রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। রাশিয়া দাবি করেছে যে তারা কেবল ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে টার্গেট করবে, সেখানকার অসামরিক লোকদের নয়। কিন্তু এমন অনেক ছবি বেরিয়ে আসছে যাতে ইউক্রেনের নাগরিকদের ব্যাপক ক্ষতির কথা বলা হচ্ছে। সম্প্রতি ইউক্রেনের মারিউপোলের একটি প্রসূতি হাসপাতালে রাশিয়ার বিমান হামলার দাবি করা হয়েছে। যার মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই হামলার অনেক বেদনাদায়ক ছবিও সামনে এসেছে।
দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশ বিদেশ মন্ত্রকের ইনফরমেশন ও প্রেস বিভাগের পরিচালক মারিয়া জাখারোভাকে হাসপাতালে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি ক্ষিপ্ত হন। বলেন, এটা তথ্য চক্রান্তমূলক। তিনি ইউক্রেনের দাবিকে ভুয়ো বলেছেন। এর আগে তিনি ইউক্রেনের উপর বায়োলজিক্যাল অস্ত্র ব্যবহারের প্রস্তুতির দাবি করেছিলেন তিনি।
ব্রিটিশ মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, মারিয়া জাখারোভা হলেন মিডিয়া স্যাভি রাশিয়ান মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বিশিষ্ট মুখ, যাদের পুতিনের শাসন সম্পর্কে প্রচার করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পুরুষরা হয়তো ট্যাঙ্ক চালাচ্ছে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে প্লেন থেকে লাফ দিচ্ছে। কিন্তু নতুন এই প্রচার যুদ্ধে পুতিনের পক্ষে প্ল্যান সাজাচ্ছেন মহিলাদের এই এলটি আর্মি।
রাশিয়া কি ভেবেচিন্তে সুন্দরী নারীদের ব্যবহার করছে?
ব্রিটিশ টেলিগ্রাফ সংবাদপত্র বলছে যে এমন একটি দেশে যেখানে একঘেয়ে স্যুট পরা পুরুষরা অফিসিয়াল প্রেস ব্রিফিং করতেন। সেখানে এই গ্ল্যামারাস মহিলারা, তাদের স্টাইল, চকচকে লিপস্টিক, বিশাল চুল এবং তাদের পোশাকগুলি শীতল বাতাসের দমকানির মতো। লোকেরা জাখারোভার প্রেস ব্রিফিং পছন্দ করেন। আর ইউটিউবে এই ভিডিওতে লক্ষ লক্ষ ভিউ পাওয়া যায়।
অন্য নেতারাও নারীদের ব্যবহার করছেন
এর আগেও অনেক বিশ্বনেতা তাদের মেসেজ বহুদূরে নিয়ে যেতে স্মার্ট নারীদের নিয়োগ করেছেন। এই তালিকায় পুতিন একা নন। ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার রাজনৈতিক উপদেষ্টা কেলিয়ান কনওয়েকে এই কাজে নিয়োগ করেছিলেন। উত্তর কোরিয়ার সংবাদ পাঠিকা রি চুন-হিও অবসর গ্রহণের কয়েক দশক আগে এই কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তার উজ্জ্বল পোশাকের জন্য তাকে 'পিঙ্ক লেডি'ও বলা হত। তিনি তার দেশে ঘটতে থাকা পারমাণবিক উন্নয়ন এবং তার নেতাদের ভালো কাজের কথা বলতেন।
এই নারীরা কি কাজে দক্ষ নাকি অন্য কোনো কারণে কাজ পেয়েছেন?
প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উপদেষ্টা এবং কমিউনিকেশন কনসালটেন্ট জো ট্যানার টেলিগ্রাফের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় বলেছেন- আমি জানি না পুতিন এবং অন্য নেতারা নারীদের বেছে নিচ্ছেন বা তারা এই কাজের জন্য সেরা কিনা। এই পুরুষ নেতাদের নারী মুখপাত্র থাকার পেছনে কিছু পুরুষালি কারণ থাকতে পারে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মারিয়া জাখারোভা এবং আরটি ব্রডকাস্টার-এর প্রধান সম্পাদক মার্গারিটা সিমোনিয়ান সহ অভিজাতদের ইউরোপিয় ইউনিয়ন নিষিদ্ধ করেছে।
এই তালিকায় মারিয়া বুটিনার নামও রয়েছে। যিনি ২০১৮ সালে রাশিয়ার হয়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করতে গিয়ে ধরা পড়েন। আর এখন তিনি পুতিনের দলের সদস্য। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইউক্রেনের জনগণ নিজেদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। এছাড়া প্রাক্তন গুপ্তচর আনা চ্যাপম্যানকেও সম্প্রতি যুদ্ধে সমর্থন দিতে দেখা গেছে। একই সময়ে, রাশিয়ান পার্লামেন্টারিয়ান এবং সরকারের মুখপাত্র ভ্যালেন্টিনা মাতভিয়েঙ্কো দাবি করেছেন যে রুশ হামলাই ভাইদের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করার একমাত্র উপায়।