scorecardresearch
 

Bangladesh Economy: সত্যিই শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া দশা হতে পারে বাংলাদেশেরও?

বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিদেশি মুদ্রার অভাব এবং নিম্নগামী দেশিয় মুদ্রা সূচকই এহেন মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে শ্রীলঙ্কায়। একই ভাবে তলানিতে এসে ঠেকেছে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারও। আন্তর্জাতিক স্তরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সহ কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির জেরে খরচ বেড়েছে বাংলাদেশেরও। গত বছর জুলাই মাস থেকে এই বছর মার্চ মাস অবধি কেবল মাত্র আমদানিতেই বাংলাদেশের খরচ বেড়েছে ৪৪%। ফলে সব মিলিয়ে বাংলাদেশের আকাশেও সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement
, সত্যি কি দেউলিয়া হওয়ার পথে বাংলাদেশও? , সত্যি কি দেউলিয়া হওয়ার পথে বাংলাদেশও?
হাইলাইটস
  • সত্যি কি দেউলিয়া হওয়ার পথে বাংলাদেশও?
  • লঙ্কাকাণ্ডে বাড়ছে উদ্বেগ
  • সত্যি কি দেউলিয়া হওয়ার পথে বাংলাদেশও?

ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। চরম দুর্দশায় পড়েছে সেদেশের  অর্থনীতি। বৈদেশিক ঋণের কিস্তি দিতে না পারায় ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছে দেশটি। অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত শ্রীলঙ্কা ৫১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ইতিমধ্যেই অপারগতা প্রকাশ করেছে  দেশটি। এই  অবস্থায় গত ১২ এপ্রিল নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। সেদেশর কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ সম্ভব নয়। যদিও শ্রীলঙ্কার ঋণ পরিশোধের ‘নিখুঁত রেকর্ড’ ছিল। জনগণের প্রচণ্ড বিক্ষোভে জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়ে সেই দেশে। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার  জনগণের  জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আমদানি করার অর্থও নেই। অর্থনৈতিক সংকট  রাজনৈতিক সংকটে রূপ নিয়েছে। এসব নিয়ে প্রচুর আলোচনা-লেখালেখি হয়েছে। এরই মধ্যে ভারতের আরও এক প্রতিবেশী দেশে নিয়ে আশঙ্কার মেঘ দেখা দিয়েছে। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, প্রতিবেশি দেশ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উদ্বেগজনক। ফুরিয়ে আসছে দেশের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার। যা মজুত রয়েছে তা দিয়ে চালানো যাবে আর মাত্র মাস কয়েকই। 

 

 

একটা সময় ছিল, যখন এশিয়ায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে শ্রীলঙ্কা ছিল রোল মডেল। তামিলদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে সৃষ্ট গৃহযুদ্ধ শ্রীলঙ্কাকে পিছিয়ে দেয় অনেক। ২৬ বছরব্যাপী এই গৃহযুদ্ধ শেষ হয় ২০০৯ সালে নির্মম সামরিক অভিযান ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের মধ্য দিয়ে। এরপর ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল দেশটি। কিন্তু সরকারের নেওয়া বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আবার নতুন সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার বর্তমান দুর্দশার জন্য বেশ কয়েকটি কারণের উল্লেখ করা হচ্ছে। বিশ্লেষণ অনুযায়ী বর্তমান অবস্থার জন্য আরও অনেক কারণের একটি হলো চিনা ঋণ। এছাড়া কৃষি ও অর্থনীতিতে সরকারের ভুল নীতি, কোভিড মহামারির কারণে তৈরি পরিস্থিতি ইত্যাদি। তবে এরসঙ্গে অনেকেই শ্রীলঙ্কায় কর্তৃত্ববাদী পারিবারিক শাসনকেও অঘটনের বড় কারণ বলে মনে করছেন।  বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিদেশি মুদ্রার অভাব এবং নিম্নগামী দেশিয় মুদ্রা সূচকই এহেন মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে শ্রীলঙ্কায়। একই ভাবে তলানিতে এসে ঠেকেছে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারও। আন্তর্জাতিক স্তরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সহ কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির জেরে খরচ বেড়েছে বাংলাদেশেরও। গত বছর জুলাই মাস থেকে এই বছর মার্চ মাস অবধি কেবল মাত্র আমদানিতেই বাংলাদেশের খরচ বেড়েছে ৪৪%। ফলে সব মিলিয়ে বাংলাদেশের আকাশেও সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

