ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ। হামাসের হামলার কড়া জবাব দিয়েছে ইজরায়েল। হামাসের হামলায় ইজরায়েলের প্রায় ২৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১,৫০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইজরায়েলের পাল্টা হামলায় গাজা উপত্যকায় ২৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ১,৭০০ জনেরও বেশি। ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৪৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ৩,২০০ জন। শতাব্দীর সবচেয়ে বড় এই হামলার পর ইজরায়েলের গোয়েন্দা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সবচেয়ে বেশি প্রশ্নের মুখে ইজরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। এমনিতে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী, দুরন্ত গোয়েন্দা সংস্থা মনে করা হয় মোসাদকে। তাবড় দেশগুলি মোসাদের ভয়ে কাঁপে। বিশ্বজুড়ে মোসাদের গুপ্তচর ছড়িয়ে। কিন্তু নিজের দেশে হামলার আগে তার খবর দিতেই ব্যর্থ হল মোসাদ।
হামাসের সন্ত্রাসবাদীরা ইজরায়েলে এলোপাথাড়ি হামলা চালিয়েছে। ভূপৃষ্ঠ, সমুদ্র ও পথে বোমাবর্ষণ করেছে হামাস। সেনা ঘাঁটি থেকে শুরু করে জনবসতি এলাকাতে হামলা চালানো হয়েছে। এমনকি শিশু, বৃদ্ধ ও মহিলারাও রেহাই পাচ্ছেন না।
এমতাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ইজরায়েল এত বড় ভুল কীভাবে করল? হামাসের পরিকল্পিত হামলা। তা সত্ত্বে মোসাদের কাছে আগে থেকে এর খবর মিলল না কেন? শুধু মোসাদ নয়, আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা CIA-এর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইজরায়েলের কাছের বন্ধু মনে করা হয়। অনেক সময় মোসাদ ও CIA-কে যৌথ অভিযানও চালাতে দেখা গিয়েছে।
BBC-র এক সাংবাদিক ফ্রাঙ্ক গার্ডনার এই বিষয়ে এক ইজরায়েলি আধিকারিককে প্রশ্ন করেন। তিনিও এই বিষয়ে কার্যত তাঁদের ব্যর্থতার জায়গাটা স্বীকার করে নেন। তিনি জানান, এই বিষয়ে তাঁদের আগে থেকে কোনও খবর ছিল না।
এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই বলছেন, ইজরায়েল হয় তো আর আগের মতো শক্তিশালী নেই। তাদের গুপ্তচর সংস্থা এবং সেনাবাহিনী এখন আর আগের মত নেই। একটা সময় ছিল যখন মোসাদ মানেই ছিল মৃত্যু। একবার কেউ মোসাদের রাডারের আওতায় এলে তাঁর পক্ষে পালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ত। মোসাদের গুপ্তচররা বিশ্বের যে কোনও স্থান থেকে তাদের শত্রুদের খুঁজে বের করার ক্ষমতা রাখে। এই কারণেই একে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সংস্থা বলা হয়।
মোসাদের ইতিহাস ৭৪ বছরের পুরনো। এর সদর দপ্তর ইজরায়েলের তেল আবিব শহরে। মোসাদ মানে ইনস্টিটিউট ফর ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অপারেশনস। এটি ইজরায়েলের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। ১৩ ডিসেম্বর ১৯৪৯-এ 'সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউশন ফর কো-অর্ডিনেশন' হিসাবে গঠিত হয়েছিল।
ইজরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরেনার আমলে এই সংস্থা তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন রিউভেন শিলো। তাঁকে মোসাদের প্রথম পরিচালক হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়া, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা এবং রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড চালানো। এর গুপ্তচররা তাদের দেশের বাইরে শত্রুদের ছোট-বড় প্রতিটি কার্যকলাপের উপর কড়া নজরদারি চালায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদিদের গণহত্যার জন্য দায়ী জার্মান অফিসাররা এই মোসাদকেই সবচেয়ে বেশি ভয় পেত।
ছিল। মোসাদ শত শত নাৎসি অফিসারকে হত্যা করেছিল।