেস অর্থাৎ পার্লামেন্টের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়। আমেরিকান কংগ্রেস দুই ভাগে বিভক্ত - উচ্চকক্ষ অর্থাৎ সিনেট এবং নিম্নকক্ষ অর্থাৎ প্রতিনিধি পরিষদ। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী গণনায় মার্কিন সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে রিপাবলিকান পার্টি। ১০০ সদস্যের সিনেটে রিপাবলিকানরা ৫২টি আসন পেয়েছে এবং ডেমোক্রেটিক পার্টি পেয়েছে ৪৪টি আসন। এভাবে চার বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে রিপাবলিকান পার্টি।
মার্কিন সিনেটের মতো, রিপাবলিকান পার্টিও নিম্নকক্ষ অর্থাৎ প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। এখন পর্যন্ত গণনাতে, প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান পার্টির ২০৬টি আসন রয়েছে, যেখানে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রয়েছে ১৯০টি আসন।
এটাই কি ট্রাম্পের শেষ মেয়াদ হবে?
আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী যে কোনও ব্যক্তি মাত্র দু'বার দেশsর প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন। এই অর্থে, এটি ছিল ট্রাম্পের দ্বিতীয় এবং শেষ মেয়াদ। ট্রাম্প ভালো করেই জানেন, তিনি আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। এ কারণে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প এবার বিশৃঙ্খলভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
রাজনৈতিক মহলে এমনও জল্পনা রয়েছে, ট্রাম্প সংবিধান সংশোধন করে দু'বার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার নিয়মও পরিবর্তন করতে পারেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, এটি প্রায় অসম্ভব এবং এটি ঘটলেও এটি কয়েক বছর সময় নিতে পারে এবং এটি কোনওভাবেই সহজ হবে না।
যুদ্ধের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ট্রাম্প!
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন যখন বিশ্বে নানা জায়গায় যুদ্ধ চলছে। একদিকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বহু বছর ধরে যুদ্ধ চলছে, অন্যদিকে ইজরায়েলও যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি যখন গাজায় হামাসকে টার্গেট করছেন, তখন ইরান ও লেবাননে হিজবুল্লাহর পিঠ ভাঙার চেষ্টা করছেন।
তবে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ট্রাম্প এর আগে বেশ কয়েকবার ইউক্রেনকে আমেরিকার দেওয়া অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। মনে করা হচ্ছিল, প্রেসিডেন্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ইউক্রেনকে দেওয়া সমর্থন থেকে সরে আসবেন।
একই সঙ্গে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের বন্ধুত্বের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হতে পারে বলে জল্পনা ছিল। তবে ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন যে তিনি এই যুদ্ধগুলি শেষ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করার জন্য কাজ শুরু করবেন।
ট্রাম্পের বিজয়ে ইরান ও চিন নীরব
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে ইরানেও নীরবতা বিরাজ করছে। ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরুজ্জীবিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। কিন্তু ট্রাম্পের জয় সেই আশায় ধাক্কা দিয়েছে। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করে। এছাড়া এর ওপর অনেক ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।