scorecardresearch
 

Jawan Review: অ্যাকশন- আবেগে ভরপুর 'জওয়ান', কেমন হল শাহরুখের ছবি?

Jawan First Review: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ৭ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়েছে অ্যাটলি পরিচালিত, বলিউড বাদশাহ- শাহরুখ খানের নতুন প্রথম প্যান ইন্ডিয়ান ছবি 'জওয়ান'।

Advertisement
শাহরুখ খান শাহরুখ খান

শাহরুখ খানের চমকপ্রদ লুক, দুর্দান্ত অ্যাকশন, কলাকুশলী এবং সোয়্যাগ... সব মিলিয়ে 'জওয়ান'-র ট্রেলারে এমন সব কিছু ছিল, যা ভারতীয় সিনেমাপ্রেমীকে প্রেক্ষাগৃহে যেতে উৎসাহিত করে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ৭ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়েছে অ্যাটলি পরিচালিত, বলিউড বাদশাহর নতুন প্রথম প্যান ইন্ডিয়ান ছবি।

শাহরুখের কিলার লুক, অ্যাকশন দৃশ্য এবং আবেগে 'জওয়ান'-র পর্দায় যেন আগুন ধরিয়েছে রীতিমতো। তবে ছবির গল্পে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা, শুধু দর্শক হিসেবে নয়, এদেশের নাগরিক হিসেবেও আপনাকে মুগ্ধ করবে। 'জওয়ান'-র চিত্রনাট্যে প্রথম ৪৫ মিনিটে এত গল্প রয়েছে, যা বহু ছবিতে তিন ঘণ্টা কাটানোর পরেও পাওয়া যায় না।

'জওয়ান'-র গল্প

ছবির গল্প শুরু হয় ট্রেন হাইজ্যাক দিয়ে। ছিনতাইকারী (টাক লুকে শাহরুখ) ট্রেনের ৩৭৬ যাত্রীর পরিবর্তে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার দাবি জানান। তিনি কৃষিমন্ত্রীর কাছে এমন পরিমাণ চাঁদা দাবি করেন, যা সরকারের পক্ষে ৫ মিনিটের মধ্যে ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। সেই ট্রেনে একজন খুব বড় ব্যবসায়ী কালীর (বিজয় সেতুপতি) মেয়েও রয়েছে। ট্রেন ছিনতাইকারীর পরামর্শ, সরকার যখন ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে পারে, তখন ট্রেনে আটকে পড়া মানুষের জীবন বাঁচাতেও সাহায্য করতে পারবে। এই পর্বটি শেষ হলে মুক্তিপণ হিসেবে পাওয়া অর্থ দিয়ে ৭ লক্ষ কৃষকের ঋণ মকুব হয়ে যেত। ছিনতাইকারীর সঙ্গে ট্রেনে একটি মহিলার গ্রুপও রয়েছে। এদের সকলের নিজস্ব গল্প আছে।

আইনের চোখে অপরাধী এই ব্যক্তি জনসাধারণের চোখে হিরো হয়ে ওঠে। একজন আধুনিক রবিনহুড, যিনি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা লুট করে জনসাধারণকে সাহায্য করছেন। কিন্তু এই লোকটি কাজ কি সত্যি ভাল? নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনও উদ্দেশ্য?

ট্রেন ছিনতাই বন্ধ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একটি বিশেষ বাহিনীকে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন অফিসার নর্মদা রাই (নয়নতারা)। নর্মদা একজন সিঙ্গেল মাদার, কিন্তু তিনি তার মেয়ের জন্য বিয়ে করতে চান। আজাদ (শাহরুখ), একজন মহিলা কারাগারের ওয়ার্ডেন, নর্মদার জীবনে আসে। তবে আজাদের জীবনে কিছু রহস্য আছে। ট্রেন ছিনতাইকারীর সঙ্গে কি আজাদের কোনও সম্পর্ক আছে? 

