পাকিস্তানের মাটিতে প্রায়শই সন্ত্রসবাদী কর্মকাণ্ড চলার অভিযোগ ওঠে। সেখানেই হত্যা করা হয়েছিল ওসামা বিন লাদেনকে। এ ছাড়া এমন আরও অনেক ঘটনাই প্রমাণ করে যে ওই দেশটি বিপজ্জনক। তাছাড়া তাদের কাছে এমন অনেক অস্ত্রও রয়েছে যা ব্যাপক ধ্বংসলীলা ঘটাতে পারে। যদিও ভারতের কাছেও রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। তবে নীতি অনুযায়ী ভারত কোনওসময়ই প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র প্রয়োগের পক্ষে নয়। কিন্তু পাকিস্তান অবশ্য এই ধরনের কোনও নিয়ম নেই।
সম্প্রতি সংবাদ সংস্থা রয়টার্স স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বক্তব্য উদ্ধৃত করে জানিয়েছে যে, পাকিস্তানের কাছে ১০০ থেকে ১২০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। যা ফাইটার জেট ও মিসাইলের মাধ্যমে নিক্ষেপ করা যায়। আর ভারতের কাছে রয়েছে ৯০ থেকে ১১০টি পারমাণবিক অস্ত্র। কিন্তু ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের (FAS) মতে, পাকিস্তানের কাছে ১৬৫টি এবং ভারতের কাছে ১৬০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।
গোটা বিশ্বে ১২,৭০০ পরমাণু অস্ত্র
ফেডারেশন অফ আমেরিকান সায়েন্টিস্টস (FAS) অনুসারে, বিশ্বে ১২,৭০০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। যার মধ্যে ৯,৪০০টি সেনাবাহিনীর কাছে রয়েছে, যা ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ বা সাবমেরিন থেকে ব্যবহার করা যেতে পারে। বাকি পারমাণবিক অস্ত্রগুলি অবসরপ্রাপ্ত। তবে সেগুলি এখনও নিরাপদ, সেগুলি এখনও ভেঙে ফেলা হয়নি। বিশ্বে ৯,৪৪০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে যা বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর কাছে রয়েছে। তার মধ্যে ৩,৭৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমারু বিমানে মোতায়েন রয়েছে। তবে ভারত ও পাকিস্তান তাদের কোনও পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেনি। ৩,৭৩০টি পারমাণবিক অস্ত্রের মধ্যে প্রায় ২,০০০টি পারমাণবিক অস্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন এবং ফ্রান্সে হাই অ্যালার্টে রয়েছে। অর্থাৎ শর্ট নোটিশে সেগুলি ফায়ার করার জন্য প্রস্তুত।
পাকিস্তানের ক্ষেপনাস্ত্র
পাকিস্তানের স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র গুলি হল নাস্ত্রা, হাতফ, গজনভি এবং আবদালি। সেগুলির পাল্লা ৬০ থেকে ৩২০ কিমি। মাঝারি পাল্লার মিসাইলগুলি হল গৌরী এবং শাহীন, যেগুলির রেঞ্জ ৯০০ থেকে ২,৭০০ কিমি। এই দুটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হলে দিল্লি, জয়পুর, আহমেদাবাদ, মুম্বাই, পুনে, ভোপাল, নাগপুর, লখনউ এর অধীনে আসতে পারে। এখন সেখানে কতটা ধ্বংসলীলা হবে, তা নির্ভর করছে ক্ষেপণাস্ত্রে বসানো অস্ত্রের ওপর। প্রচলিত অস্ত্র নিক্ষেপ করলে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়। কিন্তু পারমাণবিক অস্ত্র বসানো হলে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হতে পারে।
ভারতের মিসাইলের রেঞ্জের গোটা পাকিস্তান
ভারতের কাছে রয়েছে স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পৃথ্বী। এর পরিসীমা ৩৫০ কিমি। অগ্নি-১-এর রেঞ্জ ৭০০ কিমি, অগ্নি-২ ২,০০০ কিমি এবং অগ্নি-III-এর রেঞ্জ ৩,০০০ কিমি। এগুলিকে সেনাবাহিনীতে সামিল করা হয়েছে। অগ্নি V-এর পাল্লা ৫০০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ এই ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে ভারত পাকিস্তানের সমস্ত শহরকে টার্গেট করতে পারে। ভারত যদি পাকিস্তানের ওপর পারমাণবিক বোমা ফেলে তাহলে তা রাওয়ালপিন্ডি, লাহোর, ইসলামাবাদ, নভশেরা এবং করাচি শহরগুলোকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে পারে।
ভারত-পাকিস্তানের পরমাণু নীতি
ভারত ১৯৯৯ সালে 'নো ফার্স্ট ইউজ' পরমাণু নীতি ঘোষণা করেছিল। অর্থাৎ ভারত কখনওই প্রথমে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে না। পরমাণু হামলা হলে তবেই ভারত তার পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করবে। তবে পাকিস্তানে এই ধরনের কোনও নিয়ম নেই। কখন এবং কোন পরিস্থিতিতে তারা পারমাণবিক হামলা চালাবে তা পাকিস্তানের নেতা এবং উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের উপর নির্ভর করে।
১৯৯৯ সালে, কার্গিল যুদ্ধ প্রায় ২ মাস স্থায়ী হয়েছিল। তাতে জয় পায় ভারত। তার ৩ বছর পর ২০০২ সালে জানা যায় যে পাকিস্তান সেই সময় পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছিল। সিআইএ বিশ্লেষক ব্রুস রিডল বলেছিলেন যে, ১৯৯৯ সালে মার্কিন স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গিয়েছিল যে পাকিস্তান ভারতে নিক্ষেপ করার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছে।
আরও পড়ুন - হজম ও চোখের জন্য খুবই উপকারী কাঁচা লঙ্কা, রয়েছে আরও গুণাগুণ