ব্যয় বিপুল পরিমাণে বাড়লেও আয় বাড়েনি সেদেশের। ফলে ভয়াবহ লোকসানের মুখে শেখ হাসিনার সরকার। এর ফলেই বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে চাপ। বিগত কয়েক মাস ধরেই ক্রমশ নিঃস্ব হয়ে আসছে ভাণ্ডার। এহেন পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশের ভাণ্ডারে জমা ডলারই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের এক সংবাদমাধ্যমের  প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বর্তমানে সেদেশে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় রয়েছে এভাবে চললে তা দিয়ে আর মাত্র মাস পাঁচেকই চালানো সম্ভব হবে। এরই মধ্যে বিশ্ব বাজারে জিনিসের দাম আরও বাড়লে আরও দ্রুত জমানো অর্থ ফুরিয়ে গিয়ে খারাপ হবে পরিস্থিতি। এহেন অবস্থায় কী অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের ভাগ্যে? এই সঙ্কট কি কাটিয়ে আবারও শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারবে বাংলাদেশের অর্থনীতি নাকি অদূর ভবিষ্যতেই আবারও এক শ্রীলঙ্কার পুনরাবৃত্তি দেখতে চলেছে বিশ্ব? তবে বাংলাদেশের জন্য একটাই আশার আলো খুঁজে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তা হল আমদানির খরচ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের রফতানি থেকেও আয় বেড়েছে সম্প্রতি।

 

 

বাংলাদেশি কাপড়, কৃষিজাত বস্তু, চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্যের চাহিদা বিদেশে বাড়ায় আয় বেড়েছে প্রতিবেশী দেশটির। বাংলাদেশের আয় ১ আরব মার্কিন ডলার অবধি পৌঁছে গিয়েছে। এছাড়া আলাদা করে পাট ও পাটজাত দ্রব্য বিদেশে রফতানি করে লাভ করছে দেশটি। হাসিনা সরকার অবস্থা সামাল দিতে আমদানির রাশ টেনে রফতানি বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। বিশেষজ্ঞদের আশা, আগামী কয়েকমাস এই প্রক্রিয়ায় সামাল দেওয়া গেলেই কাটানো যাবে সংকট পরিস্থিতি। 

পরিসংখ্যান বলছে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি
ইতিমধ্যে কোভিডের ধাক্কায় বিধ্বস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। কোভিড-১৯ এর তৃতীয় বর্ষে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৭.২৫  শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েছে  Bangladesh Bureau of Statistics (BBS)-এর তথ্য। বলা হয়েছে, করোনার সঙ্গে মোকাবিলা করে সবকিছু ধীরে ধীরে চালু করায় বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। Bangladesh Bureau of Statistics-এর তথ্য বলছে, বাংলাদেশ ২০১৮-১৯-এর আর্থিক বছরে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি দেখেছিল। সে সময় GDP বৃদ্ধি পেয়েছিল ৭.৮৮ শতাংশ। কোভিডের সময় বাংলাদেশ অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা খেয়েছিল। ২০০০ সালের পর থেকে প্রথমবারের জন্য ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি আটকে গিয়েছিল মাত্র ৩.৪৫  শতাংশে। World Bank-এর তথ্য থেকে এই পরিসংখ্যান পাওয়া গিয়েছে। সাম্প্রতিক বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের GDP দাঁড়িয়ে রয়েছে ৪৬৫ বলিয়ন ডলারে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ৪১৬  বিলিয়ন ডলার। BBS-এর পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮১৪  মার্কিন ডলার। যা কিনা গত বছরের তুলনায় ২৩৩ ডলার বেশি। 

