ইজরায়েলের এবং প্যালেস্টাইনের মধ্যে সংঘর্ষ লাগাতার বেড়ে চলেছে। দুপক্ষের তরফেই বোমাবাজি চলছে। এখনও পর্যন্ত ১০০০ এর বেশি লোকের মৃত্যু হয়ে গিয়েছে এবং ৪ হাজারের বেশি লোক জখম হয়েছেন বলে খবর। এই যুদ্ধ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর এখন পৃথিবীর জন্য আরও একবার সমস্যা তৈরি করতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে ভারতীয় পেট্রোল-ডিজেলের দামের বৃদ্ধিতে দেখতে পাওয়া গিয়েছে। যদি যুদ্ধ আরও চলতে থাকে তার প্রভাব অন্যান্য দেশে কীভাবে পড়তে পারে, ভারত কিভাবে ভুক্তভোগী হতে পারে আসুন জেনে নিই।
৭০০ ইজরায়েলি, ৪৫০ প্যালেস্টানীয়র মৃত্যু
সবচেয়ে প্রথম কথা হচ্ছে যুদ্ধের টাটকা পরিস্থিতির কথা যদি বলি তাহলে জানিয়ে দিন শনিবার ইজরায়েলের একাধিক ক্ষেত্রে প্যালেস্টাইনের গ্রুপ হামাস দ্বারা আক্রমণের পর যুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ইজরায়েলও পাল্টা গাজা ঘাটিতে হামলা করেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী বলা হয়েছে যে, দুই তরফের যুদ্ধে ৭০০ ইজরায়েলি এবং ৪৫০ প্যালেস্টানীয়নের মৃত্যু হয়ে গিয়েছে। যেখানে কয়েক হাজার আরও জখম হয়ে পড়ে রয়েছেন।
কি কি সমস্যা হতে পারে ?
প্রথম ঝটকা
ইজরায়েল-হামাসের মধ্যে জারি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের খবর এখন গোটা পৃথিবীতে আলোচিত। এটি যদি চলতে থাকে তাহলে সংকট কতটা, দুঃশ্চিন্তা তৈরি করতে পারে, আসুন আমরা জেনে নিই। এই যুদ্ধের বৈশিষ্ট স্তরে যে প্রভাব পড়তে চলেছে তার প্রথম প্রভাব কাঁচা তেলের দামে বৃদ্ধিতে দেখা যাবে। শনিবার সংঘর্ষের শুরুতে তেলের দাম ৪ শতাংশের বেশি বেড়ে গিয়েছে। যাতে কাঁচা তেলের সমৃদ্ধ ক্ষেত্র থেকে সম্ভাব্য দাম বাড়তে পারে। শুরুতে এশিয়ায় ব্যবসা করা ক্রুড অয়েল ৪.৭ শতাংশ পড়ে ৮৬.৬৫ ডলার এ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ৪.৫ শতাংশ বেড়ে ৮৮.৩ ৯ ডলারে পৌঁছে গিয়েছে।
দ্বিতীয় ঝটকা
ইজরায়েল এবং ভারতের সম্পর্ক ভাল এবং তার সঙ্গে দুই দেশের ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব রয়েছে। ইজরায়েলি কোম্পানির মধ্যে ভারতে বড় ইনভেসমেন্ট করে রেখেছে। দুই দেশের মধ্যে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট এর বিষয়টি যদি নজর দেই তাহলে আর্থিক বছর ২০২২-২৩-এ ভারত ইজরায়েলে থেকে ১৪০০ থেকে বেশি আইটেম ইমপোর্ট করেছে। যার মধ্যে মুক্তা, হীরা ফার্টিলাইজার, ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেন্ট রয়েছে। যেখানে ভারত থেকে ইজরাইলে রপ্তানি করা জিনিসপত্র লিস্টও অনেক লম্বা। রিপোর্ট অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে শেষ আর্থিক বছরে ১০ আরব ডলারের কাছাকাছি ব্যবসা হয়েছে। এর মধ্যে এক্সপোর্ট ৮.৪৫ আরব ডলার এবং ইম্পোর্ট ২.৩ আরোগ ডলার করা হয়েছে। পোর্ট শিপিং সমেত একাধিক সেক্টরে ভারত এবং ইজরায়েলেরর মধ্যে ব্যবসায় একাধিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তৃতীয় ধাক্কা
ভারতীয় শেয়ার বাজারে ইজরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যে রক্তাক্ত যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তাতে সপ্তাহে প্রথম দিন স্টক মার্কেট ৪৫১ পয়েন্ট পতন হয়ে মার্কেট ক্লোজ হয়েছে। এ কারণে বিএসসি মার্কেট ক্যাপিটালিজেশন বিএসি এমক্যাপ ৩২০ লাখ কোটি টাকা কমে ৩১৬ লাখ কোটি টাকা হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ কিছু মিনিটের মধ্যে বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে লিস্ট কোম্পানিতে পয়সা লগ্নি করার জন্য ৪ লাখ কোটি টাকা ডুবে গিয়েছে।
এই যুদ্ধের মধ্যে ক্রুড অয়েলের দাম বাড়ার কারণে ভারতীয় তেল কোম্পানির শেয়ারে পতন এসেছে। বিপিসিএলের শেয়ার ২শতাংশ বেশি ভেঙে পড়েছে। সেখানে শিপিং সেক্টরে প্রভাব দেখা গিয়েছে। আদানি পোর্টের শেয়ার ৪.১৮ শতাংশ ভেঙে ৭৯৬. ০ টাকাতে পৌঁছেছে। বিশেষ বিষয় হলো যে গত সপ্তাহের শেষে ব্যবসায়িক দিনে শুক্রবার বৃদ্ধির সঙ্গে বন্ধ হয়েছে। মজবুত সেন্টিমেন্ট সত্ত্বেও বাজারে এর যুদ্ধের তৎকাল প্রভাব দেখা গিয়েছে।
গ্লোবাল ইকোনোমিতে দেখা যেতে পারে প্রভাব
এই তিন বড় ধাক্কার ছাড়াও চতুর্থ ধাক্কা হলো যে ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রভাবে ভারত সমেত গোটা দুনিয়াতে পড়তে পারে। এটি বৃদ্ধি হলে কেবল ভারত অন্যান্য দেশের এক্সপোর্ট-ইমপোর্টও প্রভাবিত হবে। কাঁচা তেলের সাপ্লাই বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে। সব মিলিয়ে এটা বলা ভুল হবে না যে, যদি যুদ্ধ লম্বা চলতে থাকে তাহলে গ্লোবাল ইকোনমিতে নেগেটিভ প্রভাব পড়বে।