খোঁজ চলছিল বহুদিন ধরেই৷ বেশ কিছু প্রমাণও হাতে পাওয়া গিয়েছিল। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে হাইড্রোজেনের কিংবা গভীর খাদে মিথানল ও বরফের উপস্থিতি জানান দিয়েছিল প্রাণের উৎপত্তির অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান জলের। ন্যাশনাল এয়ারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা)-এর তরফে পাঠানো 'মিশন সোফিয়া' জলের যে প্রমাণ পাঠিয়েছে সেটিতেই এবার সিলমোহর দিল মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রটি।
আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই চাঁদে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে নাসা। সেই প্রেক্ষাপটে এই আবিষ্কার যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং চমকপ্রদ, তা অনস্বীকার্য৷ 'মিশন সোফিয়া' যে তথ্য পাঠিয়েছে সেখানে দেখা গিয়েছে পৃথিবী থেকে চাঁদের যে আলোকজ্জ্বল দিক ও গহ্বর দেখা যায় সেই সর্ববৃহৎ গহ্বরটি যার নাম ক্লেভিয়াস ক্রেটার, সেখানে জলের অণুর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবস্থান করে। নাসা জানিয়েছে এর থেকে প্রমাণ পাওয়া গেল চন্দ্রপৃষ্ঠে জলের অস্তিত্ব কেবলমাত্র একটি তলদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং অনেক এলাকাতেই ছড়িয়ে রয়েছে।
কতটা জল পাওয়া গেল চন্দ্রগহ্বরে?
নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন ক্লেভিয়াস ক্রেটার থেকে যে তথ্য তাঁদের হাতে এসেছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে ১২ আউন্স বোতল জলের সন্ধান রয়েছে। এর আগের মিশনে দেখা গিয়েছিল চাঁদের যেদিকটি অন্ধকার থাকে সেই মেরুতে কয়েক লক্ষ টন বরফ জমাট বাধা অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু আলোকজ্জ্বল দিকে জলের সন্ধান এই প্রথম। নেচার অ্যাস্ট্রোনমি জার্নালে তা প্রকাশিতও হয়। মিশন সোফিয়ার এই স্টাডি চাঁদে জলের অস্তিত্বকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল।
কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের পল হায়ানে জানান, চন্দ্রপৃষ্ঠের প্রায় ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে জল জমাট বেঁধে রয়েছে বরফ হয়ে। দুই মেরুতেই এমন চিত্র। সেখানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক নীচে, মাইনাস ১৬৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মনে করা হচ্ছে কোটি কোটি বছর ধরে সেখানেই জল বরফ হয়ে অবস্থান করছে।
এর আগে যে জলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল তা একেবারেই অপরিশোধিত। মিথানল মিশ্রিত সেই জল পান করলে মৃত্যু অবধারিত ছিল। কিন্তু চাঁদের যেদিকে সূর্যের আলো এসে পড়ে সেখানে হাইড্রেশনের খোঁজ পেলেও এতদিন জলের সন্ধান পাওয়া যায়নি৷ ২০২৪ সালে আর্টেমিস এক্সপ্লোরেশন প্রোগ্রামে চাঁদে একজন পুরুষ ও এক মহিলা পাঠাবে নাসা। সেই আবহে জলের অস্তিত্ব ও প্রাণের সন্ধানের ইঙ্গিত যে মহাকাশ গবেষণায় নতুন মাত্রা দিল তা বলাই বাহুল্য।