দোলনায় দোল খাওয়াতে খাওয়াতে বাবা-মা এক শিশুর নাম রাখলেন। গতরাতে এলাকায় চুরি করতে আসা এক চোরের নাম ছিল। কাট টু... পরের দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া এক জওয়ানকে সেনা অফিসার তার নাম জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু নতুন ছেলেটি তার নিজের পদবী ভুলে যায়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোর্খা রেজিমেন্ট এই ছেলেটি তার অফিসারের নাম বলে – স্যাম বাহাদুর। যে নাম ভারতের ইতিহাসে চির অমর হয়ে থাকবেন। দেশের প্রথম ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশর (Sam Manekshaw) জীবনকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে পর্দায় তুলে ধরেছেন পরিচালক মেঘনা গুলজার (Meghna Gulzar)।
বলা যায়, 'স্যাম বাহাদুর' (Sam Bahadur) একটি দেশের স্বাধীনতার প্রথম নিঃশ্বাস নেওয়ার গল্প। এই গল্প বলার মধ্যে ঝুঁকি ছিল… এটা পুরনো দিনের গল্প, যেখানে রাজনীতির ছোঁয়াও আছে। এর উপরে দেশাত্মবোধক স্লোগান ও রাজনৈতিক ঘরানার ছবি বেশ কিছুদিন ধরেই বাড়ছে। দেশের স্বাধীনতা, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ সৃষ্টি, ভারতের অনেক বড় ঘটনার সাক্ষে ছিলেন স্যাম। তবে মেঘনা মূলত স্যামের জীবনের উপর ভিত্তি করে এই ঘটনাগুলি আঁকেন।
এর পাশাপাশি আরও একটি প্রশংসনীয় বিষয় হল, বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা। ভারতের সৈন্যরা কীভাবে বর্তমানে দুই দেশের সেনাবাহিনীতে বিভক্ত, সেই গল্প গেঁথেছেন পরিচালক। দুই বন্ধু, যারা গতকাল পর্যন্ত ব্যারাকে বসে গল্প করছিল, তাঁদের হঠাৎ সীমান্তের দুই পারে দাঁড়িয়ে একে অপরের সঙ্গে দেখা হয় আজ শত্রু হয়ে...এরকম একাধিক আবেগপ্রবণ মুহূর্ত ফুটে উঠেছে গল্পে। ভাল সিনেমাটোগ্রাফি, যুগের সঙ্গে মানানসই প্রোডাকশন ডিজাইন, ৬০- ৭০ বছরের পুরনো গল্পের একটি খাঁটি অনুভূতি এবং ভাল আলোর মতো প্রযুক্তিগত বিষয়গুলি ছবিতে যথেষ্ট শক্তিশালী।
ভিকি কৌশল (Vicky Kaushal) দুর্দান্তভাবে স্যামের চরিত্রটিকে তাঁর আসল রঙে চিত্রিত করেছেন। তিনি এতটাই নিখুঁত কাজ করেছেন যে, দর্শকের চোখ পর্দায় আটকে থাকতে বাধ্য এবং খুব কম কোনও ভুল ধরা সম্ভব হয়। 'স্যাম মানেকশ'ও তাঁর প্রতিভার নতুন প্রকাশ। ছবির চিত্রনাট্য ও গল্পের বাঁধনী শক্ত। ভিকির ছাড়াও সিলু মানেকশর ভূমিকায় সানিয়া মালহোত্রা ভাল কাজ করেছেন। ইন্দিরা গান্ধীর চরিত্রে ফাতিমা সানা শেখ, ইয়াহিয়া খানের চরিত্রে মোহাম্মদ জিশান আইয়ুব, জওহরলাল নেহরুর চরিত্রে নীরজ কবি এবং সর্দার প্যাটেলের ভূমিকায় গোবিন্দ নামদেব- প্রত্যেকের কাজ ছবিটিকে আরও একধাপ এগিয়ে দিয়েছে।
'স্যাম বাহাদুর' আড়াই ঘণ্টার একটি ছবি। তবে কীভাবে সময়টা কেটে যাবে, তা দর্শক বুঝতেই পারবেন না। প্রথমার্ধে ছবিতে দেখা যায় স্যামের জীবনের অংশ। যা, কিছুটা দ্রুত গতিতে চলে। বিরতির পরে ছবির গতি কিছুটা কমতে শুরু করে। 'বাড়তে রহো' গানের মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন রেজিমেন্টের যুদ্ধের আর্তনাদ শোনা যায়। কিংবদন্তি গীতিকার গুলজারের লেখা এই গানটি শুনলেই গায়ে কাঁটা দেয়।
ছবির ক্লাইম্যাক্স আরেকটু এনার্জিতে ভরপুর হতে পারত। কিছু চরিত্রের প্রস্থেটিক মেকআপ কিছুটা বেমানান। ছবির আরও একটি ছোট ত্রুটি হল, স্যামের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগের দিনগুলি। আরও একটু সবিস্তারে দেখানো যেত। তবে 'স্যাম বাহাদুর' প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখলে, আপনার টিকিটে খরচ জলে যাবে না।