কোনো রকম আলোচনা ছিল না ঢাকা সফরের। কিন্তু তিনি নিজস্ব বিমানে চেপেঢাকা গেলেন , তাও আবার মাত্র দেড় ঘন্টার জন্য। দেখা করলেন স্বয়ং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। ভারতের ধনকুবের গৌতম আদানির হঠাৎ ঢাকায় আসার খবর চাউর হতেই নানা গল্প রটতে থাকে সেইসঙ্গে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু ও হস্তান্তর বিষয়ে ধন্যবাদ জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান গৌতম আদানি গিয়েছিলেন ঢাকায়। শনিবার (১৫ জুলাই) এক সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় যান গৌতম আদানি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবনে এই সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। গতকাল বিকেলে তার সংক্ষিপ্ত ঢাকা সফর ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি ট্যুইট করে আদানি বলেন, ‘১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল গোড্ডা পাওয়ার প্ল্যান্ট পুরোদমে চালু এবং হস্তান্তর উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডা জেলায় আদানি গ্রুপের নির্মিত ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোপুরি চালু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকায় আসেন আদানি। আদানি নিজস্ব বিমানে সকাল ১০টায় ঢাকায় এসে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। বেলা সোয়া ১টার দিকে বিমানে তিনি ঢাকা ছাড়েন।
প্রসঙ্গত ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডা জেলায় আদানি গ্রুপের নির্মিত ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৮০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট আছে। প্রথম ইউনিট থেকে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয় গত মার্চে। এরপর গত ৬ এপ্রিল এটি থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। আর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ২৫ জুন রাত ১২টায়। ২০১৭ সালে আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি করে পিডিবি। চুক্তি অনুসারে আদানি গ্রুপের কোম্পানি আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনে নেবে পিডিবি। তবে উৎপাদন শুরুর আগেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লার দাম নিয়ে আপত্তি তোলে পিডিবি। এ নিয়ে আদানির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে পিডিবি। আদানির প্রতিনিধিদল প্রতিশ্রুতি দেয়, পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দামের চেয়ে তাদের কয়লার দাম বেশি হবে না। পিডিবি প্রথম তিন মাসের বিল ইতিমধ্যে জমা দিয়েছে। গত এপ্রিলে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরুর সময় আদানি গ্রুপ জানিয়েছিল, তাদের সরবরাহ করা বিদ্যুৎ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ-ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এমনকি তরল জ্বালানি উৎপাদিত ব্যয়বহুল বিদ্যুতের বদলে আদানি গ্রুপের সরবরাহ করা এই বিদ্যুৎ প্রকৃত খরচ কমিয়ে আনবে। আদানি গ্রুপের আলট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে চুক্তি করে আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড লিমিটেড। চুক্তি অনুযায়ী আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড লিমিটেড থেকে আগামী ২৫ বছর ধরে ১৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে যাবে। এর জন্য নির্দিষ্ট 400 kV ট্রান্সমিশন সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে যা কিনা বাংলাদেশ গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত।