নিরাপদ ইলিশের বংশ বিস্তারে গত রবিবার রাত ১২টা থেকে ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত ২২ দিন বাংলাদেশে বন্ধ থাকবে ইলিশ শিকার। এ নিষেধাজ্ঞা উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর প্রায় ৯০ কিলোমিটার এলাকায় চলবে। এই সময়ে ইলিশ শিকার, বিক্রি, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয় ও সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের মৎস্য দফতর।
মৎস্য সংরক্ষণ আইনে এই ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার ভঙ্গ করলে কমপক্ষে ১ থেকে ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান।
ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান জানিয়েছেন, "এবার বড় বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়েছে অনেক। তাই আমরা আশা করছি ইলিশ প্রচুর ডিম ছাড়বে। এতে করে আগামীতে ইলিশের আশানুরূপ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।"
৩ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত বাংলাদেশের বাজারে কেনাবেচা হয়েছে ইলিশ। এরপর ইলিশ কেনার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে ২২ দিন। প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশের ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ সরকার। নিষেধাজ্ঞার আগে গত চার দিন ধরে বাংলাদেশে ইলিশের সবচেয়ে বড় বাজার চাঁদপুরের বড়স্টেশন মাছবাজারে কমে গিয়েছিল ইলিশ আমদানি।
এদিকে দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানি হচ্ছিল ইলিশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রবিবার ভারতে আরও ১৬৭ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি করা হয়। সেটাই ছিল পদ্মাপার থেকে সীমান্তের এপারে আসা শেষ ইলিশের লট।
জানা যাচ্ছে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ভারতে মোট ১ হাজার ১৩৭ মেট্রিক টন ইলিশ রফতানি হয়েছে।
বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রক দুই দফায় ১১৫ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ভারতে চার হাজার ৬০০ টন ইলিশ রফতানির অনুমতি দিলেও তা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। বেনাপোল বন্দর দিয়ে এ বছর (১১ দিনে) ভারতে ১ হাজার ১০৮ টন ইলিশ রফতানি হয়েছে।
বাংলাদেশে এবার ইলিশ উৎপাদন কম হওয়ায় সরকার অনুমোদনের চার ভাগের এক ভাগ ইলিশ রফতানি করতে পেরেছে রফতানিকারকরা। মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল কাস্টমসের কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস। তিনি জানান, এবার সরকার ১১৫ জন রফতানিকারককে ৪০ টন করে চার হাজার ৬০০ টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। যার মধ্যে থেকে ২০ জন রফতানিকারক গত ১১ দিনে ১ হাজার ১০৮ টন ইলিশ ভারতে রফতানি করেছেন।
গত বছরের তুলনায় এ বছর বাংলাদেশে নদী ও সাগরে ইলিশ কম ধরা পড়েছে। এদিকে রফতানির নির্দিষ্ট সময়ও শেষ হয়ে গেছে। ২০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের ৫২টি প্রতিষ্ঠানকে ২ হাজার ৮০ মেট্রিক টন ও ২৩ সেপ্টেম্বর ৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে ২ হাজার ৫২০ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ ভারতে রফতানির অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রফতানিকারকেরা অনুমোদনের ৪ ভাগের এক ভাগ ইলিশ ভারতে রফতানি করেছে ।
নিষেধাজ্ঞা শেষে বাকি ইলিশ রফতানি হবে কিনা সেই সম্পর্কে এখনও বাংলাদেশ সরকারের থেকে কিছু জানা যায়নি।
পদ্মার ইলিশ পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের কাছে প্রিয় হলেও দেশের চাহিদা বিবেচনায় অতীতে রফতানি বন্ধ রেখেছিল বাংলাদেশ সরকার।