ইজরায়েলকে লক্ষ্য করে একের পর এক রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস জঙ্গি গোষ্ঠী। তার পরই গাজা ভূখণ্ডে যুদ্ধের ঘোষণা করেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এই গাজা ভূখণ্ড কী? কেনই বা কয়েক দশক ধরে প্যালেস্তাইন ও ইজরায়েলের মধ্যে সংঘাত চলছে?
গাজা ভূখণ্ড কী?
ইজরায়েল, মিশর এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যে একটি ছোট অঞ্চল গাজা ভূখণ্ড, যা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। প্যালেস্তেনীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস গাজা থেকেই ইজরায়েলে হামলা চালাচ্ছে। গাজা ভূখণ্ড প্রায় ১০ কিলোমিটার প্রশস্ত এবং ৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই অঞ্চলে ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস করেন। অর্থাৎ প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে প্রায় ৫,৫০০ মানুষের বসবাস। ইজরায়েলের গড় জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৪০০ জন, যা থেকে সহজেই অনুমেয় গাজা কতটা ঘনবসতিপূর্ণ।
জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নীচে
গাজা ভূখণ্ডে বসবাসকারীরা প্যালেস্তেনীয়। আদি বাসিন্দা এবং উদ্বাস্তুরা থাকেন এখানে। ১৯৪৮ সালে ইজরায়েল প্রতিষ্ঠা এবং পরবর্তীকালে ইজরায়েলি ও প্যালেস্তেনীয়দের মধ্যে সামরিক সংঘর্ষের পর শরণার্থীরা এখানে পালিয়ে এসেছিলেন। এখানে বসবাসকারী বেশিরভাগ মানুষই উত্তরাঞ্চলে বাস করেন। বিশেষ করে গাজা শহরে। জনসংখ্যার প্রায় ৪০% এর বয়স ১৫ বছরের কম। প্যালেস্তাইনের ভূখণ্ডের মধ্যে রয়েছে গাজা উপত্যকা। আর ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক রয়েছে ইজরায়েলের অধীনে। পূর্ব জেরুজালেমের সঙ্গে ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের সীমান্তে রয়েছে ইজরায়েল, ডেড সি এবং জর্ডন। প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-এর সবচেয়ে শক্তিশালী দল ফতেহ পার্টি শাসনাধীন গাজা ভূখণ্ড। যারা ইজরায়েলের অস্তিত্বকে স্বীকার করে। পশ্চিমী দেশগুলিতে তারাই প্যালেস্তাইনের প্রতিনিধিত্ব করে।
গাজা ভূখণ্ডের ইতিহাস
প্যালেস্তাইন এবং অন্যান্য একাধিক ইসলামিক দেশ ইজরায়েলকে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। ১৯৪৭ সালে যখন রাষ্ট্রসঙ্ঘ প্যালেস্তাইনকে ইহুদি ও মুসলিমদের জন্য পৃথক দেশে বিভক্ত করে, তখনই থেকেই শুরু বিবাদ। এই বিবাদের মূল কারণ, ইজরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে মেনে না নেওয়া এবং গাজা ভূখণ্ডের অধিকার। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর আবার গাজা ভূখণ্ড দখল করে ইজরায়েল। এরপর ২৫ বছর ইজরায়েল গাজা দখলে রেখেছিল। ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বরে গাজায় ভূখণ্ডে হিংসা চরমে ওঠে। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে গাজা ভূখণ্ড থেকে সরে যায় ইজরায়েল। সেখানকার নিয়ন্ত্রণ প্যালেস্তেনীয় প্রশাসনকে (PA) হস্তান্তর করে। তবে ওই এলাকায় ইজরায়েল সেনা মোতায়েন রেখেছে।
গাজায় কার শাসন?
২০০৭ সাল থেকে গাজা জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসের কব্জায়। হামাস ইজরায়েলের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় যেতে রাজি নয়। তারা ইজরায়েলকে ধ্বংসের ডাক দিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে গাজা থেকে ইজরায়েলি ভূখণ্ডে রকেট হামলা চালাচ্ছে হামাস। তবে গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া রকেট হামলা এ যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। ২০০৭ সালে গাজা ভূখণ্ড হামাসের হাতে যাওয়ার পর থেকে সেটিকে 'শত্রু অঞ্চল' হিসেবে দেখছে ইহুদিদের দেশ। জল, স্থল ও আকাশের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করে ইজরায়েলই। ২০০৮-০৯, ২০১২, ২০১৪ এবং ২০২১ সালেও ইজরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের।
জনসংখ্যার সিংহভাগই গরিব
গাজায় ইজরায়েলি নিয়ন্ত্রণকে সমর্থন করেছে একমাত্র প্রতিবেশী দেশ মিশরও। অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতার কারণে গাজার অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। জনসংখ্যার একটা বড় অংশই গরিব। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী নাগরিকদের প্রায় ৪০% বেকার। এর দারিদ্র্য ও বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস ফুলেফেঁপে উঠেছে।
গাজায় কীভাবে সরবরাহ করা হয়?
ইজরায়েল এবং গাজার মধ্যে মানুষের চলাচলের জন্য একটি সীমানা (ইরেজ) এবং পণ্য আসা-যাওয়ার জন্য রয়েছে আর একটি সীমান্ত (কেরেম শালোম/সুফা। গাজা উপত্যকায় পণ্য বহনকারী ট্রাক পাঠায় ইজরায়েল বা মিশর। গাজায় অস্ত্র পণ্যের আমদানি-রফতানি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ইজরায়েল। যাতে কোনও অস্ত্র বা হাতিয়ার পাচার না হয়।