এই অবস্থায় সেদেশের অর্থনীতিবিদার বলছেন, সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কোনোভাবে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনীয় নয়। বাংলাদেশের  বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক বেশি। বাংলাদেশের অর্থনীতির দুই স্তম্ভ হলো রেমিটেন্স এবং গার্মেন্টস। দুটোই অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বা অনুদানের প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে ৪ এপ্রিল ২০২২ এর তথ্য হিসেবে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৪.৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই বছরের শুরুর দিকে আমদানি ব্যয় কিছুটা বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক  বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে যা আমদানি ব্যয় কমানোর ক্ষেত্রে  ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় হয়েছিল ৮৩২ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। পরের মাস মার্চে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৭৭২ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ আগের মাসের তুলনায় গত মাসে ৬০ কোটি ডলার কম ব্যয় হয়েছে। আর  আমদানি ব্যয় সরকার নিজস্ব অর্থায়ন থেকেই পরিশোধ করছে যা অর্থনীতির একটি ইতিবাচক সূচক।

Advertisement

বাংলাদেশের পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার মতো কেন হবে না তার স্বপক্ষে যুক্তিও সাজান হয়েছে। চলুন সেই  কারণগুলো দেখা যাক-

শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি মূলত পর্যটননির্ভর। শ্রীলঙ্কান সরকারের রাজস্ব আয়ের ধস নেমেছে করোনার দুই বছরে। পর্যটকদের ভ্রমণ বন্ধ থাকায় কার্যত এই খাত থেকে দেশটির আয় হয়নি। অথচ পর্যটক আকৃষ্ট করতে নানা প্রকল্পে আগে নেওয়া বিপুল পরিমাণ বিদেশি ঋণের কিস্তি ঠিকই পরিশোধ করতে হয়েছে। শিল্প উৎপাদনে ধস নেমেছে, রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সও পৌঁছেছে তলানিতে। পাশাপাশি কর ও ভ্যাট কমানো, কৃষিতে রাসায়নিকের ব্যবহার শূন্যতে নামিয়ে আনার কারণে উৎপাদনের ঘাটতি, সব মিলিয়ে কিছু ভুল পরিকল্পনা আর মহামারিতে এই দশা হয়েছে দেশটির।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের অর্থনীতি কোনো একক খাতনির্ভর নয় । করোনাকালেও দেশের আর্থিক খাতগুলো সচল ছিল। খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি নেই। বাংলাদেশের রফতানিআয় ও রেমিটেন্সের পরিমাণ আশঙ্কার জায়গায় পৌঁছয়নি। বাংলাদেশের প্রধানখাদ্য আমদানি নির্ভর নয়। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৪ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। আর শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলারেরও কম। বাংলাদেশের বিদেশি ঋণও শ্রীলঙ্কার মতো মাথাপিছু এত বেশি নয়। বাংলাদেশের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ২৯২.১১ যা শ্রীলঙ্কার ১৬৫০ ডলার। পাশাপাশি জুন মাসেই পদ্মা সেতু চালু হবে বলে জানানো হয়েছে। মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ আরও কয়েকটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলও চালু হবে এ বছরই। এসব প্রকল্প চালু হলে বাংলাদেশের উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ হবে। বেড়ে যাবে মোট দেশজ উৎপাদন। 

 

 

