রাশিয়া-ইউক্রেন এবং এখন ইজরাইল-হামাস, গোটা পৃথিবীতে প্রথম থেকেই দুটি ভয়ংকর যুদ্ধের ফল ভোগ করছে। এরই মধ্যে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে পরমাণু হামলার আশঙ্কা বেড়ে গিয়েছে। আসলে রাশিয়ার সংসদে আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে বিল পাশ হয়েছে। যা কোনও দেশকে পরমাণু পরীক্ষা করা থেকে বিরত রাখে।
কমপ্রিহেন্সিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট ব্যান ট্রিটি সিটিবিটি (CTBT) অর্থাৎ ব্যাপক পরমাণু পরীক্ষা প্রতিবন্ধক চুক্তিকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য বুধবার রাশিয়ার সংসদে উচ্চকক্ষে এই বিল পেশ করা হয়েছিল। এখানে এই বিল নিম্নকক্ষের মতো নির্বিরোধী পাশ হয়ে গিয়েছে। রাশিয়ার সংসদ দুই কক্ষে এই বিল পাস হয়ে গিয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতি পুতিনের সই বাকি রয়েছে। সেটি হয়ে গেলেই এই বিল আইনে পরিণত হবে। এর সঙ্গে রাশিয়ার অফিসিয়ালভাবে পরমাণু পরীক্ষা থেকে সন্ধি থেকে বাইরে চলে আসবে।
সিটিবিটিতে কী রয়েছে?
এটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। যা মুক্তভাবে পরমাণু বিস্ফোরণের উপর প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। এর উদ্দেশ্য কোথাও কোনওভাবে পরমাণু হাতিয়ার পরীক্ষা করা যাবে না।
কোল্ডওয়ারের সঙ্গে জড়িত রয়েছে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শেষ হওয়ার পর গোটা পৃথিবী দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একপক্ষ আমেরিকার তরফে ছিল তো আরেক পক্ষ সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে। ১৯৪৫ সালের পর দুই দেশের মধ্যে কোল্ড ওয়ার শুরু হয়ে যায়। ১৯৪৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত যত পরমাণু পরীক্ষা হয়েছে এর মধ্যে ৯০ শতাংশ পরীক্ষা করেছে আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন।
পরমাণু হাতিয়ার পরীক্ষার ওপর প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার আগেও একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি ছিল। কিন্তু এটি সম্পূর্ণভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারত না। ১৯৯৬ সালের সিটিবিটি এর পরই তৈরি করা হয়।
এই চুক্তি সম্পন্নভাবে লাগু হয়নি
এই চুক্তি ১৯৯৬ সালে করা হয়। ১৮৭ দেশের প্রতিনিধিরা তাতে সই করেছে। ১৭৮ টি দেশে সংসদে এটি অনুমোদিত করা হয়। কিন্তু এখন এটি সম্পূর্ণভাবে লাগু করা সম্ভব হয়নি। আসলে এই চুক্তি অফিসিয়ালভাবে তখনই লাগু হবে যখন ৪৪ টি বিশিষ্ট দেশ অনুমোদন করবে। এর মধ্যে ৯টি পরমাণু শক্তি সম্পন্ন দেশ রয়েছে। যেখানে ৩৫টি দেশের কাছে পরমাণু রিএক্টার বা প্লান্ট রয়েছে।
পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে শুধুমাত্র ব্রিটেনে চুক্তি সম্পূর্ণভাবে লাগু করা হয়েছে। রাশিয়াতে এটি সম্পূর্ণ লাগু ছিল কিন্তু এখন তারা এ থেকে বাইরে চলে এসেছে। আমেরিকা, ইজরায়েল এবং চিন সিটিবিটিতে সই করেছিল। কিন্তু সেগুলি নিজেদের সংসদে অনুমোদন করেনি। ভারত, পাকিস্তান এবং উত্তর কোরিয়া এখনও পর্যন্ত এতে সই করেনি।
চুক্তির প্রভাব পড়ছে কি না
এই সন্ধি থেকে বেরিয়ে আসার পর গোটা দুনিয়ায় এক দিকে পরমাণু পরীক্ষার ওপর প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। ৯০ দশকের পর উত্তর কোরিয়া বাদ দিয়ে বাকি কোনও দেশ পরমাণু পরীক্ষা করেনি। উত্তর কোরিয়ার শেষবার ২০১৭ সালে নিউক্লিয়ার টেস্ট করেছিল। এই চুক্তির পরে গোটা দুনিয়াতে অবজারভেশন পোস্ট এর একটি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়। এর উপর নজর রাখার জন্য দুনিয়ার ৮৯ টি দেশের মধ্যে ৩২১ টি মনিটরিং স্টেশন এবং ১৬ টি ল্যাব স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ পোস্ট চালু করা হয়ে গিয়েছে।
এই চুক্তির বাইরে আসার উদ্দেশ্য কী?
এই চুক্তির থেকে বাইরে আসা সম্পূর্ণ অর্থ হল যে এখন এটি পরমাণু পরীক্ষা করার জন্য রাশিয়া কোনও রকমভাবে বাধ্য থাকবে না। রাশিয়ার বক্তব্য যে পরমাণু পরীক্ষা ততদিন করবে না, যতদিন আমেরিকা এটি করবে না। যদিও এক্সপার্টরা মনে করে যে রাশিয়া খুব দ্রুত পরমাণু পরীক্ষা করতে পারে। এক্সপার্টের বক্তব্য যদি এমন হয়, তাহলে আমেরিকা এবং রাশিয়ার মধ্যে পরমাণু হাতিয়ার নিয়ে লড়াই শুরু হতে পারে। একবার তা শুরু হলে অন্যান্য দেশও পরীক্ষা চালু করে দিতে পারে এবং এই পরিস্থিতিতে আরও একটি চিন্তার বিষয়, যখন রাশিয়া ইউক্রেন এবং ইসরাইল হামাসের মধ্যে লড়াই চলছে।