বদরুদ্দিন জামালউদ্দিন কাজি মদ থেকে সব সময় দূরে থাকতেন। যদিও মদ্যপের ভূমিকায় এমন অভিনয় করতেন যে, বোঝার উপায় নেই যে, তিনি এক ফোঁটা মদ পান করেননি কোনওদিন। যাঁকে দেখে বিখ্যাত অভিনেতা এবং ডিরেক্টর গুরু দত্তের (Actor Director Guru Dutt) নিজের পছন্দের স্কচের কথা মনে পড়ে যায়। গুরু দত্ত কাজিকে নতুন নাম দেন। এরপরে ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি একজন দুর্ধর্ষ অভিনেতা পান, যাঁকে গোটা পৃথিবী জনি ওয়াকার (JOHNNIE WALKER) নামে জানে। যদিও এই হুইস্কি (Whiskey) এবং বলিউডের (Bollywood) সম্পর্ক শুধুমাত্র এখানে পর্যন্তই সীমিত নয়, সিনেমার পর্দায় দেবানন্দ (Dev Anand), অমিতাভ বচ্চন (Amitav Bacchan) থেকে নিয়ে অক্ষয় কুমার (Akshay Kumar) বা অভয় দেওল (Abhay Deol) পর্যন্ত দুঃখ দূর করার জন্য জনি ওয়াকারের আশ্রয় নিয়েছেন। বলিউডে ছেড়ে দিলাম গোটা ভারতের সবচেয়ে স্বীকৃত হুইস্কি ব্র্যান্ডের মধ্যে একটি এটি। স্কটল্যান্ডের একটি ছোট এলাকায় জন্ম নেওয়া হুইস্কিতে এমন কী রয়েছে? যার নাম শুনলে যে কোন সুরাপ্রেমীদের মনের ভেতর খুশির বুদবুদ ছলকে ওঠে।
আরও পড়ুনঃ মদের চাট হিসেবে বাদাম গোটা বিশ্বে এক নম্বর পছন্দ, কিন্তু কেন জানেন?
১৮০ দেশে পৌঁছেছে জনি ওয়াকার
কোম্পানির ওয়েবসাইট অনুযায়ী জনি ওয়াকার পৃথিবীর এক নম্বর হুইস্কি এবং এর নেশা ১৮০ দেশ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। আপাতত এই মদ নির্মাতা কোম্পানি ডিয়াজিও এটি বিক্রি করে। এর বোতলে তৈরি লোগো 'দ্য ট্রেডিং ম্যান' এরও কেউ হুইস্কি কোম্পানির মতো আইকনিক তকমা হাসিল হয়েছে ১৯০৮ সালে প্রথমবার ব্যবহার হওয়ার পর এই হ্যাক করা ভদ্রলোকের রঙ রূপ সময়ে সঙ্গে বদলে গিয়েছে কোম্পানির বক্তব্য অনুযায়ী এই লোগোর বার্তা হল কিপ ওয়াকিং বা চলতে থাকুন এগিয়ে যান এই প্রেরণা থেকে জনি ওয়াকারের শহর ২০০ বছর বেশি হয়ে গিয়েছে।
কেমনভাবে শুরু হয়েছে জনি ওয়াকারের সফর?
