ইজরায়েল বেছে বেছে হিজবুল্লার লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করছে। এদিকে হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার পর ইজরায়েলি গণমাধ্যম এখন তার উত্তরসূরি হাশেম সফিউদ্দিনকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে। জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাশেম সফিউদ্দিনকে টার্গেট করা হয়েছিল বৈরুতে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ইজরায়েলি যুদ্ধবিমান ভয়াবহ বিমান হামলা চালায়। এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল মৃত হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসারল্লাহর খুড়তুতো ভাই এবং সম্ভাব্য উত্তরসূরি হাশেম সফিউদ্দিনকে টার্গেট করা।
নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, এই ইজরায়েলি হামলাটি নাসারল্লাকে হত্যার চেয়ে অনেক বড় ছিল এবং বাঙ্কার সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। বৈরুতের দাহেহ শহরতলিতে হাশেম সফিউদ্দিনকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়। সফিউদ্দিন যখন ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে হিজবুল্লার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করছিলেন তখন এই হামলা চালানো হয়। তবে এ বিষয়ে ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বা লেবাননের হিজবুল্লার পক্ষ থেকে কোনও কিছু জানানো হয়নি।
সফিউদ্দিন কে?
১৯৮০ সালে সফিউদ্দিন হিজবুল্লায় যোগদান করেন। তিনি নাসারল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং সংগঠনে বেশ কিছু ভূমিকা পালন করতেন। একজন রাজনৈতিক, আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি হিজবুল্লার সামরিক কার্যকলাপের দায়িত্বও নেন। সফিউদ্দিনকে সাধারণত একটি কালো পাগড়ি পরতে দেখা যেত, যার অর্থ তিনি একজন সম্মানিত শিয়া ধর্মগুরু। হাশেম নিজেকে নবী মুহাম্মদের বংশধর হিসেবে পরিচয় দিতেন। ১৯৯৫ সালে হিজবুল্লার সুপ্রিম কাউন্সিল, এর পরিচালনাকারী পরামর্শদাতা পরিষদে নিয়ে আসা হয় এবং শীঘ্রই তিনি গ্রুপের জিহাদি কাউন্সিলের প্রধান নিযুক্ত হন। জিহাদি কাউন্সিল হিজবুল্লার সামরিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
মাত্র তিন বছর পর ১৯৯৮ সালে সফিউদ্দিন সংগঠনের কার্যনির্বাহী পরিষদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাচিত হন, নাসরুল্লাহর মতো তিনি ইরানে পড়াশোনা করেছিলেন। হিজবুল্লার হয়ে কাজ করার জন্য লেবাননে ফিরে আসার আগে ইরানের কোম শহরে থাকার সময় সফিউদ্দিন তেহরানের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলেন। শুধু তাই নয়, তিনি ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান মেজর জেনারেল কাসিম সুলেমানির ঘনিষ্ঠ বন্ধুও ছিলেন। ২০২০ সালে বাগদাদে একটি বিমান হামলার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সোলেইমানি নিহত হন। সফিউদ্দিনের ছেলে রেজা হাশেম সফিউদ্দিন ইরানের এক জেনারেলের মেয়ে জয়নাব সোলেইমানিকে বিয়ে করেছিলেন।
হাশেম সফিউদ্দিনকে ২০১৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করেছিল। হিজবুল্লার একজন সিনিয়র কমান্ডারকে হত্যা করেছিল ইজরায়েল। তারপরেই সাফিউদ্দিন ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। সফিউদ্দিনকে সর্বদা নাসরাল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।