Advertisement

ট্রেন ছিনতাইকারী ব্যবসায়ীর মেয়ের কানে তার নাম ফিসফিস করে বলেছিল। সব মিলিয়ে এই নামের গল্প কী? এই নাম শুনে কেন কেঁপে উঠেছিল কালী? ট্রেলারে দীপিকা পাড়ুকোনেরও একটি বিশেষ উপস্থিতি ছিল। তাদের গল্প কী? এই সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে ছবিতে।

'জওয়ান'-র বার্তা

ছবিতে অনেকগুলি সাব-প্লট আছে যা, একসঙ্গে সম্পূর্ণ গল্প তৈরি করে। এই ছোট ছোট অংশে এমন অনেক কিছু আছে যা, রোজ সংবাদপত্রে খুঁজে পাওয়া যায়। ঋণে জর্জরিত কৃষকদের আত্মহত্যা, মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে খেলা, নির্ভয়ে শিল্প-কারখানা চলতে দেওয়া, জীবন ও পরিবেশকে বিষাক্ত করা। গল্পে দুর্নীতির মাত্রা দেখানো হয়েছে যেখানে দুর্বল অস্ত্রধারী সেনা সৈন্যরা শত্রুদের সামনে নির্দোষভাবে প্রাণ হারায়। নর্মদার গল্পের পাশাপাশি অন্যান্য নারী চরিত্রগুলি তাদের অসহায় দেখানোর পরিবর্তে তাদের খুব শক্তিশালী করে তোলে।

শাহরুখের চরিত্রগুলিকে অ্যাটলি তাঁর ট্রেডমার্ক স্টাইলে পর্দায় দুর্দান্ত উপস্থিতি দিয়েছেন। অনিরুদ্ধ রবিচন্দরের প্রাণবন্ত সঙ্গীতের মাধ্যমে এই চরিত্রগুলি এমন উচ্চতা পায় যা, নায়ককে শুধু বাস্তবের চেয়ে বড় করে না, সিনেমার পর্দার চেয়েও বড় করে তোলে।

ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অল্প অল্প করে শাহরুখের অ্যাকশন দৃশ্য দেখতে পাওয়া যাবে। ছবির একেবারে শুরুতে ১০ মিনিটের একটি সিকোয়েন্স রয়েছে, যেখানে গল্পের নায়ককে সুপারহিরো হিসেবে বিবেচনা মনে করা হয়। অ্যাকশন দৃশ্যে দারুণভাবে যোদ্ধা দক্ষতা প্রদর্শন করে। প্রতিটি অ্যাকশন দৃশ্য, একজন ডাই-হার্ড অ্যাকশন প্রেমিক, দর্শকের জন্য একটি বড় পাওনা।

'জওয়ান' একটি ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটের ছবি। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় চলার পরও কোথাও মনে হয় না কিছু অর্থহীন। কিন্তু গল্পের মধ্যে অনেক মজার উপাদান একসঙ্গে থাকায়, মনে হতে পারে ছবিটি খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আজাদের ছোটবেলার গল্পের একটি দৃশ্যে যখন ছবিটি থেমে যায়, তখন আপনি আবেগপ্রবণ হতে পারেন। 

'জওয়ান'-র ক্লাইম্যাক্স আরও একটু ভাল হতে পারত। অ্যাকশন এবং স্যোয়াগ রয়েছে দৃশ্যে। কিন্তু চরিত্রগুলির পটভূমির উপর ভিত্তি করে, 'জওয়ান' যে আবেগপূর্ণ সমাপ্তি দেওয়া উচিত ছিল, তার থেকে কিছুটা কম পড়ে।

স্পেশাল অফিসারের ভূমিকায় নয়নতারা নিখুঁত অভিনয় করেছেন। এই চরিত্রে তিনি যতটা শক্তিশালী, গল্পের দাবিতে তিনি ক্ষণিকের জন্য তত বেশি দুর্বল হয়ে পড়েন। দেশের সেরা অভিনেতাদের তালিকায় কেন তাঁর নাম মাথায় আসে, তা আবারও দেখালেন বিজয় সেতুপতি।

'জওয়ান'-এ সহ অভিনেতাদের অভিনয় যথেষ্ট শক্তিশালী। লাহার খান, সানিয়া মালহোত্রা, প্রিয়মনি, ঋদ্ধি ডোগরাও, সুনীল গ্রোভাররা সাবলীল। যদিও গল্পে সুনীলের চরিত্রটি আরও কিছুটা দেখতে পেলে বেশি মজা হত।

'জওয়ান' চিত্রনাট্য গোছানো। যা বলার চেষ্টা করা হয়েছিল, ছবিটি অনেকাংশে কার্যকরভাবে বলতে সফল হয়। তবে শাহরুখ সেরা সিনেমাটিক মুহূর্ত নিয়ে এসেছেন এই ছবিতে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এটি এমন একটি ছবি যা, প্রতি ১০- ১৫ মিনিটে করতালি এবং শিস পেতে পারে প্রেক্ষাগৃহে।

 

Advertisement