বলিউডের অভিনেতা জনি ওয়াকারের জন্ম ১৯২৩ সালে। যদিও তারও ১ শতাব্দী আগে শুরু হয় হুইস্কি ব্র্যান্ডটি। ১৮১৯ সালে স্কটল্যান্ডের জনি ওয়াকার পিতৃহীন হন। জনি ওয়াকারের বাবা কৃষি কাজ করতেন। পরিবার খুব আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়ে। যদিও জনি ওয়াকার মধ্যে কিছু আলাদা ছিল। তিনি স্কচের তৎকালীন যে ফ্লেভার এবং টেস্ট ছিল তা পছন্দ করতেন না। এর কড়া ভাব এবং কোয়ালিটি খুব ভালো মনে হয়নি তাঁর। তিনি এরপর একাধিক সিঙ্গল মল্টকে ব্লেন্ড করে আরও ভাল ফ্লেভারওয়ালা হুইস্কি বানানোর চেষ্টা করেন। ওয়াকার বাবার মৃত্যুর পর ক্ষেত বিক্রি করে স্কটল্যান্ডের কিলমারনা এলাকায় দোকান শুরু করেন। সেখানে তিনি চেষ্টা করে ১৮২০ সালে জনি ওয়াকার হুইস্কির জন্ম দেন। এরপরে তিনি পিছনে ঘুরে আর দেখেননি।
সমুদ্রের পথে বিশ্বের ১৮০ টি দেশে পৌঁছয় জনি ওয়াকার
১৮৫৭ সালে যখন জনি ওয়াকারের মৃত্যু হয়, তখন তিনি নিজের পিছনে বিশাল সম্পত্তি এবং স্পচ হুইস্কির একটা সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার ছেড়ে যান। তাঁর ফলন্ত ব্যবসা তাঁর ছেলে আলেকজান্ডার এগিয়ে নিয়ে যান। তখন কিলমারনাকে ট্রেনের লাইন পৌঁছে গিয়েছিল। এই ট্রেনের মধ্য দিয়ে সমস্ত জিনিস তিনি বন্দর পর্যন্ত পৌঁছতেন। সেখান থেকে জাহাজে সমুদ্রের রাস্তায় গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এই মদ পাঠানো হতো। ১৮৬৭ সালে জনি ওয়াকার প্রথম কমার্শিয়াল হুইস্কি প্রোডাক্ট লঞ্চ করে যার নাম ছিল 'ওল্ড হাইল্যান্ড হুইস্কি' আলেকজান্ডার সমুদ্র সফর করা এই সমস্ত জাহাজের ক্যাপ্টেনদের নিজের এজেন্ট বানিয়ে দেন।
আরও পড়ুনঃ পাতিয়ালা 'পেগ'এর এমন নামকরণ কেন? ৩০, ৬০ স্মল ও লার্জের এমন ভাগই বা কে করেছে জানেন?
ভারতীয়দের কেন পছন্দ জনি ওয়াকার
কোম্পানির ওয়েবসাইট অনুযায়ী ভারতে জনি ওয়াকার ১৮৮৩ সালে প্রথম পৌঁছয়। অর্থাৎ ভারতের সফর প্রায় ১৪০ বছরের পুরনো, ২০১৫র একটি মিডিয়া রিপোর্টে দাবি করা হয় যে ভারতীয় ইমপোর্টেড স্কচ হুইস্কি বাজারে ৫০ শতাংশ অংশীদারিত্ব দখল করে রেখেছে, জনি ওয়াকারই। অনেকে একে ভালবেসে আংকেল জনি নামেও ডাকে। ভারতীয় সিনেমায় বারবার দেখা গেলেও জানা যায় যে এই কোম্পানি কোনও সিনেমাতেই নিজের ব্র্যান্ড প্রমোট করেনি। বরং সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমনিতেই এই বোতলের বিভিন্ন দৃশ্য সিনেমাতে ঢুকে পড়ে। কিছু লোকেরা মনে করেন যে ভারতীয়দের স্বাদগ্রন্থিতে ব্রিটিশ রাজের একটা প্রভাব রয়েছে। ব্রিটেনে যেহেতু এই হুইস্কি অত্যন্ত পছন্দের, তাই ভারতীয়রাও দীর্ঘ সময়ে ব্রিটিশ শাসনে থাকার পর এই হুইস্কিকে নিজস্ব করে নিয়েছেন। ভারতের অন্তত তিন পুরুষ জনি ওয়াকারের ব্র্যান্ডের সঙ্গে ভালভাবে পরিচিত। এই পরিস্থিতিতে এই ব্র্যান্ড ভারতে কোনও অন্য মদ কোম্পানির মোকাবিলায় সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হওয়া স্বাভাবিক।