তখনও দেশভাগ হয়নি। অবিভক্ত ভারতবর্ষে তখন ব্রিটিশ শাসন। ঠিক সেই সময় ১৯২২-এর ২৭ জুলাই তৎকালীন পূর্ববঙ্গ তথা অধুনা বাংলাদেশের সিলেট জেলার সুনামগঞ্জে জন্ম তাঁর। ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের কাছে গ্রামবাংলার গান, অর্থাৎ লোকগীতি পল্লীগীতির চর্চা শুরু। পরবর্তী সময়ে ময়মনসিংহের আবদুল মজিদ ও আবদুল রহিমের কাছে শুরু করেন লোকসঙ্গীত ও লোকবাদ্যের তালিম। তারপর শান্তিনিকেতনে অশোকবিজয় রাহার কাছে নেন রবীন্দ্রসঙ্গীতের শিক্ষা। যদিও একসময় বাংলা তথা গোটা দেশ, এমনকী দেশের বাইরের শ্রোতারাও তাঁর লোকগানের ভক্ত হয়ে ওঠেন। তিনি নির্মলেন্দু চৌধুরী।
সুরসৃষ্টি ও অভিনয়েও ছিলেন দক্ষ
বাংলার লোকগানকে দীর্ঘ একটা সময় ধরে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন নির্মলেন্দু চৌধুরী। তাঁর উদাত্ত কণ্ঠে মাটির সুর মন জয় করত শ্রোতা ও দর্শকদের। বিশেষত নির্মলেন্দু চৌধুরীর গলায় ভাটিয়ায়ী গান চোখে জল এনে দিত শ্রোতাদের। শোনা যায় তাঁর গানের ভক্ত ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুও। এমনকী জওহরলাল নেহেরু নাকি তাঁর কাছে কয়েকটি বাংলা লোকগানও শিখেছিলেন। আর শুধু গান গাওয়াই নয়, সুরসৃষ্টি এমনকী অভিনয় জগতেও নিজের কৃতিত্বের পরিচয় দেন নির্মলেন্দু চৌধুরী।
খেলাধূলা ও শিকারেও ছিলেন পারদর্শী
এতো গেল সঙ্গীতক্ষেত্র। নির্মলেন্দু চৌধুরীর আরও একটি পরিচয়, তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। শোনা যায় ম্যাট্রিক পাশ করার পরেই নাকি রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কাজ করতেন কৃষক ফ্রন্টের হয়ে। ১৯৪১ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। এমনকী রাজনীতির জন্য বিভিন্ন সময় কারাবরণও করতে হয় তাঁকে। এছাড়া খেলাধূলা ও শিকারেও পারদর্শী ছিলেন লোকগানের এই শিল্পী। একসময় নিয়মিত ফুটবল খোলার পাশাপাশি সুযোগ পেলে নাকি শিকারও করতেন তিনি। তবে সবকিছুর ঊর্ধেব বাংলার লোকসঙ্গীতকে এক উচ্চমার্গে পৌঁছে দিয়েছিলেন নির্মলেন্দু চৌধুরী, যা কখনোই ভোলার নয়।