মূলত যে কারণে শ্রীলঙ্কার আজ দেউলিয়া অবস্থা, তা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত বৈদেশিক ঋণ। ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ দ্বিগুণ হয়েছে। এর অনেকাংশই ব্যয় হয়েছে  বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে (সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ইত্যাদি), যেগুলো থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল আসেনি। বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ এখনো সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে, তবে মেগা প্রকল্পের জ্বরে আক্রান্ত বাংলাদেশও।  হাসিনা সরকারের যুক্তি,  বাংলাদেশের নেওয়া মেগাপ্রকল্প পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রো রেল, ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, গভীর সমুদ্রবন্দর, এলএনজি টার্মিনাল বাস্তবায়নের পথে, তার একটাও অপ্রয়োজনীয় নয়, সবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সঙ্গে সঙ্গে রিটার্ন আসবে। দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। কর্মসংস্থান হবে। জিডিপি  বাড়বে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের ছোট-বড় সব প্রকল্পেই কিন্তু বিশ্বব্যাঙ্ক, এডিবি, আইডিবি, জাইকাসহ অন্য উন্নয়ন সংস্থার ঋণ এবং নিজের অর্থ যোগ করে করছে। এসব সংস্থার সুদের হার খুবই কম। অনেক বছর ধরে শোধ করা যায়। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা চিনের কাছ থেকে সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট (যে দেশ টাকা দেবে, সে দেশ থেকে পণ্য কেনা) ঋণ নিয়ে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রয়োজন নেই, এমন অনেক প্রকল্পও তারা করেছে। এসব প্রকল্পের সুদের হার অনেক বেশি। সেসব ঋণ সুদে-আসলে পরিশোধ করতে গিয়েই এখন বিপদে পড়েছে শ্রীলঙ্কা।

গত জানুয়ারি মাসে মাত্র ২৭ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে শ্রীলঙ্কায়। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের মার্চ মাসের তথ্য অনুযায়ী ১৮৬ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনা মহামারির মধ্যেও ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী সোয়া কোটি বাংলাদেশি।

Advertisement

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও বাংলাদেশ রফতানি আয়ে চমক দেখিয়ে চলেছে। গত অর্থবছরে ১৭ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বৃদ্ধি হয়েছে তারও দ্বিগুণ ৩৩.৪১ শতাংশ। শ্রীলঙ্কায় রফতানি আয় তলানিতে নেমেছে। রেমিট্যান্সের অবস্থাও করুণ।

 

 

৪ এপ্রিল বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৪৪. ৪০ বিলিয়ন ডলার। আর শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলারেরও কম। গত জানুয়ারি মাস শেষে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ ছিল ২.৩৬ বিলিয়ন ডলার। অর্গানিক কৃষির নেতিবাচক প্রভাবে শ্রীলঙ্কায় সংকট বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের কৃষিতে বড় কোনো নেতিবাচক খবর নেই। বাংলাদেশে খাদ্য মজুতের পরিমাণ নিয়ে উদ্বেগ নেই। তবে এটা ঠিক শ্রীলঙ্কা থেকে বাংলাদেশেরও শেখার আছে, সতর্কতার প্রয়োজন আছে।  বাংলাদেশ অর্থনীতি বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে সে অবস্থা বজায় থাকলে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা হবে না, তা  আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নিশ্চিত করেছে।

বৈদেশিক ঋণে চিনের অবদান ৮ শতাংশ
স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে ১২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে পাওয়া গিয়েছে ৭২ বিলিয়ন আর পাইপলাইনে রয়েছে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ পরিপ্রেক্ষিতে অনেকের আশঙ্কা, বাংলাদেশের অবস্থাও শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে। তবে সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগসহ (ইআরডি) সংশ্লিষ্টরা এ আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, যে কোনো প্রকল্পের আউটকাম তথা রিটার্নের বিষয়টি মাথায় রেখেই সহজ শর্তে ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়া হয়। ফলে বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বর্তমানে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণ-জিডিপির অনুপাত ৬১ শতাংশেরও বেশি, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, কোনো একটি দেশের বৈদেশিক ঋণ-জিডিপি অনুপাতের ২০ শতাংশকে আদর্শ ধরা হয়। সেদিক থেকে জিডিপির তুলনায় বাংলাদেশের বর্তমান ঋণ ১৬ শতাংশ। ঋণের এ অনুপাতই বলছে, শ্রীলঙ্কার তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান অনেক বেশি দৃঢ় ও স্থিতিশীল। তবে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণে সরকারকে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement